লন্ডনে জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব লন্ডনের রিজেন্ট লেইক মিলনায়তনে। মঙ্গলবার (৩০ মে ২০২৩) দুপুরে অনুষ্ঠিত মাহফিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমান এবং গ্রেট বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ গ্রহন করেন।

জোহরের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করা হয়। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে জিয়াউর রহমানের অনবদ্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। তারেক রহমান সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ ঘোষনা করেন। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

মিলাদ ও মোনাজাত শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মূল বক্তব্য রাখেন। অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে তিনি বলেন, আমরা সমবেত হয়েছি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদত বার্ষিকী পালন করতে। এই দোওয়া মাহফিলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আজ পর্যন্ত যত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন-শহীদ হয়েছেন, সকলকে আল্লাহ যেন বেহেস্ত নসীব করেন।

দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, এখানে আপনারা যারা উপস্থিত হয়েছেন সকলেই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে আমাদের কোটি কোটি ভাই-বোনেরা রয়েছেন। আজকে বাংলাদেশের যেদিকে তাকাই না কেন, সেটি অর্থনীতি হোক বা বিচার ব্যবস্থা হোক, রাজনৈতিক ও গাণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা প্রত্যেকটি বিষয় আজ হুমকির সম্মুখীন।

দেশের সংকটময় পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, এ সমস্যাগুলো কোন একক রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর নয়, সামগ্রিকভাবে স্বৈরাচার যে কায়দায় দেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসেছে, দেশের কাঁধে যেভাবে চেপে বসেছে, এই সমস্যা সমগ্র জাতির। আজকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আমি আমার দলের নেতা-কর্মীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে, বিশেষ করে যে সকল মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন, যে সকল মানুষ, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা এবং মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করেন, সেই সকল মানুষকে আজকে আমি আহবান জানাবো, আসুন আমাদের সকলের দায়িত্ব দেশ এবং দেশের মানুষকে তথা সমগ্র জাতিকে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা, উদ্ধার করা।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সমাধানের একমাত্র উপায় হিসেবে তারেক রহমান বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবন্ধ হয়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেছি, অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সে পদক্ষেপ আমরা গ্রহন করি। গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আহবান করবো- আসুন, আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। আমরা যেন আগামীদিনের বাংলাদেশের মানুষের ভোটের এবং কথা বলার অর্থাৎ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারি। এই হোক আজকে আমাদের এই শাহাদাত বার্ষিকীর প্রতিজ্ঞা, শহীদ জিয়ার শাহাদাত বার্ষিকীর শপথ।

উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন।

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইপিআর’র বাঙালি পল্টনের মেজর ছিলেন। স্বাধীনতার পর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হন।

মুশতাক সরকারের শাসনের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের প্রধান সেনা প্রশাসক ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ২৯ মে তিনি এক সরকারি সফরে চট্টগ্রামে যান। ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গভীর রাতে একদল সেনাসদস্য তাকে হত্যার মাধ্যমে জাতির অগ্রযাত্রাকে নিস্তব্ধ করে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *