শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

এ বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১৪ অগাস্ট) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

৫ অগাস্ট সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত নবম শ্রেণির ছাত্র আলিফ আহমদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম এ অভিযোগ দায়ের করেন। সিয়াম গুলিতে আহত হওয়ার দুই দিন পর মারা যান।

মামলার অন্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ।

অভিযোগে অজ্ঞাতনামা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, পুলিশ ও র‌্যাবের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া, তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে মামলায়।

অভিযোগে বলা হয়, উল্লেখিত ব্যক্তিদের নির্দেশে কোটা সংস্কার ও পরে হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শান্তিপূর্ণ, নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে এই সহিংসতা চালানো হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা বিক্ষোভকারীদের আংশিক বা সম্পূর্ণরুপে নির্মূল করার চেষ্টা করেছিল। আর এভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।

অভিযোগে ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের অন্য নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে। যাদের উসকানিতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘দমন’ করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট ছিল এবং কারফিউ চলাকালে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বুধবার (১৫ অগাস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে করা হবে। … জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এসব ঘটনার তদন্ত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।

আয়নাঘরের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, “আয়নাঘরে যারা গুমের শিকার হয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আসার সুযোগ তাদের রয়েছে। কাজেই তারা গুমের মামলা করতে পারেন।”

গুম মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্তর্ভুক্ত আখ্যায়িত করে আসিফ নজরুল আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে যেকোনো ব্যক্তি মামলা করতে পারেন। রাষ্ট্রও পারে, ভুক্তভোগীরাও মামলা করতে পারেন। পরে রাষ্ট্রীয়ভাবেও আমরা উদ্যোগ নিতে পারি। এটা নিয়ে আমরা সিরিয়াসলি ভাবিনি। আমরা এখন জুলাই হত্যাকাণ্ডে মনোযোগ দিয়েছি।” তাঁর এই বক্তব্যের পরপরই ট্রাইবুনালে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। – বাসস, ইউএনবি, ভিওএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *