মুসলিম অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য অমুসলিম ব্যক্তিত্বদের এমসিএ অ্যাওয়ার্ড প্রধান

প্রবাসী বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত বৃটেনের মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ) কর্তৃক মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার এগারো অমুসলিম ব্যক্তিত্বকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই ২০২৫) পূর্ব লন্ডনের একটি হলে মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ অনুস্টিত হয়। বৃটেনের মাল্টিকালচারাল সোসাইটিতে এমসিএ’র এই প্রয়াস সর্ব মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতির উন্নয়ন ও সংরক্ষণ এবং কমিউনিটির বন্ধনকে সুদৃঢ়করণে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভিডিও: https://youtu.be/_MbM6ALxZ30?si=zpgIMPd5J79AfAkO

ব্রিটেনের বৃহৎ মুসলিম কমিউনিটি সংগঠন এমসিএ কর্তৃক গত বছর থেকে এই অ্যাওয়ার্ড চালু হয়েছে। দ্বিতীয় এই উদ্যোগে এমন সব ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো হয়েছে, যারা মুসলিম না হয়েও মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছিলেন সোচ্চার। মানবিক মূল্যবোধ এবং প্রতিটি মানুষের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় স্বাধীনতা উচ্চাসনে রেখে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের সম্প্রীতিপূর্ণ ও গতিশীল সমাজগঠনে অনুসরণীয় অবদান রেখেছেন।

জাঁকজমকপূর্ণ এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য, মেয়র, কাউন্সিলার, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক-সহ কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সহস্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এবছর কমিউনিটি কোহেশন, এনগেজমেন্ট, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, ন্যায়বিচার এবং আজীবন সম্মাননা বিষয়েমোট ১১ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

শিক্ষা ও উন্নয়নে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন অধ্যাপক ফ্রান্সিস থমাস ডেভিস। তিনি বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক পল রেনল্ডস।

কমিউনিটি কোহেসন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন শিক্ষাবিদ এবং নীতি বিশেষজ্ঞ ডঃ ক্রিস অ্যালেন। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মধ্যস্থতাকারী এবং ফরোয়ার্ড থিঙ্কিংয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অলিভার ম্যাকটার্নান।

কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন মার্ক এরিরা-গায়ার। তিনি স্বেচ্ছাসেবী, ধর্মীয় ও কমিউনিটি নেতা এবং প্রাক্তন কাউন্টি কাউন্সিলর। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ইসলাম চ্যানেলের আন্তর্জাতিক এবং কৌশলগত পরিচালক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কার্ল অ্যারিন্ডেল।

কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন লেস্টারের জনপ্রিয় সমাজসেবক অধ্যাপক ক্যাথি ম্যাসন। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন লাফবারার কমিউনিটি সংগঠক ক্যাথলিন জ্যাকসন।

ন্যায়বিচার ও সমতা অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন ক্রিস নিনহাম। তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারক এবং স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU) কাউন্সিলের পরিচালক ক্রিস ডয়েল।

প্রতিটি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীরা পেয়েছেন £২০০০ পাউন্ডের চেক ও ট্রফি। আর দ্বিতীয় স্থান অধিকারী পেয়েছেন £১০০০ পাউন্ডের চেক। এ অর্থ তারা তাদের পছন্দের চ্যারিটিকে দান করতে পারবেন।

অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত বিশিষ্টজনেরা বলেন, এমসিএ’র সম্মাননা প্রদান সম্প্রীতির বন্ধনকে সুসংহতকরণের উজ্জ্বল প্রয়াস। এটি কমিউনিটির বন্ধনকে সুদৃঢ় করছে।
এই পুরষ্কার আমাদের এবং আমরা যে কমিউনিটিতে বাস করি তাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। সম্প্রীতি আর সহমর্মিতার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সমাজকে এগিয়ে নিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে আশা করা যায়।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে এমসিএ’র সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন, আমরা চাই সম্প্রীতির জন্য সর্বাত্মক সচেষ্ট থাকবো এবং যারাই সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের বিকাশে কাজ করবেন আমরা তাদের পাশে থাকবো। আর এভাবেই সমাজ ও রাষ্ট্রে একটি প্রীতিময় সহাবস্থান তৈরী হবে।

মেহমানদেরকে এমন মহতি উদ্যোগে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ব্যারিস্টার হামিদ আজাদ বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকেই কৃতজ্ঞতাবোধ এবং সম্মানা প্রদানের শিক্ষা আমরা পেয়েছি। মহানবী বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ নয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এমসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল মতিন চৌধুরী। মুসলিম কিমউিনিটর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা এবং বৃটেনের মূলধারার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে মানিবক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় বলে তিনি জানান। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দেলওয়ার হোসাইন খান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *