রহমতের মাসে সর্বশক্তিমানকে সন্ধান করুন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ : মাসুম খলিলী

এক. মনে রাখবেন, রমজান এমন একটি মাস যেখানে অন্তর নরম হয়, এটি প্রতিদানের মাস এবং এটি এমন একটি মাস যেখানে নেক আমল বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এটি অনুশোচনা এবং অনুতাপের মাসও। রহমতের এই মাসে সর্বশক্তিমানকে সন্ধান করুন৷

দুই. মানুষ একে অপরের জন্য খুব কমই সময় পায়, কারণ জীবন অনেক বেশি ব্যস্ত ও চাপপূর্ণ। এটাই দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। অথচ কতবার সর্বশক্তিমান আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আমাদের কাছেই আছেন। কখনো ভাববেন না আপনি একা। আপনি একা নন। যে কোন কিছু এবং সবকিছুর জন্য তাঁর দিকে ফিরে যান।

পুনশ্চঃ

এক. এমনকি আপনার কাছের লোকেরাও খারাপ এবং বাজে কথা বলতে পারেন। আপনার দীর্ঘ পদক্ষেপে এটিকে ধারণ করে নিন। জীবনটা এমনই হয়। আপনার কাজ ধৈর্য ধরা এবং এসবের উপরে ওঠা। কখনই ভুলে যাবেন না যে সর্বশক্তিমান সবকিছু শোনেন এবং দেখেন। অবশ্যই তিনি সবকিছু ঠিক করবেন।

দুই. আপনার জীবনে জিনিসগুলো যেভাবে চলছে তাতে কি আপনি হতাশ বোধ করছেন? এটা দিয়ে আপনার বিশ্বাসের পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধকতার প্রতি নয়, ফলাফলের দিকে মনোনিবেশ করুন। এটি সহজ নয়, তবে মুমিনের জন্য আসল পরীক্ষাটি হয় তখন, যখন তাদের সামনে আপত্তিকর এবং খারাপ আচরণ করা হয়, আর তখন তিনি শান্ত থাকেন কি না।

তিন. আপনার প্রতি মানুষের নেতিবাচকতা অধিকাংশ সময়ে আপনার কারণে নয়। এটি সাধারণভাবে তাদের নিরাপত্তাহীনতার কুশ্রী দিকই প্রদর্শন করে। আপনার দীর্ঘ পদক্ষেপে এটিকে মানিয়ে নিন। আপনার রাগকে দূরে সরিয়ে রাখতে শিখুন আর এর পরিবর্তে তাদের জন্য প্রার্থনা করুন।

চার. আপনি এখনই যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন তা যদি আপনি না চান তাহলে এটি আপনাকে পরাস্ত করতে পারবে না। একটি ইতিবাচক মানসিকতা নিন। জীবনের চ্যালেঞ্জগুলির ওপরে উঠুন, এটি জেনে যে এসব টিকে থাকবে না। আপনি যতটা পারেন শিখুন। মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান আপনাকে অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। তিনি এটি চালিয়ে যাবেন। তাঁর উপর আস্থা রাখুন।

পাঁচ. একটি আসল ভুল করার জন্য নিজেকে এত কষ্ট দেবেন না। মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান ইতিমধ্যে আপনার যা ভুল হয়েছে তা থেকে শিখার জন্য এটি পরিকল্পনা করেছেন। পাঠটি প্রয়োজনীয় ছিল। এটি আপনার জন্য তাঁর পরিকল্পনার অংশ। এটিকে গ্রহণ করুন এবং আবার একই ভুল না করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।

ছয়. বিষয়গুলো যতই খারাপ হোক- তা মনে রাখবেন না, কোন কিছুই স্থায়ী হয় না। সুতরাং আপনি যদি হাল ছেড়ে দিতে চান, তখন তা আপনি দৃঢ়ভাবেই করুন, আপনি যখন সরে আসতে চান, তখন শান্তভাবে এর ইতি টেনে দিন।

সাত. সর্বশক্তিমান। যা সঠিক তা করার জন্য আমাকে প্রজ্ঞা দিন। আমি যখন নিজের বোকামিতে আটকে থাকি তখন আমাকে তা থেকে কীভাবে বেরোব তার উপায়টি দেখান। যখন আমি ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছি তখন সান্ত্বনা ও স্বস্তি দিন। যখন আমার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে, জখম হয়েছে এবং আহত হয়েছে, আমাকে নিরাময়ের পথ দেখান। আমি যখন বিভ্রান্ত ও বিহ্বল হই তখন আমাকে গাইড করুন! আমি আপনার উপরই ভরসা রাখি।

দ্রষ্টব্য:

আল্লাহ; তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত তাঁরই। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত আছেন। যা তিনি ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর আসন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। আর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহামহিম। (সূরা আল বাকারা:২৫৫)

আর আপনি নির্ভর করুন তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই এবং তার সপ্ৰশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, তিনি তার বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত। (সূরা আল ফুরকান: ৫৮)

তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সত্কর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন। (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)

যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *