বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের তত্ত্বাবধানে মুক্ত পরিবেশে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। একই সাথে আল্লামা সাঈদীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি। সোমবার (১৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রোবাবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে হার্টে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। প্রথমে তাকে গাজীপুরের একটি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হলেও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অসুস্থতার খবরে আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার অসুস্থতার খবরে তার পরিবার-পরিজন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ গোটা জাতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রায় ৮৪ বছর বয়সী আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হার্টে পাঁচটি রিং পরানো হয়েছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ-রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। এছাড়াও তিনি পায়ের গিড়ায় ব্যথাসহ বার্ধক্যজনিত নানান জটিল রোগে আক্রান্ত। অপরের সাহায্য ছাড়া তিনি একা হাঁটা-চলা ও উঠা-বসা কোনোটাই করতে পারেন না। এমতাবস্থায় মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দিয়ে নিজ পরিবারের তত্ত্বাবধানে মুক্ত পরিবেশে দেশে অথবা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেয়া উচিত।
জামায়াত নেতা বলেন, আল্লামা সাঈদীকে মানবিক কারণে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের তত্ত্বাবধানে তার পছন্দ অনুযায়ী মুক্ত পরিবেশে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে দেশবাসী এবং প্রবাসে বিশেষ করে মক্কা-মদিনায় অবস্থানরত ভাই-বোনদের প্রতি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে বিএসএমএমইউর কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামানের অধীনে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। রোববার (১৩ আগস্ট) অধ্যাপক মোস্তফা জামান নিজেই গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমার অধীনে কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সিতে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমানে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রথমিক ইসিজিতে উনার হার্ট অ্যাটাক পাওয়া গেছে। এর আগেও উনার হার্টে রিং পরানো হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল তার প্রাইমারি পিচাই লাগবে। অর্থাৎ সাথে সাথে রোগীকে এনজিওগ্রাম করে রিং বসানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপাতত লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এখনও সুস্পষ্ট মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তাকে আমরা কনজারবেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখছি।
হাসপাতালে থাকার বিষয়ে ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, তাকে কোথায় রাখব এ বিষয়ে উনার ছেলের সাথে কথা হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন আমার সাথে রয়েছে। বর্তমানে উনি জরুরি বিভাগে আমার অধীনে ভর্তি রয়েছেন।
এর আগে, কাশিমপুর কারাগার-১ এর জেলার তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিকালে হঠাৎ বুকে ব্যাথা উঠলে তাকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন সাঈদী। রোবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথা নিয়ে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
২০১০ সালের ২৯শে জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন জামায়াত ইসলামীর এই নায়েবে আমির।