লোহিত সাগরে ইরানের যুদ্ধজাহাজ

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইরানের যুদ্ধজাহাজ আলবোর্জ সোমবার লোহিত সাগরে ঢুকেছে। এর আগে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হামাসের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বাহিনী লোহিত সাগরে জাহাজে আক্রমন বাড়িয়েছে। হুথির প্রতিরোধ বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল অভিমুখে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এখন হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর প্রথম মার্কিন পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালায় ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এরপর ওই পথে একাধিক জাহাজের ওপর হামলা চালায় তারা। এর মধ্যে একটি ভারতমুখী জাহাজও ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রও পাল্টা হামলার পথ বেছে নেয়। একাধিক দেশকে সঙ্গে নিয়ে পেন্টাগন একটি গোষ্ঠী তৈরি করার কাজ শুরু করেছে, যারা ওই অঞ্চলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের হাত থেকে পণ্যবাহী জাহাজ রক্ষায় তারা কাজ করবে।

পেন্টাগনের এ ঘোষণার পরও হুতি বিদ্রোহীরা হামলা অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র হুতি বিদ্রোহীদের তিনটি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার পর ইরান এখন লোহিত সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছে।

এদিকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার’ কারণে ইসরায়েলের মালিকানাধীন জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে মালয়েশিয়া। গাজা উপত্যকায় অব্যাহত আগ্রাসনের জেরে দেশটি ইসরায়েলি পতাকাবাহী আর কোনও জাহাজকে ডক না করতে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও বর্বরতা’ চালাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের জিআইএম শিপিং কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। একই সঙ্গে ইসরায়েল অভিমুখী কোনও জাহাজ মালয়েশিয়ার বন্দরগুলোতে মালামাল বোঝাই করতে পারবে না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেনিশ শিপিং জায়ান্ট মারস্ক এবং জার্মান শিপিং কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের জাহাজ পাঠানো স্থগিত ঘোষণা করেছে। পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্য রুটকে লক্ষ্য করে হুথির আক্রমণগুলি চালিত হচ্ছে। বিশেষ করে সুয়েজ খাল অঞ্চল। তেলবাহী জাহাজ সমূহ সময় ও ব্যয় বাঁচাতে সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে হয়।

ভূমধ্যসাগরীয় শিপিং কোম্পানি এবং সিএমএ সিজিএমকে লোহিত সাগরের সামুদ্রিক করিডোর এবং মিশরের সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করতে বাধ্য করেছে হুথিরা। এটি ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

এদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের শর্ত পূরণ হলেই কেবল জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেছেন, শত্রুরা গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসনে চরম বর্বরতা চালিয়েছে। তবে তাদের নেতা এবং যোদ্ধারা শক্তমনে শত্রু মোকাবেলা করছেন। শত্রুরা এখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এবং বিজয় সন্নিকটে বলে তিনি দাবি করেছেন।

প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক ও সাংবাদিক ডেভিড হার্স্ট নেতানিয়াহুর অপ্রাপ্য স্বপ্ন এবং ইসরায়েলের সম্ভাব্য পতন সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ভেঙে পড়তে পারে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নির্মূলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর “স্বপ্ন সত্যি হবে না” বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।

ওয়াথান মিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে হার্স্ট বলেছেন, ইসরায়েলিরা এখন একই ভুল করছে যা ফরাসিরা আলজেরিয়ায় করেছিল। প্রায় এক মিলিয়ন আলজেরিয়ানকে হত্যা করেছিল,ফরাসিরা বিশ্বাস করত যে তারা যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করবে। শেষ পর্যন্ত আলজেরিয়াকে স্বাধীনতা প্রদান করে তাদের চলে যেতে হয়েছিল। হার্স্ট বলেন, গাজাতেও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

সুত্র: আল জাজিরা, ডয়চে ভেলে, টাইমস অফ ইসরায়েল, হারেৎজ, ইয়েদিওথ আহরোনোথ, ওয়াথান ও অন্যান্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *