সাঈদ চৌধুরী
মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ) কর্তৃক ‘একটি আদর্শ ইসলামী পরিবার গড়ে তোলা’ সম্পর্কে ইসলামিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে লন্ডনের হান্সল জামিয়া মসজিদ প্রঙ্গনে। ২৬ মে রবিবার সংগঠনের লন্ডন ওয়েস্ট রিজিওন শাখার আয়োজনে অত্যন্ত প্রাণবন্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক পুরুষ ও শতাধিক মহিলা অংশ গ্রহন করেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট খ্যাতিমান আইনজীবী ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশিক্ষক আব্দুল্লাহিল মামুন আল-আজমী।
শাখার সভাপতি মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জগলুর রহমানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন ইউনিট সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন। লন্ডন ওয়েস্ট রিজিওন শাখার ৬টি ব্রাঞ্চের দায়িত্বলশীল-সহ বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সুধীজনের অংশ গ্রহনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জোহর পর্যন্ত অনুষ্ঠান ছিল বেশ উপভোগ্য।
কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ বলেছেন, আদর্শ ইসলামী পরিবার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের যথার্থ ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস, সঠিক সঙ্গী নির্বাচন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা এবং যত্নশীল সম্পর্ক, একে অপরের প্রতি কর্তব্য পালনে দায়িত্বশীল হওয়া, সময়মত নামাজ আদায়ের সংস্কৃতি, অবিরাম যিকির, শিক্ষার পরিবেশ-সহ মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণই আদর্শ পরিবারের উপাদান। সেই সাথে পরামর্শ সভা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নিয়মিত পারিবারিক বৈঠক, গ্রন্থাগার স্থাপন, বাড়িতে উত্তম আচার-ব্যবহার ও ভদ্রতা, ধার্মীয় জ্ঞানের চর্চা, প্রতিবেশীদের যত্ন নেওয়া, সকল বিষয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ের আবশ্যকতাও তুলে ধরেন তিনি।
আমাদের পরিবার কাঠামোর বিভিন্ন দিক বর্ণনা করে ব্যারিষ্টার হামিদ বলেন, একটি আদর্শ মুসলিম পরিবার একজন ধার্মিক পুরুষ এবং তার স্ত্রী নিয়ে গঠিত। তারপর স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানের পাশাপাশি দাদা-দাদিরাও বর্ধিত মুসলিম পরিবারের অংশ। আর এই পরিবারই ইসলামী সমাজের ভিত্তিস্তর। পরিবারের পরিবেশকে ত্যাগ, ভালোবাসা এবং আনুগত্যের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে হয়। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা নিসা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন- মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একটি মাত্র ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর পরস্পরের নিকট (হাক্ব) চেয়ে থাক এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি-বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।
ইসলাম কিভাবে পারিবারিক সম্পর্ককে সংগঠিত করে সে বিষয় বিশ্লেষণ করে হামিদ আজাদ বলেন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এবং পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্কের ওপর তা নির্ভর করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে ইসলামিক পরিবেশকে চিত্রিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আর নবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম।
একটি আদর্শ পরিবারের উপাদান সমূহ বর্ণনা করে প্রধান অতিথি সূরা আন-নাহলের ৮০ নাম্বার আয়াত উল্লেখ করেন, আর আল্লাহ তোমাদের ঘরগুলোকে তোমাদের জন্য আবাস করেছেন। এরপর তিনি পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য বর্ণনা করে পবিত্র কুরআন থেকে বলেন, দুনিয়াতে তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে তার পথ অনুসরণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
ইসলামিক কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহিল মামুন আল-আজমী আত্নিক ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবন ঘটানোর জন্য আদর্শ পরিবার গঠনের গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইউরোপে ইসলাম প্রচারের জন্য ন্যায় ও নৈতিকতার বিকাশ সাধন এবং সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পরামর্শ প্রদান করেন।