লেবাননে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে গুলি বিনিময়ের পর এক বন্দুকধারীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, একজন বন্দুকধারী দূতাবাস লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে লেবাননের সেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। সন্দেহভাজন এই সিরীয় নাগরিক ঘটনাস্থলে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে দূতাবাসের একজন নিরাপত্তারক্ষীও আহত হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ফুটেজে দেখা যায়, বন্দুকধারী আরবি ভাষায় “দায়েশ” লেখা একটি ভেস্ট পরা অবস্থায় মাটিতে শুয়ে রয়েছে। তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখা গেছে। কিছু মিডিয়ার দ্বারা রিপোর্ট করা হয়েছিল যে, সেখানে তিনজন হামলাকারী ছিল, অন্য আউটলেটগুলি বলেছিল চারজন। দূতাবাসের চারপাশে মোতায়েন সেনা ইউনিট দ্রুত তল্লাশি অভিযান চালায়। তবে আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
লেবাননের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, সন্দেহভাজন হামলাকারী সিরিয়ার নিকটবর্তী লেবাননের সীমান্তবর্তী শহর মাজদাল আনজারের বাসিন্দা। বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বন্দুকধারী ‘গাজার সমর্থনে’ দূতাবাসে হামলা চালায়। এদিকে আক্রমণকারীর ভাইকে সামরিক আদালতে সন্ত্রাস-সম্পর্কিত অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে এবং এর আগে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এক বিবৃতিতে বলেন, “ঘটনার পরিস্থিতি নির্ধারণ এবং জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারের জন্য তদন্ত চলছে।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিসা জনসন বর্তমানে লেবাননের বাইরে আছেন।
বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, দূতাবাসের প্রবেশপথের কাছে গোলাগুলির খবর পাওয়ার পর তাদের কর্মী ও স্থাপনা নিরাপদে আছে। সামাজিক মাধ্যমে দূতাবাস বলেছে, “এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং আমরা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি।” সামরিক বাহিনী মাজদাল আনজার এবং নিকটবর্তী সুয়েইরিতে অভিযান চালিয়েছে এবং সন্দেহভাজনের আত্মীয়দের আটক করেছে। সামরিক বাহিনী অন্য বন্দুকধারী বা চরমপন্থী সেলের সন্ধান পায়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সর্বশেষ জানা গেছে, হামলাকারী জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারে একজন সিরিয়ান শরণার্থী হিসাবে নিবন্ধিত আছেন, যিনি মাজদাল আনজারে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকেন। মাজদাল আনজারে একাধিক বাড়িতে অভিযান চালানো হয় এবং হামলাকারীর ভাইসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। হামলাকারীর বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
সিরিয়ার ধর্মগুরু মালেক আল-হাজাকে আবু বকর আল-সিদ্দিক মসজিদের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় আজহার আল-বেকা সদর দফতরে একটি গোয়েন্দা টহলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। দায়েশের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মাজদাল আনজারে ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনা এবং সশস্ত্র লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা লড়াইয়ে সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গুলি চালানোর দায়ে লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী এক লেবানিজ নাগরিককে আটক করে। তবে এ হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এর এক মাস পর শত শত বিক্ষোভকারী গাজায় ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হামাসের সমর্থনে দূতাবাসের নিকটে বিক্ষোভ করে। সুত্র: ভিওএ, এএফপি, এপি, রয়টার্স ও আরব নিউজ