মুকিম আহমদ রচিত ‘দ্য মিরাকল অন ব্রিক লেন’ গ্রন্থ পর্যালোচনা

প্রবাসী যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশি কোটিপতি মুকিম আহমদ রচিত ‘দ্য মিরাকল অন ব্রিক লেন’ (The Miracle on Brick Lane By Muquim Ahmed) শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সভা বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়। লেখকের সাথে ব্রিকলেন বাংলা টাউনে অনুষ্ঠিত প্রাক প্রকাশনা পর্যালোচনায় (Prepublication Review) অংশ গ্রহন করে মুগ্ধ হয়েছি। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক সুরমার সাবেক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাসন, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা এবং আমি (প্রেস ক্লাবের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও সময় সম্পাক সাঈদ চৌধুরী) দীর্ঘ সময় নিয়ে গ্রন্থের আদ্যোপান্ত দেখেছি।

২৬ চাপ্টারে সাজানো প্রায় ৩শত পৃষ্ঠার ‘দ্য মিরাকল অন ব্রিক লেন’ গ্রন্থের সূচি, প্রদর্শিত ছবি, বিষয়বস্তুর সিংহভাগ-সহ প্রতিটি বিভাগে প্রায় সকল উপাদান গভীরভাবে অবলোকন করেছি। নিজের জীবন থেকে গত অর্ধ শতাব্দীর প্রবাহমান কার্যাবলী লিপিবদ্ধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলে জানালেন মিলিয়নিয়ার মুকিম আহমদ। লেখক ইতিহাসের গভীরে ডুবতে পারেন বলেই মনে হয়েছে। তাই এটি পাঠকের কাছে এক ধরনের গবেষণা বা অনুসন্ধান হিসেবেই বিবেচিত হবে। যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে একটি সভ্যতা নিজেই তাঁর উত্থানের অতীত ব্যাখ্যা প্রদান করে।

প্রাক প্রকাশনা পর্যালোচনার শুরুতে লেখক তাঁর আত্মজীবনীমূলক বইয়ের বিষয় তথা জীবনের বিশেষ ঘটনা সমূহের ধারাবাহিকতা ও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। উল্লেখযোগ্য প্রতিটি ঘটনা বা বিষয়ের ক্ষেত্রে তাঁর ভাবনার বর্ণনা দিয়েছেন। যদিও ইতিহাসের নিরিখে কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ও সরল বর্ণনা দেওয়া বেশ জটিল বলেই তিনি মনে করেন।

ব্রিটিশ বাংলাদেশী সফল ব্যবসায়ী মুকিম আহমদ গত ৫০ বছর ধরে একটি ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ব্যবসা, সেবা ও প্রকাশনা জগতে সাফল্য ও কৃতিত্বের অধিকারী হিসেবে অতীত কার্যাবলীর সাহিত্যিক বিবরণীকে বেশ নান্দনিকতার সাথে উপস্থাপন করেছেন। এ দেশে একজন ইমিগ্রান্ট হিসেবে তাঁর এই সাফল্যকে বিস্ময়কর হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে মুকিম আহমদ বাংলা সাপ্তাহিক নতুন দিনের পরিচালক এবং পরে ইংরেজি সংবাদপত্র উইকলি এশিয়ান পোস্ট সম্পাদনার মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির প্রোফাইল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

মুকিম আহমদ ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতির সাথেও সক্রিয়ভাবে জড়িত। একজন ব্যবসায়ী হিসাবে তিনি রক্ষণশীল সরকারকে সমর্থন দিতে পেরে গর্বিত এবং কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি সাধারণ এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন মেজর, ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে, বরিস জনসন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষী সুনাকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনি দুই যুগের অধিক সময় কনজারভেটিভ দলের ফ্রন্ট বেঞ্চ ক্লাবের সদস্য ছিলেন। যেখানে কেবিনেট মিনিস্টার ও দলীয় শীর্ষ নেতাদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় হয়েছে। বর্তমানে লীডার্স ক্লাবের সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার ফোরামে যুক্ত হয়েছেন। ২০০৬ সালের ১৩ নভেম্বর কনজারভেটিভ দলের চেয়ারম্যান অব ট্রেজারার্স লর্ড মার্ল্যান্ড অফ ওডস্টক কর্তৃক প্রেরিত পত্রে (গ্রন্থের ২৯৭ পৃষ্ঠায় সংযুক্ত) ডেভিড ক্যামেরনের সাথে সাক্ষাৎ ও লীডার্স ক্লাবের সদস্য হবার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

মুকিম আহমদ কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশের (CFOB) সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই সংগঠনের লক্ষ্য কনজারভেটিভ পার্টি এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের (CFOB) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মুকিম আহমদ ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার জন্য ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান পেশাজীবী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী-সহ উচ্চ উপার্জনকারী প্রায় সবাই বিদেশে শিক্ষিত। তাই মুকিম আহমদের বাবা-মা চেয়েছিলেন তিনিও বিদেশে ডিগ্রী করেন। সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হবার প্রত্যাশায় তাকে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছেন। যদিও পড়ালেখা শেষে আর দেশে ফেরা হয়নি। সে বিষয়ে অরো অনেকের মত তিনিও এখানে অভিবাসী হবার যৌক্তিক বিশ্লেষণ দিয়েছেন।

কোয়ান্টাম সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান মুকিম আহমদ যুক্তরাজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রপার্টি পোর্টফোলিও পরিচালনা করেন। বহু মিলিয়ন পাউন্ডের আবাসিক এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তি নিয়ে কয়েক দশক আগে তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিগত পাঁচ যুগ ধরে প্রপার্টি, হসপিটালিটি, ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল, হোলসেল, ক্যাটারিং, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি একের পর এক ব্যবসায় সফলতা পেয়েছেন। এই কোটিপতি ব্যবসায়ীকে ব্রিক লেনের রাজা হিসাবে বিভিন্ন মিডিয়ায় লেখা হয়েছে। কিভাবে তিনি অল্প বয়সে মিলিয়নার হলেন – তা জানার আগ্রহ শুধু বাংলাদেশী নয়, ব্রিটেনের মূল ধারার মানুষও সেটা জানতে পুলকিত বোধ করেন।

মুকিম আহমদ একজন কর্মবীর, বিরতিহীন ও ক্লান্তহীন মানুষ। কর্মজীবনে তিনি দৃঢ়তা, ধৈর্য এবং বিশ্বাসকে মূলমন্ত্র হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। ‘সফল হওয়ার তীব্র সংকল্প’ তাকে মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে দিয়েছে। জায়গা করে নিয়েছেন সানডে টাইমসের শীর্ষ ধনীর তালিকায়। জাতীয় সংবাদ মাধ্যম তথা বিভিন্ন প্রেস রিপোর্টে তাঁর ‘সফল হওয়ার তীব্র সংকল্প’ ও ‘বয় ওয়ান্ডার’ ব্যক্তিত্ব এবং ব্যবসার প্রতি তাঁর ক্ষুধা উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৯০’র দশকে লন্ডন ইস্ট এন্ড এলাকায় মুকিম আহমদ তাঁর ব্যবসাকে একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে সফল হয়েছেন। তাঁর এবং ব্রিক লেনের উত্থান নথিভুক্ত হবার ইতিহাস প্রকাশিত হয়েছে মূল ধারার বিভিন্ন মিডিয়ায়। তিনি এস্টেট গেজেট এবং এশিয়ান ধনীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর কৃতিত্বে ব্রিটেনে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের প্রোফাইল উন্নীত হয়েছে।

ব্রিক লেনে ক্যাফে নাজ রেস্টুরেন্ট ছিল মুকিম আহমদের বেশ জনপ্রিয় ব্যবসা। সমসাময়িক ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনপ্রণালীর স্বাদযুক্ত খাবার সরবরাহ করে ক্যাফে নাজ ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। প্রথমে ইজারা (Leasehold Property) নিয়ে এই রেস্টুরেন্ট শুরু করলেও পরে তা ফ্রিহোল্ড (Freehold) করে ফেলেন। ইস্ট লন্ডনের মিডলসেক্স স্ট্রিটেও তাঁর আরেকটি রেস্টুরেন্ট ছিল। প্রথম রেস্তোরা খোলার পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি সারা দেশে একই থিম এবং নাম-সহ আরও নয়টি রেস্তোরাঁ খোলেন। এর মাধ্যমে এশীয় খাবার বিশেষ করে চিকেন টিক্কা মসলার মতো খাবারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে অনন্য অবদান রেখেছেন।

মুকিম আহমদ ভারত ও বাংলাদেশের পাঁচ তারকা হোটেল থেকে শীর্ষ শেফদের নিয়ে আসেন। তাঁর রেস্তোরাঁ কেবল সুস্বাদু খাবারই নয়, বাংলা ও ভারতীয় সংস্কৃতিও প্রদর্শন করে। শেফরা গ্রাহকদের সাথে রেসিপি শেয়ার করেছেন যখন রেস্তোরাঁটি ভারতীয় থিমযুক্ত বিনোদন-সহ বেশ কয়েকটি খাদ্য উত্সব আয়োজন করে। কারি শিল্পে খ্যাতিমান ব্যবসায়ী মুকিম আহমদ ক্যাফে নাজ পরিচালনার পাশাপাশি একটি বেকারি এবং একটি খাদ্য উত্পাদন ব্যবসাও করেছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানি করেন এবং সেগুলিকে সিনেমার বড় পর্দায় দেখান। তাঁর নাজ সিনেমা হল বাঙালির বিনোদনের প্রাণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও নান্দনিকতা দেখিয়েছেন মি. মুকিম আহমদ। বৈদ্যুতিক দ্রব্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দূর প্রাচ্যের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে মার্জিন কীভাবে উন্নত করা যায় তা দেখিয়েছেন। এর ফলে তিনি হংকংয়ের কারখানা থেকে পাইকারি, সোর্সিং পণ্যের দিকে অগ্রসর হন। এর মধ্যে রয়েছে ঘড়ি, রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র। তাঁর সিলেটো ক্যাশ এন্ড ক্যারি (Sylto Cash and Carry) দূর-দূরান্ত থেকে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেছে এবং TDK, JVC, Panasonic. Sony, Casio ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় জাপানি ব্র্যান্ডগুলির জাতীয় পরিবেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার জন্য মুকিম আহমদ তাঁর দৃঢ় সংকল্পকে প্রতিফলিত করে কীভাবে একটি সমৃদ্ধ ব্যবসাকে আরও ভাল করে তোলা যায় তা সব সময় খুঁজে বের করেছেন। তিনি এখনও কোয়ান্টাম সিকিউরিটিজের মাধ্যমে কয়েকটি রেস্তোরাঁর সাথে জড়িত। তবে এবার সরাসরি নয়, বাড়িওয়ালা (Landlord) হিসাবে।

মুকিম আহমদ রাজকীয় বাগানের একজন গর্বিত মালিক। নিজেও একজন রুচিশীল গার্ডেনার। ব্যবসা বা সেবা কর্ম ছাড়া কেবল সেখানেই তিনি ব্যক্তিগত সময় অতিবাহিত করেন।

নিজের সম্প্রদায়ের সাথে এবং তাদের জন্য কাজ করা একটি আবেগ হিসেবে মনে করেন মুকিম আহমদ। তিনি লন্ডনের ইস্ট এন্ডে বসবাসকারীদের জীবনে পরিবর্তন আনতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং বাঙালি সম্প্রদায়কে ব্রিটিশ সমাজের মূলধারায় একীভূত করতে সাহায্য করার বিষয়ে অনড়।

মুকিম আহমদ ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্সের (বিবিসিসি) চেয়ারম্যান থাকাকালে লন্ডনের বারবিকান সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘দ্য এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫’ এর সেমিনার এবং বাণিজ্য মেলার তত্ত্বাবধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। যেটি ছিল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত দেশীয় বাণিজ্য মেলা। এটি আন্তর্জাতিক ফ্রন্টে বাংলাদেশীদের প্রোফাইল বাড়াতে সাহায্য করেছে। বিবিসিসির উদ্যোগে এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের সহায়তায় মেলার চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। মেলাকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য তখন বাংলাদেশ সফর এবং বিলেতে ও বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচার তৎপরতা পরিচালনা করা হয়।

বিবিসিসির ডাইরেক্টর জেনারেল ও এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫ এর নির্বাহী প্রধান ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই জেপি’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সময় ও ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী, মেলান নেটওয়ার্কের এলান টুইডি ও বিবিসিসি স্কটিশ রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট এম এ রউফ। ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব এবং সিলেট প্রেসক্লাবে বিবিসিসির পক্ষ থেকে এক্সপো সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ আমি (সাঈদ চৌধুরী) উপস্থাপন করি। এছাড়া আমরা (প্রতিনিধি দল) এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫ কে সফল করতে এফবিসিসিআই-সহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ব্রিটিশ হাই কমিশন, বিনিয়োগ বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা)-সহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হই। বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে আমরা ব্রিটিশ ও ইউরোপিয়ান বায়ারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করি। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের বাজার সৃষ্টিতেও প্রানান্ত প্রয়াস চালিয়েছি।

বিবিসিসি’র প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমদের নেতৃত্বে সকলের সামগ্রীক প্রচেষ্টায় মেলায় বাংলাদেশের প্রথম সারির উল্লেখযোগ্য ৬০টি কোম্পানী এবং বিলেতের ১৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহন করে। এতে ক্রেতা ও দর্শনার্থিদের ব্যাপক সমাগম। তিন দিনে প্রায় দশ সহস্রাধিক মানুষ বানিজ্য মেলায় অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা লাভ করে। সার্বিক বিচারে বলা চলে, উন্নত বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাপাসিটি ও পটেনশিয়াল তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক্সপো ২০০৫ সফল হয়েছে। এক্সপোর কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক ছিল প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন। এগুলি গতানুগতিক সেমিনার ছিল না। বিষয়বস্তু ও অতিথি নির্বাচন এবং প্রেজেন্টারের উপস্থাপন সকল ক্ষেত্রেই সেমিনারের উপযোগিতা অর্জিত হয়েছে।

এক্সপোর কর্মকান্ড শুধুমাত্র সেমিনার আয়োজন বা ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা। এক্সপো উদ্বোধনের আগের রাত ছিল জমজমাট গালা ডিনার। ৭০০ অতিথির উপস্থিতিতে এ গালা ডিনার হয়ে উঠেছিল সত্যিকার অর্থেই গ্রান্ড-শো-ডাউন। বাণিজ্য মেলাকে বর্ণিল করে তুলতে আয়োজন করা হয়েছিল ফ্যাশন-শো। ফ্যাশন প্যারেডে ঝলমল আলোয় বিভিন্ন বয়সী মডেলরা তুলে ধরেছেন গার্মেন্টস প্র্রোডাক্ট সমূহ। এতে বাংলাদেশের প্র্রোডাক্টের মানে যোগ করেছিল আলাদা মাত্রা ও জৌলুস। মেলার শেষ দিন ছিল সেলিব্রিটি শেফ কম্পিটিশন। ষ্টার শেফ টমি মিয়ার সহায়তায় এই প্রতিযোগিতায় আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুন। এক্সপোতে অংশ গ্রহনকারী ব্যবসায়ীর বেশির ভাগই তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তারা যে উদ্দেশ্যে মেলায় এসেছিলেন তা অর্জিত হয়েছে।

মেলায় সবচেয়ে বড় অংকের ব্যবসা করেছে পাটয়ারী পটেটো ফ্ল্যাক্স। এছাড়া রিচি গ্রুপ, শাইন পুকুর, সাতরং, এবিএস, বেক্সিমকো, হামদর্দ, মৌসুমী ফ্যাশন, অপরুপা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য অংকের ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে। মেলা চলাকালীন তিন দিন বার্বিকান সেন্টার হয়ে ওঠেছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনকেন্দ্র। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নার্ভসেন্টার লন্ডনে একখন্ড বাংলাদেশ। বিবিসিসি ও বিলেত প্রবাসিদের জন্য এত বড় একটি অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমদ-সহ নির্বাহী কমিটি ও সাব কমিটির সকলেই প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। অনুষ্ঠান সফল করতে লন্ডন বাংলাদেশ হাই কমিশনও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। কর্মবীর হাই কমিশনার সাবেক সচিব কবি এ এইচ মোফাজ্জল করিম, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর শাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী, প্রেস মিনিস্টার ফজল এম কামাল প্রমুখের ভূমিকাও অবিস্মরণীয়।

এছাড়া বিবিসিসি’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুকিম আহমদ বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের সাথে মিলিত হয়ে বাংলাদেশের রপ্তানির সম্ভাবনাময় পণ্যসমূহ বিশেষ করে পোশাক শিল্প আরও বেশি হারে যুক্তরাজ্যে আমদানির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯৪ শতাংশই তৈরি পোশাকনির্ভর, যার পরিমাণ ৫.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্যস্থল হলো যুক্তরাজ্যের বাজার।

তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে মুকিম আহমদ তাঁর গ্রন্থে নানা ভাবে আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছেন। তরুণ প্রজন্মকে কী বলবেন? এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আপনি কোন বিষয়ে ভাল এবং কোন কাজটি আপনি উপভোগ করেন তা শনাক্ত করুন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং আপনার সেরাটি করুন, আপনার সেরা শট দিন। কখনো আপনি হাল ছেড়ে দেবেন না। যদি আপনি সফল না হন তবে চেষ্টা চালিয়ে যান। উচ্চ লক্ষ্য থাকা অপরিহার্য, কিন্তু খুব বেশি দেরি নয় যে আপনি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। মনোনিবেশ করুন, পরিশ্রমী হোন এবং একটি কাঠামোগত উপায়ে আপনার উদ্যোগের পরিকল্পনা করুন। উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অনুপ্রেরণা এবং সফল হওয়ার ইচ্ছা আপনাকে আপনার গন্তব্যে নিয়ে যাবে।

‘দ্য মিরাকল অন ব্রিক লেন’ গ্রন্থে ব্যক্তি জীবনের বিস্তৃত বিবরণে মুকিম আহমদ শিক্ষা, অর্থ, সমাজ ও সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে অলোকপাত করেছেন। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করে সাম্য, শৃঙ্খলা ও সুষম শাসন ব্যবস্থার কথাও এসেছে ‍চুম্বক অংশে। পাশাপাশি অনেক স্মৃতিকথাও বর্ণনা করেছেন তিনি। যেখানে সফল বাংলাদেশী ও সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী ইকবাল আহমদ ওবিই, নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান, শাহগির বখত ফারুক, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই, সেলিম হোসাইন এমবিই, বজলুর রশিদ এমবিই, সাংবাদিক মহিব চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাসন, সৈয়দ নাহাস পাশা-সহ অনেকেই স্থান পেয়েছেন।

মুকিম আহমদ মনে করেন, আপনি কীভাবে সফল হলেন তা কেবল দেখানো নয়, সাফল্য হল সক্রিয়ভাবে লোকেদের আপনার স্তরে উন্নীত করা, আরো অগ্রসর হবার জন্য প্রেরণা জাগানো। তিনি বলেন, আমাদের সম্প্রদায় বিলেতে অনেকটা নতুন, মাত্র ৫০/৬০ বছরে আমরা উজ্জ্বল উচ্চতা অর্জন করেছি। রাজনীতির ক্ষেত্রে আমাদের চারজন পার্লামেন্ট সদস্য আছেন। আমরা হাউস অফ লর্ডসে আছি। আরো আছেন মেয়র, কাউন্সিলর, বিচারক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী এবং সিটি হাই ফ্লাইয়ার, ব্রিটিশ ফরেন সার্ভিসে আছেন হাই কমিশনার/অ্যাম্বাসেডর। আমরা একটি তরুণ প্রাণবন্ত সম্প্রদায় এবং আগামী বছরগুলিতে আরও অনেক স্বাতন্ত্র্যসূচক উচ্চতা অর্জন নিশ্চিত করতে চাই।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *