রাফার ঘটনা ভুলবেন না : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ : মাসুম খলিলী

এক. ২০২৪ সালের ২৬ মে’র রাফার ঘটনা কখনোই ভুলবেন না। এটি আপনার হার্ড ড্রাইভে স্থায়ীভাবে খোদাই করা যাক।

দুই. অতীত নিয়ে উদ্বেগকে বিদায় জানান। সবকিছুর পেছনে কারণ থাকে। আপনি যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন তা সর্বশক্তিমান কখনই নষ্ট করবেন না। আপনি এর আগে যা যা করেছেন তা আগামী কালের পরিবর্তনের জন্য অনুঘটক হতে পারে। মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান যদি আপনার পক্ষে থাকেন তখন কেউই আপনার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না!

তিন. আপনার ভুল স্বীকার করতে শিখুন। নম্রতাকে ধারণ করুন, আপনার অহংকারকে বিদায় জানান এবং জেনে রাখুন যে এর জন্য আপনাকে আরও সম্মান করা হবে। অনেকেই এটি বুঝতে ব্যর্থ হন। আগে আপনি স্বীকার করেছেন যে আপনি ভুল করেছেন, এখান থেকে শিখতে এবং নিজের বিকাশ ঘটাতে আপনার আরো সময় আছে। এটি ভালভাবে শিখা একটি পাঠ!

পুনশ্চঃ

এক. কিছু লোক আপনাকে বলবে যে তারা শুন্য থেকে শুরু করেছে এবং তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টার বাইরে আর কিছু ছাড়াই শীর্ষে পৌঁছেছে। তারা তাদের চ্যালেঞ্জগুলিকে অতিরঞ্জিত করে যাতে অন্যদের মনে হয় যে তারা একই কাজ করতে পারে না। এসব শুনে প্রতারিত হবেন না। মহান আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না।

দুই. সর্বশক্তিমান। আমাদেরকে পরিশুদ্ধ হৃদয় দান করুন; ক্ষোভ, বিদ্বেষ এবং সমস্ত খারাপ কিছু থেকে মুক্ত হৃদয়। আমাদের মধ্যে সহানুভূতি বাঁচিয়ে রাখুন। অন্যদের বিচার করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করুন কারণ আমরা তাদের অবস্থার মধ্য দিয়ে যাইনি। আপনার আদেশে আমাদের হৃদয়কে স্বাচ্ছন্দ্য এবং সন্তুষ্ট রাখুন। আমরা সর্বদা আপনার রহমত কামনা করি। আমীন।

তিন. যখন কেউ আপনার প্রতি খারাপ আচরণ করে বা খারাপ কিছু বলে তখন ব্যক্তিগতভাবে তা গ্রহণ করবেন না। তাদের খারাপ প্রতিক্রিয়াকে নিজের ভাবনায় গেড়ে বসতে দেবেন না। যেভাবেই হোক তাদের সাথে সুন্দর আচরণ বজায় রাখুন। আর আপনি যদি পথ ফিরে পেতে লড়াই করে থাকেন তবে লোকদের আপনার প্রচেষ্টাকে উপহাসের বিষয় বানাতে দেবেন না। এটি আপনার সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরে যাওয়ার রাস্তা। তিনি আপনাকে গাইড করবেন। ধৈর্য বজায় রাখুন।

চার. নিজের প্রতি সদয় হোন। আপনি সর্বশক্তিমানের সাহায্য নিয়ে এ পর্যন্ত এসেছেন এবং চ্যালেঞ্জপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর এই সময় পার হতে চূড়ান্তভাবে তাঁর সাহায্য পাবেন। অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে, সামনের কাজে মনোনিবেশ করুন। আপনার অন্তরকে ইতিবাচক এবং কল্যাণের পথে গাইড করুন। বিশ্বাস রাখুন যে আগামীকাল ভাল হবে!

পাঁচ. আপনার যতটুকু আছে তা সামান্যই হলেও তাতেই মনোনিবেশ করুন, এতে আপনি সুখি হবেন । আপনার জীবনে কী অনুপস্থিত এবং প্রতিবেশীদের কী আছে সেদিকে মনোনিবেশ করলে আপনি দুঃখ পাবেন। আপনার জীবনে ফোকাস কোথায় থাকে তার উপর নির্ভর করে সবকিছু। যদি এটি সর্বশক্তিমানের কৃপা হয় তবে আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন! তা না হলে দুর্ভাগ্য ভর করবে আপনার উপর!

ছয়. কারও ত্বকের রঙ নিয়ে আপনার যদি সমস্যা হয় তবে আপনার স্রষ্টার সাথে সমস্যা আছে আপনার। তিনি আমাদের বহু রঙে তৈরি করেছেন যাতে আমরা বৈচিত্র্যকে উপলব্ধি করতে পারি এবং সমন্বিত জীবনযাপন করতে পারি। কে আরও উচ্চতর তা আপনাকে বলতে দেবেন না অন্য কাউকে। লোকদের সাথে ভালো ও ন্যায়ানুগ আচরণ করুন। সর্বশক্তিমান সব দেখছেন।

সাত. ধৈর্য তখনই হয় যখন আপনার চিন্তা আপনাকে যারা আঘাত ও অপমানিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বলে আর তখন আপনি নিজের ক্রুদ্ধ কণ্ঠকে জয় করতে সক্ষম হন। জীবনে সুখ ও দুঃখ উভয়ই আসে। দুঃখের সময় ধৈর্য ধরতে শিখুন এবং খুশি হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তিনি আপনাকে পুরস্কৃত করবেন এবং আপনার মর্যাদা উন্নীত করবেন।

আট. যখন জিনিসগুলি খুব জটিল হয়ে যায় এবং আপনি বুঝতে পারেন না যে আপনার জীবনে কী ঘটছে, তখন হৃদয় বিশ্বাসে পূর্ণ রাখুন এবং এগিয়ে যান। সর্বশক্তিমান জানেন্ অবাধ্যদের কথায় কান দেবেন না। সময়ের সাথে সাথে, বিষয়গুলি আরও পরিষ্কার হবে।

দ্রষ্টব্য:

যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন আমি অপরাধীদের (চক্ষু) নীল হয়ে যাওয়া অবস্থায় সমবেত করব। ওরা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবে, ‘তোমরা পৃথিবীতে মাত্র দশদিন অবস্থান করেছিলে।’ ওরা কি বলবে তা আমি ভাল জানি। ওদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী উত্তম পথের অনুসারী বলবে, ‘তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে।’ ওরা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘আমার প্রতিপালক সে সবকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে উড়িয়ে দেবেন। অতঃপর তিনি ভূমিকে মসৃণ সমতল ভূমিতে পরিণত করবেন। যাতে তুমি উঁচু-নীচু দেখবে না।’ সেই দিন ওরা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, এই ব্যাপারে (তাদের) কোন বক্রতা থাকবে না। আর পরম দয়াময়ের নিকট সকল শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না। পরম দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন ও যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন, সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সে দিন কোন কাজে আসবে না। (সূরা ত্বহা: ১০২-১০৯)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *