মৌসুমী ভৌ‌মিক ও মোস্তাক আহমাদ দীন ফ‌কি‌রি নিয়ে দুজ‌নের অ‌ভিন্ন কর্ম

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

আহমদ ম‌য়েজ

১৯৯৭ সাল। লণ্ডন নগর। হঠাৎ রোদঝলমল দিন। সামার মাত্র উঁকি দি‌চ্ছে। মাইল‌্যাণ্ড রো‌ডের পা‌শে আজ‌কের পি‌সি ওয়ার্ল্ড-এর জায়গা‌টি ছি‌লো ছোট্ট এক বনজভূ‌মি। এর পাশ দি‌য়ে হে‌ঁটে যা‌চ্ছিলাম। মনটা কেমন উদাস ক‌রে গে‌য়ে ওঠলাম— ‘নগরবাসী‌রে আ‌মি নগ‌রে নগ‌রে ঘু‌রিলাম’

ভাব‌ছিলাম মরমী ম‌জির চরণগু‌লো ‌কি আমার জন‌্য লি‌খে‌ছি‌লেন? তারপর ক‌তো রোদবৃ‌ষ্টি মাথায় নি‌য়ে এ নগর দেখা হ‌লো। কিন্তু এই সাধক‌কে ভুল‌তে পারলাম না। তার জন‌্য নি‌জে কিছু কর‌তেও পারলাম না। শুধু তার চরণগু‌লো বু‌কের ভেতর ‘ভেদবাতুনী’ হ‌য়ে আনমনা ক‌রে রাখ‌লো।

আমার দ্বারা কিছুই হ‌বে না, সেটা বুঝ‌তে পে‌রে‌ছিলাম। কিন্তু কিছু মানুষ র‌য়ে‌ছেন যারা আমার এই সুপ্ত চিন্তা‌কে উস‌কে দি‌তেন। তা‌দের ম‌ধ্যে অন‌্যতম দুজন মনুষ র‌য়েছেন যা‌দের প্রতি এক ধর‌ণের ভরসা তৈ‌রি হ‌য়ে‌ছে। একজন হ‌লেন গ‌বেষক ও গুণী শিল্পী মৌসুমী ভৌ‌মিক। অন‌্যজন এ সম‌য়ের ধীমান ক‌বি মোস্তাক আহমাদ দীন।

মৌসুমী ভৌ‌মিক কেবল গান ক‌রেন না তি‌নি কথাও ব‌লেন, লে‌খেন এবং চারণ ক‌বি‌দের ম‌তো পৃ‌থিবী চ‌ষে বেড়ান। এমন সব মানু‌ষের স‌ঙ্গে তি‌নি কথা ব‌লেন, সঙ্গ খু‌ঁজেন যা‌দের ভাষার নাম ‘ভাব’। ‘ভা‌বের মুর‌তি’ নি‌য়ে তি‌নি আধুনিক মানুষ। গ্লামার জগৎ তা‌কে স্পর্শ ক‌রে না। শাহ ম‌জিরউ‌দ্দি‌নের গান বহুঘরানায় তি‌নি গে‌য়ে‌ছেন। ব‌্যাখ‌্যা ক‌রে‌ছেন। বিশ্ব‌চিন্তার স‌ঙ্গে এ গা‌নের সাং‌কে‌তিক মেলবন্ধন দে‌খিয়ে‌ছেন। তার কাজ এখনও অব‌্যাহত র‌য়ে‌ছে।

অন‌্যদি‌কে, ক‌বি ও গ‌বেষক মোস্তাক আহমাদ দীন শাহ ম‌জিরউ‌দ্দি‌নের ভেদজহুর নি‌য়ে দীর্ঘ দিন ধ‌রে কাজ কর‌ছেন। ভেদজহুর হ‌লো ত‌থ্যের অলঙ্কার। এর ভেতর অ‌নেক শব্দ র‌য়ে‌ছে যা প্রায় লুপ্ত। শ‌ব্দের টীকা খুঁজ‌তে গি‌য়ে তি‌নি ঘর্মাক্ত। বি‌ভিন্ন অঞ্চ‌লের বয়স্ক মানু‌ষের স্মরণাপন্ন হ‌তে হ‌য়ে‌ছে। বা‌ক্যে বা‌ক্যে র‌য়ে‌ছে ফা‌র্সি, হিন্দি, উর্দু, আরবী, সংস্কৃত-এর মি‌শেল। বাংলার স‌ঙ্গে মি‌শে শব্দগু‌লো পে‌য়ে‌ছে অন‌্যরূপ।

মোস্তাক আহমাদ দীন প‌রিপূর্ণ এক‌টি ভূ‌মিকায় এর ব‌্যাখ‌্যা বি‌শ্লেষণ তু‌লে এ‌নে‌ছেন। ভাবের বিষয়‌টি আ‌পে‌ক্ষিক। ফ‌কি‌রি চিন্তায় এ ভা‌বের বন্ধন নির্মান ক‌রে‌ছে বস্তু‌কে স‌ঙ্গে নি‌য়ে। ভাবের তরঙ্গ বুঝ‌তে হ‌লে বস্তু অ‌নেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা ছে‌ড়ে অন‌্যটি অচল। বস্তুকে য‌দি পাত্র ধ‌রি তাহ‌লে ভাব এর আধার। আবার উ‌ল্টোভা‌বেও এর ব‌্যাখ‌্যা র‌য়ে‌ছে।

মোস্তাক আহমাদ দীন ভেদ জহুর সক‌লের জন‌্য খু‌লে দি‌লেন যা প্রায় একশ বছর সুপ্ত ছি‌লো, মু‌রিদান ছাড়া সবার কা‌ছে গোপন ছি‌লো।
এর বহুল প্রচার কামনা ক‌রি। সম্পৃক্ত সক‌লের প্রতি কৃতজ্ঞ।

* আহমদ ম‌য়েজ কবি, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমার সাবেক সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *