যৌবন আসে ও চলে যায়, বার্ধক্য আমৃত্যু থাকে ।। আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

“জওয়ানি জাতি রাহি, আউর হামেঁ পাতা ভি না লাগা;
ইসি কো ঢুণ্ড রাহে হ্যায়, কমর ঝুঁকে হু’য়ে।”

(যখন আমার যৌবন ফুরিয়ে যাচ্ছিল, আমি কোনোকিছু টের পাইনি,
যখন আমার কোমর বেঁকে গেছে, তখন হারিয়ে যাওয়া যৌবন খুঁজছি।)

এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, ‘বার্ধক্য নিয়ে করণীয় কিছু নেই। এটি শামুকের মতো ধীর গতিতে শরীরে প্রবেশ করে, মাঝ বয়সে এসে গতি লাভ করে এবং তুমি কিছু জানার আগেই একজন বৃদ্ধে পরিণত হও।’

কারও চুল ত্রিশের পর পাকতে শুরু করে, কারও বা পঞ্চাশ বা ষাটে। অনেকে নিজেকে তরুণ দেখানোর জন্য চুল দাড়ি গোঁফে কলপ লাগিয়ে কিছুদিনের জন্য অন্যদের বোকা বানাতে পারলেও নিজেকে তো আর বোকা বানাতে পারে না।

বার্ধক্য সম্পর্কে আরও জানান দিতে থাকে শরীর। দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে, নড়বড়ে হয়ে যায়। তুলে ফেলা দাঁতের জায়গায় ডেন্টিস্ট নতুন দাঁত লাগিয়ে দিলে সেগুলো আসল দাঁতের চেয়ে বেশি সাদা দেখায়। অবশ্য এমনও আছে যারা ৮০ বছর বয়সেও ৩২টি আসল দাঁত নিয়ে কবরে যায়। চোখ কানের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। স্কুলেই অনেকে চশমা ধরে, অনেকে আমৃত্যু চশমা ছাড়া থাকে। মধ্য বয়সেই অনেকে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করে, অনেকের এসবের প্রয়োজন হয় না।

কবি নাজির আকবরাবাদী বলেছেন:
“হর চিজ সে হোতা হ্যায় বুরা বুড়হাপা,
আশিক কো তো আল্লাহ না দিখলায়ি বুড়হাপা।”

(যা কিছু ঘটে, তার মধ্যে সবচেয়ে মন্দ হলো বার্ধক্য,
আল্লাহ যেন কোনো প্রেমিককে বার্ধক্যের দুর্দশা না দেন।)

কিন্তু মানুষ কখনও যৌবন ফিরে পাওয়ার আশা পরিত্যাগ করে না। যৌবন ফিরে পেতে তারা যেসব চেষ্টা করে সে তালিকা দীর্ঘ। উল্লেখ না করাই উত্তম।

শেখ সা’দী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গুলিস্তান’ এ বার্ধক্য সম্পর্কে বলেছেন:
“যে বৃদ্ধ লাঠির সাহায্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে অক্ষম,
তার নিজের লাঠি কীভাবে দাঁড়াবে?”

যৌবন আসে ও চলে যায়। কিন্তু বার্ধক্য যখন আসে তা মৃত্যু পর্যন্ত রয়ে যায়।

মির্জা গালিব বার্ধক্যে পৌছে তার পানোচ্ছাসের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেছেন:
“ওহ বা’দ-এ শাবা’না কি সর মাস্তিয়াঁ কাহাঁ?
উঠায়া কে আব লাজ্জাত-ই-খাব-ই-শেহর গ্যয়ি।”

(পানোচ্ছাসের সেই দীর্ঘ রাতগুলো কোথায় গেল?
উঠো, অনেক দূরে ভোরের মধুর স্বপ্ন দেখো।)

তিনি আরো বলেছেন:
“মারা জমানে নে আসাদুল্লাহ খান তুমহে,
ওহ ভলভলে কাহাঁ, ওহ জওয়ানি কিধার গ্যয়ে?”

(আসাদুল্লাহ খান, সময় তো তোমাকে মেরে ফেলেছে,
চটুল সময় কোথায় গেল, কোথায় পালালো তোমার যৌবন।)

নারীর পক্ষে বার্ধক্য মেনে নেওয়া পুরুষের চেয়ে কঠিন। বয়সের সঙ্গে ত্বকের ভাঁজ আড়াল করতে তাদের যে প্রয়াস তা সম্ভবত দেহ থেকে শেষ নি:শ্বাস বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত থাকে।

সাহস করে কেউ কি বলতে পারে:
“বেগম, তেরে হুসন কে হুক্কে মে আঁচ নেহি,
এক হাম হি হ্যায় কে ফির ভি গুড়গুড়ায়ে জাতে হ্যায়।”

(বেগম, তোমার সৌন্দর্যের হুকায় তো আর আগুনের আঁচ নেই,
তবুও তোমার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হওয়ার জন্য কেবল আমিই আছি।)

* আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু উপদেষ্টা সম্পাদক- উইকলি বাংলাদেশ, নিউ ইয়র্ক। সাবেক সম্পাদক- মাসিক নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *