যেখানে রোগীদের রাস্তায় প্রাণসংহার ঘটে

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আ.স.ম আব্দুল্লাহ সাইস্তা মিয়া

সাঈদ চৌধুরী : সিলেট জেলার অন্তর্গত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইছাকলস ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখার যেন কেউ নেই। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার ও মেরামত না করায় এবং কয়েকটি স্থানে ব্রিজ না থাকায় সর্বত্র এক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা জেলা সদরে জরুরী চিকিৎসার জন্য কোন রোগী যানবাহনে করে নিয়ে যাওয়া কঠিন। রাস্তায়ই রোগীদের প্রাণসংহার ঘটে।

বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূত উন্নতি সাধন হলেও ইছাকলস ইউনিয়ন একেবারে অবহেলায় পড়ে আছে। জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াতেরও কোন ভাল রাস্তা নেই। পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন এমনকি এই ইউনিয়নের এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতে হলে বর্ষা ও শরৎ কালে নৌকা আর হেমন্ত শীত ও বসন্ত কালে হাটুজল কাদা ভেঙ্গে চলাচল করতে হয়।

এলাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আরো নাজুক হয়ে পড়েছে। স্কুল-মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী সহ সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট করে চলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসমূহ পাকা না থাকায় এবং কাঁচা রাস্তা দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার ও মেরামত না করায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাজার সমূহে মালামাল পরিবহনে দোকানিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত পরিবহন খরচের কারণে দফায় দফায় বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ফলে সাধারণ জনগণের বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা। উত্তরে ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া পর্বতমালা, দক্ষিণে সিলেট সদর উপজেলা, পশ্চিমে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা এবং পূর্বে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলা অবস্থিত।

৩টি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা যাত্রা শুরু করে। কালের পরিবর্তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিরফলে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ৩টি ইউনিয়নকে ভেঙ্গে ৬টি ইউনিয়নে রুপান্তরিত করা হয়। তারমধ্যে ৪নং হচ্ছে ইছাকলস ইউনিয়ন পরিষদ।

তেলিখাল ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত ছিল ইছাকলস। বৃহত্তর তেলিখালের ভৌগালিক সীমা রেখা ছিল অনেক বড়। ৩১টি গ্রাম ছিল অর্ন্তভুক্ত। বর্তমানে ইছাকলস ইউনিয়নেই জনসংখ্যা সাড়ে ছাব্বিশ হাজার। প্রায় ১৯টি গ্রাম নিয়ে এই ইউনিয়ন গঠিত হয়। পুটামারা পুর্ব, পুটামারা পশ্চিম, বিঞুপুর, ইছাকলস, নিজগাও পুর্ব, নিজগাও পশ্চিম, ফুটকুরাটিলা, চৈতনগর, টুকেরগাও, ভাদেশ্বর, পুরান পারকুল, লামা পারকুল, নতুন পারকুল, শিবপুর, দুর্গাপুর, চেঙ্গাপই, বাগজুর, কলাপাড়া, যুগিরগাও উল্লেখযোগ্য।

ইছাকলস ইউনিয়নের ভৌগলিক সীমারেখা হচ্ছে- পুর্ব ও উত্তরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়ন। দক্ষিনে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে ছাতক উপজেলা। মোট আয়তন ৪৭.৯১ বর্গ কিলোমিটার। ইউনিয়নে পাকা সড়ক মাত্র ৩ কিলোমিটার, এইচএসবি ২ কিলোমিটার এবং কাচা রাস্তা ৪২ কিলোমিটার।

সিলেট থেকে ইছাকলস ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হলে গাড়ী যোগে বাদাঘাট হয়ে সদর উপজেলার ১নং জালালাবাদ ইউনিয়নের দাবাদাকান্দি গ্রামে যেতে হয়। সেখান থেকে ইছাকলস ইউনিয়নের বাগজুর গ্রাম হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হেটে যেতে হয়। নির্মানাধীন বাগজুর ব্রীজের সংযোগ কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে এবং অপর অংশ পাকা করলে কিছুটা কষ্ট লাগব হবে।

বর্তমানে সিলেট শহর থেকে অনেকে জালালাবাদ ইউনিয়নের মানসিনগর (মুরার গাও) গ্রামে গিয়ে খেয়া নৌকায় ইছাকলস ইউনিয়নের পুটামারা গ্রামে পৌঁছেন। তারপর হেটে যেতে হয় ইউনিয়ন পরিষদে।

অন্যদিকে সিলেট থেকে গাড়ি যোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পুর্ব ইউনিয়নের থানা বাজারে গিয়ে সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ইছাকলস ইউনিয়নে যেতে হয়।

এছাড়া সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা সদরে গিয়ে ইঞ্জিন চালিত ছোট নৌকায় ইছাকলস ইউনিয়নের ইছাকলস গ্রামে পৌঁছতে হয়। অথবা ছাতক উপজেলার কালারুখা ইউনিয়নের কালারুখা বাজার থেকে খেয়া যোগে পার হয়ে ইছাকলস ইউনিয়নের পারকুল গ্রামে পৌঁছে হেটে যেতে হয়।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় সালিশ ব্যক্তিত্ব আবু সাইদ আব্দুল্লাহ মো: সাইস্তা মিয়া জানালেন, এলাকার অনেক কাঁচা রাস্তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েকটি স্থানে ব্রিজ না থাকায় এবং দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার ও মেরামত না করায় সাধারণ মানুষ সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।

জালালাবাদ, তেলিখাল ও ইছাকলস ইউনিয়নে ৬বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবী আ.স.ম আব্দুল্লাহ সাইস্তা মিয়া বললেন, জালালাবাদ ইউনিয়নের কালিরগাও রাস্তা হতে পুটামারা হয়ে বিঞুপুর, সেখান থেকে শিবপুর হয়ে টুকেরগাঁও পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন অপরিহার্য। এই রাস্তার নলডইল খালের ভাঙ্গায়, শিবপুর বাগালি খালের ভাঙ্গায় এবং পুকুরিয়া খালের ভাঙ্গায় ব্রিজ করা অপরিহারর্য।

পুটামারা হতে ইউনিয়ন অফিস এবং পারকুল বাজার রাস্তা নির্মাণ ও পুনর্নিমাণ এবং মইয়াখাল ভাঙ্গায় ব্রিজ করা প্রয়োজন। বাগজুর ব্রিজের পশ্চিম দিক থেকে শিবপুর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও পাকা করণ, বিশেষ করে বাগজুর বাজার থেকে চেঙ্গাপই গ্রামের রাস্তা এবং চেঙ্গাপই থেকে পুটামারা-টাইয়াপাগলা রাস্তা পাকা করা আবশ্যক। এই এলাকায় বাগজুর দারুল উলুম মাদ্রাসা, দূর্গাপুর প্রাইমারী স্কুল, শিবপুর প্রাইমারী স্কুল ও ইউনিয়ন অফিস অবস্থিত।

এসব রাস্তা জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা এবং ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *