যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিচার শুরু

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় ইরানও যুক্ত হয়েছে। এর আগে বলিভিয়াও এই মামলার সঙ্গে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়।

নেদারল্যান্ডসের হেগে গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার প্রথম দিনের শুনানি হয়েছে। আজ শুক্রবার জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা অভিযোগের জবাব দেবে ইসরায়েল।

হেগে ইসরায়েল সম্পর্কে এই ধরণের শুনানি কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি এবং অতীতে একই ধরণের মামলা আনা হয়নি। হেগের আন্তর্জাতিক আদালত, জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা, রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিরোধের শুনানি করে।

আদালতটি বিভিন্ন দেশের ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, জ্যামাইকা, ভারত, উগান্ডা, চীন, সোমালিয়া, রাশিয়া, লেবানন ও মরক্কোর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত।

শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেছেন, হামাসবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় গণহত্যাবিষয়ক কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে দায়ের করা মামলার শুনানির প্রথম দিনে তিনি এ কথা বলেছেন।

বিচারমন্ত্রী বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল তিন মাসের বেশি সময় ধরে বর্বর যুদ্ধ চালাচ্ছে এবং হামাসের ৭ অক্টোবরের অভিযানের জবাব দিতে গিয়ে ইসরাইল যে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, তা কোনোভাবেই ন্যায়সংগত হতে পারে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী আরো বলেছেন, গাজার যে সহিংসতা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়নি, তা মূলত শুরু হয়েছে ৭৫ বছর আগে। লামোলা বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনের জনগণ ইসরাইলের হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নের মধ্যে বসবাস করে আসছে। আন্তর্জাতিক আইনের গ্যাঁড়াকলে ফেলে এখনো গাজাকে অধিকৃত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানের জবাবে ইসরাইল যেভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক সব কনভেনশন লঙ্ঘন হয়েছে। গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পরই দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসিতে যে মামলা দায়ের করেছে তার প্রতি সমর্থন দিয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটি বলেছে, দখলদার ইসরাইলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বেসামরিক জনগণের ওপর যে ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ চালিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল কয়েকটি সরকারের পক্ষ থেকে নিঃশর্ত ও সীমাহীন সমর্থন পেয়েছে, যার কারণে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের নিরপরাধ জনগণের ওপর তারা পূর্ণ শক্তি নিয়ে আগ্রাসন চালিয়েছে। গত তিন মাস ধরে তারা এই অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে আসছে এবং নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে ইসরাইল সব আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারকদের ইসরায়েলকে অবিলম্বে আক্রমণ বন্ধ করার নির্দেশ দিতে বলে দেশটি। এ ছাড়া জরুরি ব্যবস্থা আরোপ করার কথাও বলা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, আকাশ ও স্থলপথে সংকীর্ণ উপকূলীয় ছিটমহল গাজায় আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী ২৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা আরো বলেছে, ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজার জনসংখ্যা ধ্বংস করে ফেলা।

ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম আনাস জানিয়েছে, ইসরায়েল তার সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হারুন বারাককে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের প্রতিনিধি হিসেবে নাম দিয়েছে। বারাক, একজন শিশু হলোকাস্ট সারভাইভার, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি। কিন্তু ইসরায়েলে নেতিবাচকভাবে দেখা হয় কারণ তিনি তিন দশক ধরে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা দখলের মাস্টারমাইন্ড।

সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, পার্স টুডে ও আনাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *