লেখক ও সংগঠক সেলিম আউয়ালের জন্মদিন

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

সিলেটের সাহিত্য-সাস্কৃতিক অঙ্গনে শক্তিমান লেখক ও জনপ্রিয় সংগঠক সেলিম আউয়াল একজন আলোকিত মানুষ। নতুন লেখিয়েদের জন্য সম্ভবত এই সময়ে সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ অভিভাবক। তার অনুপ্রেরণায় কিংবা প্রচেষ্টায় যে সব তরুণ উজ্জীবিত হয়েছেন এবং এখন সফল লেখক, সেলিম আউয়ালের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ হবেন- এটাই স্বাভাবিক। অনেকে তা মানতে নারাজ। কোন কোন অগ্রজও তাকে নিয়ে ঈর্ষা কাতরতায় ভোগেন। বিকাশমান কমিউনিটিতে এটা এক ধরনের চলমান সমস্যা। মধ্যবিত্তের বিকাশে যতগুলো অন্তরায় আছে, এটি তার অন্যতম। ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রিদের মতো। অনেক কষ্ট করে যে উঠলো, সেই আবার অন্যকে বলে সিট নেই, ওঠা যাবে না।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাহিত্য সংসদে গেলে দেখা যাবে তার সাথে কোন না কোন উদীয়মান সাংবাদিক, নবীন কবি কিংবা তরুণ গল্পকারের একান্তে কথা হচ্ছে। কান পাতলে শোনা যাবে সেলিম আউয়াল বলছেন, ভালো কাজ করবে, ভালো ভালো বিষয় নিয়ে লিখবে এবং যেসব টপিকস নিয়ে লিখবে তার একটা সঙ্গতিপূর্ণ শিরোনাম থাকতে হবে।…

আজ থেকে ৩০/৩৫ বছর আগে সবুজ শ্যামল এই শহরে যখন কবিতার বই নিয়ে হাটতাম, তখন সাহিত্যাঙ্গনে গল্পকার সেলিম আউয়াল, ছড়াকার শারিক শামসুল কিবরিয়া ও প্রবাসী সালেহ আহমদ খান ছিলেন আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমরাই সিলেটে প্রথম বেসরকারি সংবাদ সংস্থা চালু করি। জালালাবাদ মিডিয়া নামে এই সংস্থা তখন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরিত হয়। মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের এই দুর্ঘটনায় আশপাশের এলাকার কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলেট থেকে ধোয়ার কুন্ডলী দেখে দেখে দ্রুততম সময়ে আমরা পৌছে যাই মৌলবী বাজারের মাগুরছড়া এলাকায়। জালালাবাদ মিডিয়া’র ক্যামেরায় ধারণ করা হয় ধাউ ধাউ আগুনের স্ফুলিঙ্গ।

পরের দিন বিবিসি সিএনএন সহ দেশি বিদেশি সাংবাদিকেরা জালালাবাদ মিডিয়ার তথ্য ও ছবি ব্যবহার করেছেন। অবশ্য তাদের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না। কারণ খবর পেয়ে পরের দিন সেখানে গিয়ে ছাই ভস্ম ছাড়া দেখার মত কিছু মিলেনি। আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায় বিশাল গ্যাস ক্ষেত্র, চা বাগান, বনাঞ্চল, রেলপথ, সড়কপথ সহ আশপাশের বাড়িঘর। আগুনের তাপে ঢাকা-সিলেট রেললাইন, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়ক, মাগুরছড়া আদিবাসি খাসিয়া পুঞ্জি, পান জুম এলাকা, ফুলবাড়ী চা-বাগান ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পিডিবির ৩৩ কেভি প্রধান বিদ্যুৎ লাইনও নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয় বেশি ক্ষতি হয় পরিবেশের।

সেলিম অউয়ালের সৃজনশীলতা ও মননের পরিচয় মিলে তার গল্প, প্রবন্ধ সহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায়। ১৯৭৭ সালে দৈনিক আজাদে প্রকাশিত হয় ৪টি ছড়া। ছড়া দিয়ে লেখালেখির জগতে পা রাখলেও কথাসাহিত্যেই মূলত তার সরব পদচারনা। শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে প্রথম গল্পগ্রন্থ আমি এবং সে। সাপ্তাহিক রোববার ঈদ সংখ্যা ২০০১ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘কুকুরের লাশ’ ঢাকার মৌলি প্রকাশনী বের করেছে ‘যুবতীর লাশ’ শিরোনামে। এই উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ কেমুসাস বইমেলা মার্চ ২০১২ উপলক্ষে বের করে সিলেটের পানশী। সিলেট বিষয়ক লেখাজোখা তার তৃতীয় গ্রন্থ। প্রকাশ করেছে লেখক ফান্ড ইউকে। চতূর্থ গ্রন্থ শেকড় সন্ধানী ধ্যানী গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল (জীবনী), পঞ্চম গ্রন্থ মরা গাঙে জল (ছোট গল্প), ষষ্ট গ্রন্থ সাংবাদিক সংগঠক মো. বশিরুদ্দিন (জীবনী), সপ্তম গ্রন্থ গানের পাখি হাসন রাজা এবং তার পুত্র দৌহিত্র প্রপৌত্র কথা (গবেষণা), অষ্টম গ্রন্থ আবাবিল হয়ে দিয়ে যাই চুম (ভ্রমণকাহিনী), নবম গ্রন্থ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে বেদারুদ্দিন স্যার কবিতা শুনেন (গল্প), দশম গ্রন্থ চ্যাঙের খালে ব্যাঙের ফাল (ভ্রমণকাহিনী), একাদশ গ্রন্থ বই নিয়ে বই (গ্রন্থ সমালোচনা)। এগুলো বেরিয়েছে কৈতর প্রকাশন সিলেট থেকে।

’আমি এবং সে’ গল্প গন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। এটি সেলিম অউয়াল ও তাবেদার রসুল বকুলের যৌথ গল্পগ্রন্থ। বইটিতে তার লেখা গল্প হলো- হোঁচট, প্রবাহ, দুশমন, নদী বহে নিরবধি, ঘাসফুল আমি গন্ধ পাচ্ছি।

হোঁচট গল্পের শুরুতে সেলিম অউয়াল লিখেন, চারপাশে পুরনো কাপড়ের একটা উৎকট গন্ধ। বুশ মার্কেটের অপরিসর গলির দু’পাশে পায়রার খোপের মতো ছোট ছোট টিনের দোকান। দোকানের সামনের দিকে বাঁশ লাগিয়ে কাপড় ঝুলানো হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে গায়ে লাগছিলো। ভালো একটা পেন্ট খুঁজছিলাম, রং পোড়া জিন্সের পেন্ট। দামী মার্কেট থেকে কিনতে গেলে দাম পড়বে হাজার দেড়েক। আর লাভই বা কি, বুশ মার্কেটের জিন্সই তো ধুয়ে মুছে প্লাজা মার্কেটে নেয়া হয়।

সেলিম আউয়ালের এই লেখায় মধ্যবিত্ত জীবনের একটি খন্ড চিত্র ফুটে উঠেছে। এটি পড়ার সাথে সাথে মাথায় ক্রিয়া করতে শুরু করবে। এর সঙ্গে আপনার পরিচিত জনের একটা মিল খুঁজে পাবেন। এই যে একটা কল্পনার জগত সৃষ্টি করেছেন সেলিম আউয়াল, সেটি খুবই শক্তিশালী। এধরনের গল্পের ডালপালা অনেক বিস্তৃত। অনেক সময় গল্প শেষ হবার আগে পাঠক নিজেই একটা উপসংহার তৈরি করে নেন। আর এখানেই লেখকের সার্থকতা।
নদী বহে নিরবধি গল্পে সেলিম আউয়াল বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের পারিবারিক জীবনের চিরায়ত কর্মকান্ড ও সংসার জীবনের মমত্ববোধ যথার্থ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

চেচাঁমেচি শোনা যাচ্ছে। কালো ষাঁড়টা ওকে জ্বালিয়ে মারে। সন্ধ্যাবেলা ষাড় নিয়ে ফিরছে, ষাড়টা বারবার বনের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। গোপাট থেকে খুব শান্তশিষ্ট ভাবে আসে, কিন্ত বাড়ির পাশে এলেই শুরু হয় ফাজলামি- তখন পাচন হাতে কামাল শুধু হৈ হৈ করে। ষাঁড়ের চেয়ে গাভিটা বেশ শান্ত, ওটা শামাল দিতে কামালকে খুব একট বেগ পেতে হয়না। চুক-চুক শব্দ তুলে একটু আদর করলেই মোমের মত গলে পড়ে। উঠানের কোণে রাখা চাড়িতে ভূষি চিবুচ্ছে। সারা উঠানটা খড় ও কচুরীপানায় আগোচালু। কামালরা দুপুরে কচুরিপানা কেটে ষাঢ় নৌকা বানিয়ে খেলেছে।…

সেলিম আউয়ালের লেখায় জীবনবোধ যেমন আছে, তেমনি শব্দের ব্যঞ্জনা ও কাব্যের দ্যোতনা রয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষ নিয়ে লিখেন। তার যুবতীর লাশ একটি অসারণ লেখা। জলোচ্ছ্বাসের শিকার উরির চরের মেয়ে ফুলবানু। ধুঁকে-ধুঁকে মরতে-মরতে কোনও রকমে বেঁচে ওঠে রিলিফ ক্যাম্পে। শেষে ধর্ষণের শিকার হয় আশ্রয়দাতা শিকদারের, পালাতে গিয়ে চৌকিদারের। তারপর কত শিকদার, চৌকিদার, রিকশাওয়ালা! পরে শহরের নামী পতিতায় পরিণত হয় ফুলবানু। মা হয় সে। কিন্তু বাঁচাতে পারে না বাচ্চাকে। দ্বিতীয় বাচ্চাটিও জন্ম নিয়ে মারা যায়। ফুলবানু তখন পাগলী। এর মধ্যে একদিন গাড়ি চাপা পড়ে লাশ হয়ে যায় সে। জীবনের এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু ফুলবানু নয়, এই সমাজেরও ছবি বুঝি!

সেলিম আউয়ালের সিলেট বিষয়ক লেখাজোখা শুধু মজাদর নয়, সচেতন মানুষ মাত্র মনে রাখার মতো। এটি সিলেটের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার, শাহি ঈদগাহ, খাজাঞ্চীবাড়ী, চাঁদনীঘাট, থ্যাকারে টিলা, দস্তিদার ও মজুমদার বাড়ি, এমসি কলেজ, চা-বাগান এবং সালুটিকর মিলে যে সিলেট তার কাহিনি ও দ্রষ্টব্যসমূহ। সেলিম আউয়াল শাহজালালের মাজারের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা চমৎকার। এটা সকলের জানা কাহিনী মাত্র নয়।শাহি ঈদগাহ’র ঐতিহাসিক পটভূমি, বৃটিশ বিরোধী লড়াই, পৃথিমপাশার আশুরা এসব বিষয় তিনি সরল ও সরস বর্ণনায় ফুটিয়ে তুলেছেন। সেকালের সিলেট পর্বে গাড়ি-ঘোড়া, চিতকাইত হোটেল, সিপারা-তসবিহ ব্যবসায়ী ও কাবুলিওয়ালার গল্প প্রাঞ্জল ভাষায় সাবলীলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

অন্ধকারে দাঁড়িয়ে বেদারুদ্দিন স্যার কবিতা শুনেন সেলিম আউয়ালের এই বইয়ের ভূমিকায় লেখক নিজেই বলেছেন ‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সেই সন্ধ্যায় আমরা যেমন ভয় পাইনি, তেমনি আমার এই এক ডজন ভূতের গল্প পড়তেও কেউ ভয় পাবেনা। বই বেরুবার আগে যারা একটা দুটো পড়েছে, তারা হালকা ভাবে জিজ্ঞেস করেছে, ঘটনাটি সত্যি নাকি?’

এটা শুধু হরর গল্প নয়, বরং গল্পগুলো যতটা না হরর তার চেয়েও বেশি বাস্তব তথ্যভিত্তিক। এখানে যেমন রয়েছে বিভিন্ন স্থানের ও প্রতিষ্ঠানের নিখুঁত বর্ণনা, তেমনি রয়েছে ঐতিহাসিক ঘটনার সঠিক তত্ব ও তথ্য।

জৈন্তার ডাকবাংলোয় একরাত, আম্বরখানা কলোনির জঙ্গল দিয়ে রাজার পালিয়ে যাওয়া, রমাকান্ত টাইপিস্ট, মাঝরাতে মাইজআইলে মালজোড়া, ব্ল্যাক ক্যাট আর কাঁচা লবঙ্গ রহস্য, ভূত দম্পতির উইলপত্র, সুনাইত্যা মাধবপুর ব্রিজের ছেলেপুলে, ড. কিসমতের হ্যালুসিনেশন, লক্ষীছড়ার লক্ষীছাড়া, ভূতের সাথে সারাপথ, রাজার মায়ের দীঘি ও অন্ধকারে দাঁড়িয়ে বেদারুদ্দিন স্যার কবিতা শুনেন- এই বারোটি গল্প নিয়ে প্রকাশিত বইটি পাঠকদের দৃষ্টি প্রবলভাবে কাড়তে সক্ষম।

আলোকিত মানুষ গড়ার ব্রত নিয়ে কাজ করেন সেলিম আউয়াল। সিলেটের তুরুণ সাহিত্যকদের উৎসাহিত করা, প্রবাসী লেখক-সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়, তাদের বই-পত্র প্রকাশনা অনুষ্ঠান সহ স্বদেশের সাথে প্রবাসিদের সেতু বন্ধন সৃষ্টির লক্ষে গড়ে তুলেছেন কৈতর সিলেট নামের একটি সংগঠন। তার এই কাজ দেশে ও প্রবাসে বেশ সমাদৃত। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে কৈতর প্রকাশন নামে একটি প্রকাশনী সংস্থাও গড়ে তুলেন তিনি। এই প্রকাশনী থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন লেখকের অনেকগুলো বই বের হয়েছে।

সেলিম আউয়াল সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। আশির দশকে প্রতি সপ্তাহে সাহিত্য আসর করেছি আমরা। বছরে একাধিক সাহিত্য সম্মেলনও করেছি। আমি সেক্রেটারি জেনারেল থাকাবস্থায়ও তিনি সেক্রেটারিয়েট মেম্বার ছিলেন। তখন বাংলাদেশের প্রধান কবি ও কথাসাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লেখক আল মাহমুদকে বহুবার নিয়ে এসেছি। জাতীয় অধ্যাপক তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (সাবেক ইসলামিক একাডেমী) প্রতিষ্ঠাতা সচিব অনন্য প্রতিভাধর কথাশিল্পী অধ্যাপক শাহেদ আলী, সচিব ও রাষ্ট্রদূত কবি মোফাজ্জল করিম সহ দেশ বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক এতে অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহন করেছেন।

শেকড় সন্ধানী গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল সংবর্ধনা পরিষদ ও ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান সংবর্ধনা পরিষদে অন্যতম সংগঠক ছিলেন সেলিম আউয়াল। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রি মাঠে ভাষা সৈনিকদেরকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। তিনি ছিলেন সম্বর্ধনা পরিষদের অন্যতম সদস্য।

দেশের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের জন্য আমি ও সেলিম আউয়াল নব্বই দশকে অনেক কাজ করেছি। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এর কিছু অংশ বিক্রি করে দেয়া ও নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে শহরের সাহিত্যানুরাগী অগ্রসর মানুষকে উৎসাহিত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সদস্য সংগ্রহের জন্য কোন কোন দিন ৮/৯ ঘন্টা কেটেছে। তখন আজকের এই আলীশান ভবন ছিলনা।

১৯৯৬ সালের ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় সেলিম আউয়াল কার্যকরি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এই কমিটিতে দেওয়ান ফরিদ গাজী সভাপতি ও রাগিব হোসেন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি জুলাই ১৯৯৬ থেকে বিভিন্ন সময়ে সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক, আল ইসলাহ সম্পাদক এবং সর্বশেষ সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

সেলিম আউয়াল ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিশু কিশোর যুব কল্যাণ সংগঠণ সাইক্লোন গ্রুপ, এটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সংগঠণ। তিনি বাংলা একাডেমির সদস্য, সিলেট ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের জীবন সদস্য, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের জীবন সদস্য, অপরাধ সংশোধন ও পুর্নবাসন সংস্থা সিলেট’র জীবন সদস্য।

সেলিম আউয়াল বিভিন্ন সময় নানা পেশার সাথে সম্পৃক্ত হলেও সাংবাদিকতাই ছিল মুল পেশা। সেই কৈশোরে ১৯৭৭ সালে ক্লাস এইটের ছাত্র থাকাকালে সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা’র রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতার সূচনা। তারপর সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন হবিগঞ্জের সাপ্তাহিক দৃষ্টিপাত পত্রিকায়। দৈনিক জালালাবাদ-এ দীর্ঘদিন স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। সাপ্তাহিক সিলেটের সকাল-এ নির্বাহী সম্পাদক এবং দৈনিক সিলেটের ডাক-এ সাহিত্য সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক ও সর্বশেষে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফেব্রুয়ারি ২০০২ থেকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এর সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার হাত দিয়ে সূচনা হয়েছে অনলাইন দৈনিক সিলেট সিফডিয়া ডটকম ও সিলেট এক্সপ্রেস ডটকম।অনলাইন সিলেট-সুরমা টিভি’র যাত্রাও তার হাত দিয়ে।

স্থানীয় সরকার সাংবাদিক ফোরাম সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সেলিম আউয়াল সিলেট প্রেসক্লাবেরও সদস্য। সিলেট প্রেসক্লাব এবং মাস লাইন মিডিয়া সেন্টার এমএমসি তাকে ফেলোশিপ প্রদান করেছে। প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি), বাসস, মাস লাইন মিডিয়া সেন্টার সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানও করেন।

গল্পকার সেলিম আউয়ালকে তার চল্লিশ বছর পূর্তিতে ২০০৪ সালের ১৬ এপ্রিল সিলেটের লেখক সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে শহিদ সোলেমান হলে সংবর্ধনা ও সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। লেখক পরিবার সিলেট’র ব্যানারে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে লেখক-সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারী বেসরকারি ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক-ছাত্র ও সুধীজনের বিশাল সুহৃদ সমাবেশে পরিণত হয়। একইভাবে ২০১২ সালে নগরীর হোটেল হলিসাইডে তার ৫০ বছর পূর্তিতে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

সেলিম আউয়াল ১৯৬৪ সালের ১০ জানুয়ারি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের খুজগিপুর মোল্লাবাড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মরহুম মো. আবদুল ওয়াহিদ ও মাতা মিরযা সমর উন নিসা।

সিলেট শহরেই কেটেছে তার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলো। মদন মোহন কলেজ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন। কলেজে ছিল তার বিপুল ছাত্রপ্রিয়তা, নির্বাচিত হন কলেজ ছাত্র সংসদে স. সাহিত্য ও বিতর্ক সম্পাদক পদে। তারপর আইন পেশায় যোগ দেয়ার স্বপ্নিল ইচ্ছে থেকে সিলেট আইন কলেজে অধ্যয়ন শুরু করেন। কিন্তু সফল সমাপ্তি হয়নি।

চার ভাই দু’বোনের মধ্যে সেলিম আউয়াল সবার বড়। সহধর্মিনী আফিয়া সুলতানা। কন্যা নাদিরা নূসরাত মাসিয়াত এবং পূত্র জুন্নুরাইন কদর তাজিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *