মুসা আল হাফিজ কবি নাকি পুরোহিত? ।। মোহাম্মদ মহি উদ্দিন

শিল্প-সংস্কৃতি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

চার.

থমাস গ্রে (১৭১৬-১৭৭১) এর Elegy Written in a Country Churchyard ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম একটি এলিজি হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। এই কবিতায় কবি গরীব মানুষের দুর্দশা দেখে কষ্টে কাতর। গ্রাম্য গোরস্থানে ঘুমিয়ে আছেন অনেক কৃষক, যারা শ্রম আর ঘামে, লাঙল আর কাস্তে দিয়ে মৃত্তিকার বুক জুড়ে তুলেছিলেন ফসলের চিৎকার। অথচ ওদের সমাধিতে আজ স্মৃতির ফলক নেই, নেই খোদাই করা প্রশংসাসূচক কোনো লেখা; ওরা জীবদ্ধশায়ও পায়নি কিছু। পেলেও সেটা উচ্চাবিলাসীদের অবহেলা।

মানবসৃষ্ট ইহকালীন এই ব্যবধান কবির মন মেনে নিতে পারছে না। হাহাকারে যখন কবি মন ভারাক্রান্ত ঠিক তখন পরকালের অস্তিত্ব তাকে সমাধানের দিকে নিয়ে যায়। ফলে তিনি কবিতা শেষ করেছেন দ্যা এপিট্যাফ এর মাধ্যমে। যেখানে উচ্চারিত হয়েছে সৃষ্টিকর্তার পরকালীন ন্যায় বিচারের প্রতি অগাধ আস্থা।

মুসা আল হাফিজের কাব্যদৃষ্টি শ্রেণীশোষনের বাস্তবতা এড়িয়ে যায়নি। তিনি দেখেছেন পুজিবাদ ও বস্তুবাদের হিংস্র থাবা কীভাবে গিলে খাচ্ছে মানবতা। তাদের কাতর বেদনার আওয়াজ তার কবিতায় শোনা যায়। সেই গোঙানি তিনি নিজের মধ্যেও শুনতে পান, যা উচ্চারিত হচ্ছে মেরুতে মেরুতে।

তৃতীয় বিশ্ব কবিতায় তিনি এভাবেই বলেছেন-

“আমার শয্যার পাশে আমিন রাজু
এতই পাংশু কেন হাফিজ ভাই, এতই করুণ
মৃত্তিকার প্রজনন খুঁজে সৃজনবাযু
তাই তৃণের মিছিলে ঝড়ের মতো নামছে অরুণ

আমার অশ্রান্ত হাসিতে বাতাস থমকে গেল
শিউরে উঠলেন কেবিনের রড বিপন্ন হাসির তাললয়ে

হ্যাঁ, বস্তুতান্ত্রিকতার চাকুনৃত্যে এখন হাসপাতালে হাসির
ছিন্নভিন্ন অভিধান।

ডাকলাম- ‘বন্ধু!’ হার্দিক তরলতায় কাতর আওয়াজ,
আমরা এভাবেই হৃদয় ঝরিয়ে ডাকি বন্ধু বা মানুষকে

দেখো দেখো আমার খুলি
প্রতিদিন ওরা এতে হানাদার ক্যাসেট ঢুকাতে আসে
দেহের লাবণ্য লুটে শোষক কোম্পানি
সঞ্চিত শস্য গিলে কারূন মহাগ্রাসে
তাই মেরুতে মেরুতে বাজে আমার গোঙানি।”

কবি মুসা আল হাফিজের কবিতা সাম্যের কথা বলে, সুখ-দুখ ভাগাভাগির কথা বলে, সবাইকে নিয়ে একসাথে বাঁটতে উদ্বুদ্ধ করে। এর নমুনা তার কাব্যভূবনে বহুবিস্তৃত। যেমন-

“বলা হয় যোগ করো, আমি যোগ করি আত্মশক্তিকে।
বলা হয় বিয়োগ করো, আমি বিয়োগ করি পরাজয়কে।
বলা হয় গুণ করো, আমি গুণ করি ভালোবাসাকে।

বলা হয় ভাগ করো, আমি ভাগ করি দুঃখকে।
বলা হয় সমীকরণ দাও, আমি দিই নিজের মধ্যে সবাইকে।
বলা হয় মান প্রকাশ করো, আমি প্রকাশ করি সফলতাকে।” (গণিত)।

এমন হ্নদয়-উতসারিত মানবিক উপলব্দি পথ দেখায় আস্তিক-নান্তিক সবাইকে, জাগরিত করে হতাশায় নিমজ্জিত পথিককেও। তাদেরকে দেয় সংগ্রামের প্রেরণা। তারপরও পরাজিত, লাঞ্চিত, অবহেলিত, বিপন্ন জীবন নিয়ে যারা মারা গেলো, মুসা আল হাফিজ মাটির সাথে মিশে যাবার মধ্যেই তাদের সমাপ্তি দেখেন না। পরকালে তাদের মহাজীবনের উপসংহারে তার প্রগাঢ় আস্থা।

পাঁচ

রোমান্টিক যুগের পূর্বসুরী এবং ওল্ড টেস্টামেনের কবি বলে কাকে অভিহিত করা হয়? ধর্মীয় চেতনা লেপ্টে দিয়েছেন কবিতার থরে ভিতরে ঐ মরমী কবির নামটা যেন কী? এরকম প্রশ্ন করে দম নেয়ার আগেই নামটা চলে আসে- উইলিয়াম ব্লেক (১৭৫৭-১৮২৭)। Introduction (Songs of Innocence)- কবিতায় মেঘের ভেতর শিশুরূপী যিশুখ্রিস্টের কথা পাঠকরা জানতে পারে। The Lamb কবিতায় মেষের ছানা দিয়ে- আসমানি দাওয়াত, শান্তি ও মানবতার বার্তা নিয়ে জেরুসালেমে ভূমিষ্ট হওয়া ছেলেটির কথা তুলে ধরেন তিনি।

কবি মুসা আল-হাফিজ যে শিশুর কথা তার কবিতায় বলছেন সে শিশুটিও আল্লাহর নির্বাচিত নবী-

“নবজাত শিশুটিকে আশার সিন্দুকে জ্যোৎস্নার নদীতে ভাসাই,
জল আর মৃত্তিকার চুম্বনের শব্দ শুনে শুনে সিন্দুকটি
ভিড়বে এক নির্ধারিত কিনারায়,
অলৌকিক ওম থেকে শিশুকে ক‚লে তুলবে রমণীয় স্নেহ।

তারপর একদিন
দাজ্জালের রাজপ্রসাদে ফেরাউনের অহংকারে
শিশুটি কষে মারবে সত্যের চাটি।” (সত্যের চাটি)।

নবীরাই তো নেতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে চপেটাঘাত। একজন কবি তো নবীকেই খুজবেন, বুঝবেন।

উইলিয়াম ব্লেক এর মতই সেই খোজাখুজিতে কবি মুসা আল-হাফিজ পিছিয়ে নেই। তাছাড়া উইলিয়াম ব্লেক Introduction (Songs of Experience)- কবিতায় তুলে ধরেন- চারণ কবির রূপ ধরে যিশু খ্রিস্ট কীভাবে সৃষ্টিকুলকে আকুতি জানান সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য । The Voice of the Ancient Bird কবিতায় পাঠকরা জানল- সন্দেহ, অজ্ঞযুক্তির পাল্লায় পড়া অবিশ্বাসী মানুষগুলোর হোঁচট খাওয়ার কথা এবং শুনল- নবজাত সত্য তথা বিশ্বাসের পথে পা বাড়ানোর জন্যে উইলিয়াম ব্লেক এর ব্যাকুল আহবান।

মুসা আল-হাফিজের পেছনেও প্রলোভন। কিন্তু সমাগত সত্যের আহবান উপেক্ষা করা তার জন্যে কঠিন। ফলে তার কবিতার পাঠকরা শুনল আকাশের জানালা খুলে কারো আগমনীর ইতিবৃত্ত।

“পিছনে শহর
ইন্দ্রজাল হৃদ্যতার টানে ছুটছি পথিক…
তখনি আকাশের জানালা খুলে কে যেন
গতির তরঙ্গে মহাশূন্য কাঁপিয়ে তুলল

তার সত্তার সুরভিতে মরমি মহিমা
জীবনের নিসুপ্ত জলে জাগায় জলপ্রপাত।” (পরম প্রান্তরে)।

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ (১৭৭০-১৮৫০) ইংরেজির কাব্য জগতের রুমান্টিক যুগের অগ্রনায়ক। তাকে বলা হয় পেনথেয়িস্ট কবি। প্রকৃতির পরতে পরতে তিনি সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। বিমূর্ষ মন নিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে সতেজ মন নিয়ে ঘরে ফেরা যায়, এই নিরাময় ক্ষমতার অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। তাই তো অধিকাংশ কবিতায় প্রকৃতির আদলে সৃষ্টিকর্তাকে ভিন্নভিন্ন রূপে অঙ্কন করেছেন।

সৃষ্টিকর্তার এমন আবিষ্কারকে পেনথেয়িজম নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আসলে ওয়ার্ডসওয়ার্থের পেনথিইজম ধর্মীয় চেতনারই অন্য এক রূপ। মেঘ ভাঙলে বৃষ্টি তথা পানি হয়, পানি আকাশে জমাট হলেই মেঘ হয়। প্রক্রিয়া যাই হোক, কাহিনি এক। ঠিক একই রকম পেনথিইজম আর ধর্মীয় বিশ্বাসে মাখামাখি। প্রকৃতির মাঝে ওয়ার্ডসওয়ার্থ পথের দিশা পেয়েছেন। আপামর মানুষকে কবিতার মধ্য দিয়ে নীরব আকুতি জানিয়েছেন- প্রকৃতির মহিমায় মহিমান্বিত হওয়া জন্যে।

Tintern Abbey কবিতায় নিজের বোন ডরথী’কে পরামর্শ দিয়েছেন সতত প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে। এভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্মীয় বোধ কবিতায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য সাহিত্যবোদ্ধারা তাকে সুপ্রিম প্রিস্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কবি মুসা আল হাফিজের কবিতা সামগ্রিক অর্থে এই প্যানথেয়িজমকে ধারণ করে পুরোদস্তুর। এমনকি সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে খুজে ফেরার ব্যাকুলতা তার মাঝে এত স্থির ও বৈচিত্রময়, যা চমকপ্রদ। তিনি মিস্টিসিজমের মত জঠিল বিষয়কে এক-বসাতে আস্বাদনযোগ্য খাবার বানিয়ে পরিবেশন করেছেন। তবে পেনথিইজমের মূল্যবোধের নানা রসদকে সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন মুসা আল হাফিজ। তার কবিতা পরমে বিলীন হবার কথা বলেও monotheism বা অদ্বৈথবাদের সাথে ভিন্নমত জারি রাখে। আবার সৃষ্টি ও স্রষ্টার একত্বকে গ্রহণ না করেও dualism বা দ্বৈতবাদের সাথে তিনি বিরোধিতা জারি রাখেন। এমনকি তিনি দ্বৈতাদ্বৈতবাদকেও কবুল করেন না। তার ধারা ওহীবাহিত, যা সুফি ও কালামদার্শনিকদের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে এসেছে।

প্রকৃতিতে পরমকে খুজাখুজিতে পিছিয়ে নেই ম্যাড শেলী খ্যাত পিবি শেলীও (১৭৯২-১৮২২)। ছাত্র অবস্থাতেই “The Necessity of Atheism” লিখে অক্সফোর্ড থেকে বহিস্কার হওয়ার প্রথম দুঃসাহসিকতা তার দখলে। ব্যাক্তি জীবনে ধর্মে উদাসীন হয়েও কবিতার মাঠে যেন সত্য সন্ধানী এক অক্লান্ত কৃষক, আত্মার পরিশুদ্ধিই বুঝি জীবনের সুন্দর ঠিকানা। আর সেই শুদ্ধতার পাথেয় আসে স্বর্গ থেকেই। যে পাখির সুরে তিনি খুঁজে পেয়েছেন অনাবিল সুখ কিংবা চৈতন্যের শক্তি কিংবা উন্নততর মানুষ হওয়ার দিক নির্দেশনা, সেই পাখিই নাকি আসছে স্বর্গ কিংবা এর খুব কাছাকাছি জায়গা থেকে।

তাই তো To a Skylark কবিতায় বলছেন-

“Hail to thee, blithe Spirit!
Bird thou never wert,
That from Heaven, or near it,
Pourest thy full heart
In profuse strains of unpremeditated art.”

তিনি এও বলতে দ্বিদাবোধ করেন নি যে , এমন মিষ্টি সুর- জাগতিক প্রেম কিংবা মদ কোনো কিছুতেই পাননি। স্কাইলার্ক পাখি কী এমন সুললিত সুরের বিস্তারক, যার উৎস পৃথিবীর কেউ জানে না। এমন সুরের রসদ নিশ্চয় স্বর্গ থেকে নেওয়া। তাই তো অকুন্ঠ চিত্তে পাখির কাছে নির্মল আহ্বান; মানবজাতিকে দাও এই মধুরতার বার্তা-

“Teach us, Sprite or Bird,
What sweet thoughts are thine:
I have never heard
Praise of love or wine
That panted forth a flood of rapture so divine.”

সঙ্গত কারণেই কবি মূসা আল হাফিজের ধ্যান ও জ্ঞানের রাজ্যও মেটাফিজিক্স। হেরা পাহাড়ে বিচ্ছুরিত হয়েছিল যে ঐশীজ্ঞান, সেই জ্ঞানই তার পথচলার নিমিত্ত। মানবসৃষ্ট মতবাদসমূহের চর্চা এই মর্ত্যলোকে কম হলো না, ফলাফল সবারই জানা। তাই কবি মুসা আল হাফিজের কবিতা পথপ্রদর্শক হয়ে বিশ্ববাসীকে বলতে চাচ্ছে সত্য এদিকে নয়, ঐ দিকে গেছে!

ছয়.

ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্যতম কবি, যাকে বাদ দিলে ভিক্টেরিয়ান যুগ অপূর্ণ থেকে যাবে; যিনি সাহিত্য সমালোচনা, শিক্ষা, ধর্ম, নৃতত্তসহ লেখালেখির বিভিন্ন শাখায় সব্যসাচীর মত স্বাক্ষর রেখেছেন, তিনি হলেন- ম্যাথু আরনল্ড (১৮২২-১৮৮৮)। তাঁর কাব্য থেকে উদাহরণ টানলে Self Dependence, Morality, The Buried Life সহ অনেক কবিতাই আনা যাবে। তা না করে তার Dover Beach, Schoolar Gypsy এর কথাই বলা যাক।

Dover Beach কবিতায় তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মানবকুল দূরে সরে গেছে। যার ফলেই মানবকুল যন্ত্রণা ও আত্মঅবমাননার দিকে ধাবমান। মানবতা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়েছে। Schoolar Gypsy কবিতায় তিনি দেখিয়েছেন প্রজ্ঞাবান এক চরিত্রকে। কিন্তু এই জ্ঞানী লোকটি বর্তমান (ভিক্টরীয়) যুগের বিশ্বাস বিবর্জিত মানুষগুলোর সাথে বড়ই বেমানান। তাই সে দূরে চলে যাচ্ছে।মুসা আল হাফিজের কবিতায়ও প্রজ্ঞাবান মানুষেরা উপস্থিত হন। তাদের সাথে দীর্ঘ দার্শনিক সংলাপ হয় তার। শেষে তারা এই উত্তরাধুনিক কালের মানুষের পচন ও পতন দেখে এখান থেকে চলে যান। মুসা আল হাফিজ জানাচ্ছেন-

অত:পর আমাকে আশীর্বাদ করে আপনারা
স্বর্গলোকে চলে যাচ্ছিলেন আর
আমি এই গাড়ীর চাকায় পিষ্ট সময়ে
ধর্ষিতার রোদন ও কৃষকের খেতপোড়া গন্ধের ভেতর থেকে
চিৎকার করছি- আপনারা আসুন!
হে মহান মানুষেরা, এই মর্তলোকে আসুন!(ওমর খৈয়ামের জন্মদিনে)

ম্যাথু আরনল্ড তার সময়ের প্রবণতার সমালোচনা করেছিলেন । কারণ বিশ্বাস থেকে সরে এসে ওরা আত্মাহীন মানুষে পরিণত হয়েছে। জাগতিক লোভ লালসা তাদের আত্মিক উপকরণগুলো নষ্ট করেছে।

মুসা আল হাফিজও সমালোচনা করছেন তাঁর কালের। প্রজ্ঞাপুরুষ ওমর খৈয়ামের সাথে আলাপে তিনি জানান-

আগাছা থেকে ধান ফলাবেন বলে
প্রথমে উচ্ছেদ করা হয়েছে ধানের চারা
পানির বদলে প্রশ্রাব দিয়ে উর্বরতার পরীক্ষা করা হচ্ছে
আলোসন্ত্রাসের জন্য সূর্যকে নিষিদ্ধ করতে চাইছেন বাদুড়েরা
হৃদয়কে নিলামে তোলা হলে কালের ক্রেতারা
দাম হাকেনি বলে সে এখন সর্বাধিক আদনা আসবাব!
হৃদয়ের কথা শুনে ওমর খৈয়াম শিউরে উঠলেন।
যেন শুনেছেন ইশ্রাফিলের বাঁশি থেকে উচ্চারিত কোনো সুর!

জানতে চাইলেন, হৃদয় উপেক্ষিত হলে মানুষ কীভাবে আছে?
বললাম, যেভাবে থাকে সাপের মুখে ব্যাঙ!(ওমর খৈয়ামের জন্মদিনে)

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লড়াই তাই লড়তে হবে। সেই লড়াইয়ের পতাকা উত্তোলন করছেন মুসা আল হাফিজ। ঘোষণা করছেন-

“অতএব, পশ্চিম থেকে ধেয়ে আসা হৃদয়হীন
দর্শনের বিরুদ্ধে আমরা জ্বালিয়ে দিয়েছি বিশ্বাসের বিদ্যুৎশিখা
নির্জীব রাত্রি সাপের উদরের মতো মৃত্যুগহবরে ইতিহাসের
খুরের দাপটে কাঁপছে।

একদিকে ঘোষিত হচ্ছে আশা ও আশ্বাসের আজান,
অপরদিকে আকাশের স্তরে স্তরে হতাশার আলকাতরা
সেঁটে দিচ্ছে দুঃসময়ের ক্যানভাসার!
মানুষের মুখোশপরা জন্তুর মিছিলে প্রগতির নামে চলছে জরার শোরগোল।” (নতুন দিনের কাব্য)

এখানে পশ্চিমা জ্ঞানের হ্নদয়হীন দর্শন বলতে ভোগবাদের মৃত্যুফাদ বা চোরাবলির কথা বলতে ছেয়েছেন কবি। যা সভ্যতার সংকটের জন্যে দায়ী। সাথে অভয় দিচ্ছেন, বিশ্বাসের জ্যোতিকে প্রতিহত করতে পারবে না মিথ্যার দূরভিসন্ধি! কবি মুসা আল-হাফিজ এভাবে মানুষসৃষ্ট জ্ঞানের চোরাবালির বার্তবাহক না হয়ে আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বংশীবাদক হতে চেয়েছেন। (চলেব)

* মোহাম্মদ মহি উদ্দিন পিএইচডি গবেষক, এডুকেশনাল লিডারশীপ, পলিসি এন্ড টেকনলজি স্টাডিজ, আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র mohi.sust6049@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *