একটি শিক্ষা সেমিনার ও একটি কমিউনিটি ইভেন্টে অংশগ্রহনের জন্য ইতালীর মিলান সফরে ছিলাম গত তিনদিন। প্রতি বছরই তিন চারটি ইউরোপীয় দেশে এধরনের প্রোগ্রামের আমন্ত্রন থাকে। প্রতিটি সফরেই নতুন কিছু শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা লাভ করি। সুযোগ পেলে এ শিক্ষা ও অনুপ্রেরণাগুলো শেয়ার করার চেষ্টা করি। তবে সবসময় পারিনা বলে দুঃখিত।
এবারের মিলান সফরের কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষা তুলে ধরার চেষ্টা করব ইন্শাআল্লাহ। অতীতে আরো অনেকবার মিলান সফর করেছি। কিন্তু এবারের সফরের উপলব্ধিটা নানাদিক থেকে একটু ভিন্ন।
১. এবারের ইভন্টগুলোতে বয়স্কদের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুন ও যুবকদের উপস্থিতি এবং মনোযোগ অংশগ্রহন আমাকে বেশ আশান্বিত করেছে।
৩. কম্যুনিটি ইভেন্টে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহন এবং দায়িত্বানুভূতিপূর্ণ প্রশ্ন করা প্রমান করে বাংলাদেশী মুসলিম কম্যুনিটি তাদের টেক্শই ভবিষ্যৎ বিনির্মানের ব্যপারে ক্রমশ যত্নশীল হয়ে উঠছে।
৩. এয়ারপোর্টগামী কোচ ষ্টেশনে এসে দেখলাম দুটি কোচ কোম্পানীর ষ্টেশন ম্যানেজার বাংলাদেশী এবং আমাদেরকে দেখা মাত্র সালাম দিয়ে কোন সংকোচ ও সংশয় ছাড়া এগিয়ে আসলেন এবং আমাদেরকে প্রয়োজনীয় পেশাগত সেবা প্রদান করলেন। আমার হোস্ট (host} একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের (second generation) ছেলে-মেয়েরা এখন মূলধারার চাকরী ও পেশায় অংশ নিতে শুরু করেছে। এটা ইতালীয়ান সমাজে বাংলাদেশী এবং মুসলিম কম্যুনিটির ইতিবাচক ভবিষ্যতের ইংগিত বহন করে।
৪. তরুন ও যুবকদের অনেকেই ছিল স্কুল এবং কলেজের ছাত্র। তাদের নানা প্রশ্নের ধরন দেখে মনে হল (ক) তারা স্কুল কলেজে নানা চ্যালেন্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষতঃ তাদের দ্বীনি পরিচয় সমুন্নত রাখা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে। অনেকে দ্বীন ছেড়ে ধর্ম বিমুখ হয়ে যাচ্ছে অথবা ধর্ম ত্যাগ করে প্রাক্তন মুসলিম হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে স্বস্থি বোধ করছে। ফলে যেসব ছেলে মেয়েরা দ্বীনের উপর টিকে আছে এবং দ্বীনি অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করছে তারা প্রতিনিয়ত প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছে। দ্বীনের উপর টিকে থাকা তাদের জন্য এক মহা পরীক্ষার বিষয হয়ে দাডিয়েছে। (খ) বহুমূখী চ্যালেন্জ সত্বেও তরুণরা ধর্মীয় রীতি-নীতি ও অনুশাসন মেনে চলতে খুবই আগ্রহী এবং যত্নশীল।
৫. একজন প্রফেশনাল ব্যক্তি অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন তিনি কিভাবে তাঁর কর্মস্থলে তাঁর অমুসলিম সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করেন এবং কিভাবে তাঁর উদার, দায়িত্বশীল, সততা এ দক্ষতাপূর্ণ ব্যবহার তাঁর সহকর্মীদের ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে। তিনি সবসময় তাঁর সাথে ইতালীয় ভাষায় অনুদিত কোরআন রাখেন এবং যখনই তাঁর অমুসলিম সহকর্মী ও বন্ধুরা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায় তখনই তাদের কোরআন উপহার দেন। তাঁর প্রদত্ত উপহারের কোরআন পড়ে ইতিমধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করেছেন। এতে বুঝা যায় মুসলমানরা যদি সত্যিকারের ইসলামী চরিত্র নিয়ে সমাজে বসবাস করে তাহলে তাদের চারিত্রিক প্রভাবের কারনেই ইউরোপে শত শত লোক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ হবে, ইনশাআল্লাহ।
৬. যে ভেন্যুতে শিক্ষা সেমিনার করলাম তা একটি বড় মসজিদ এবং ইসলামীক সেন্টার। এখানে শত শত মুসল্লির (পুরুষ ও মহিলাদের স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা সহ) নামাজ পড়ার ব্যবস্থার পাশা পাশি ফ্যামিলি ইভেন্ট, বাচ্চাদের খেলাধুলা, কোরআন-হাদীস শিক্ষা, উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা, অমুসলিমদের আকৃষ্ট করার জন্য রসুল (সঃ)এর জীবনী সহ ইসলামের গৌরবময় দিকগুলোর উপর প্রদর্শনী (Exhibition), প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সহ মুসলমানদের আত্নগঠন, পরিবারগঠন এবং সার্বিকভাবে সুন্দর সমাজগঠনের সকল ব্যবস্থা এ মসজিদে বিদ্যমান।
এ যেন সর্বস্তরের (শিশু, কিশোর ও বয়স্ক) মানুষের মিলন মেলা। যতক্ষন সেখানে ছিলাম মসজিদটাকে দেখলাম মনোমুগ্ধকর এক মিলনকেন্দ্র হিসেবে। বেশিরভাগ মুসল্লিই আসেন দূর দূরান্ত থেকে। একজন মুসল্লি বললেন দূর থেকে হলেও মানুষ সুন্দর পরিবেশের কারনে বেশ কয়েকমাইল ড্রাইভ (drive) করে এ মসজিদে আসেন মনের টানে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকে সপরিবারে এখানে এসে সারা দিন কাটান। একজন অভিবাবক বল্লেন শনিবার আসলেই তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় পডুয়া বড় মেয়ে সহ সব ছেলে মেয়েরা অস্থির হয়ে যায় এ মসজিদে আসার জন্য। বাড়ীর কাছে অন্য মসজিদ থাকলেও তারা দূরের এ মসজিদেই আসতে চায়।
আমি জিজ্ঞ্যেস করলাম, বাচ্চাদের এ মসজিদের প্রতি এত আকর্ষন কেন। তিনি বললেন, খেলাধুলার ব্যবস্থাসহ শিশু-কিশোর-তরুণ বান্ধব ইসলামী পরিবেশ। বিশেষতঃ শেখ তথা ঈমাম সাহেবের বাচ্চাদের প্রতি সযত্ন মনোযোগ ও শিক্ষা প্রদান। এ ছাড়া প্রদর্শনী (exhibition) সহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক ব্যবস্থা (arrangements) এর কারনে বাচ্চারা এখানে অঅসে। রাসুলুল্লাহর (সঃ) জীবনীসহ ইসলামের গৌরবোজ্জল দিকগুলো জেনে তারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে এবং আত্নগঠনের অনুপ্রেরনা লাভ করে। আল্হামদুলিল্লাহ, এ মসজিদ যেন এ অঞ্চলে রাসুল (সঃ) এর যুগের মসজিদে নববীর আদলে গড়া ইসলামী সভ্যতা ও শিক্ষার একটি প্রানকেন্দ্র।
৭. পেস-ডি-মিলানো (Pace-Di-Milano) কর্তৃক সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত বায়তুল মোকাররম মসজিদেও রয়েছে উপরে বর্ণিত মসজিদটির মত বহুমূখী কার্যক্রম। এ মসজিদের উদ্যোগেই কমিউনিটি ইভেন্টটা হয়। জায়গা স্বল্পতার কারনে প্রয়োজনীয় সব সু্যোগ-সুবিধার (facilities) ব্যবস্থা করতে না পারলেও বয়স্ক শিক্ষা ও বাচ্চাদের শিক্ষাসহ সম্ভব সকল সুবিধা রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ আপ্রান চেষ্টা করছেন। তারা সকলের দোয়া এবং সহযেগীতা কামনা করেছেন।
৮. আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মিলানে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাডছে। একই সাথে মসজিদের সংখ্যাও বাডছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কতটা মসজিদ উপরে বর্ণিত মসজিদ গুলোর মতো বা ব্রিটেনের ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের মত শিক্ষা ও সভ্যতার কেন্দ্র এবং দাওয়াহ সেন্টারের ভূমিকা পালন করতে পারছে?
৯. মিলানে মুসলমানদের চ্যালেন্জ ও সম্ভাবনার যে বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরলাম তা শুধু মিলানে নয়। ইউরোপের প্রত্যেকটি দেশেই আমাদের কম্যুনিটি একই ধরনের চ্যালেন্জের মোকাবেলা করছে এবং সম্ভাবনার হাতছানি দেখছে। সাম্প্রতিক মাস ও বছরগুলোতে আমার প্যারিস, স্ট্রেসবোর্গ, স্টকহোল্ম, বলেনিয়া, ভিসেন্সা, লিসবন, পর্তো সহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরগুলোতে সফরের সময় একই ধরনের চ্যালেন্জ ও সম্ভাবনার চিত্র দেখেছি।
আমি এ লেখাটি যেহেতু বাংলায় লিখছি, তাই ইউরোপে বসবাসরত বাংলাভাষাভাষি মুসলমান ভাই বোনদের বিবেচনার জন্য কয়েকটি দিক তুলে ধরতে চাই।
ক. ইউরোপের সকল দেশে আমাদের দ্বিতীয় এবং কোথাও কোথাও তৃতীয় প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে। বৃটেনে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। কেউ এমপি হচ্ছে, মন্ত্রী হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছে, আইনজীবী হচ্ছে, হাই কোর্টের বিচারপতি হচ্ছে, ডাক্তার হচ্ছে, ইন্জিনিয়ার হচ্ছে। বড বড কর্পোরেট প্রতিষ্টানের পরিচালক হচ্ছে, সিইও হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থার সিইও বা ডাইরেক্টর হচ্ছে, মিলিয়নিয়র ব্যবসায়ী হচ্ছে। এভাবে সমাজ পরিচালনার বিভন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তারা গ্রহন করছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও খুব শিগ্গিরই আমাদের ছেলে সন্তানেরা এভাবে সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নেবে, ইনশাআল্লাহ।
খ. আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য ইউরোপের যে দেশে তাদের জন্ম হয়েছে এবং যেখানে তারা বেডে উঠেছে সে দেশটিই তাদের জন্মভূমি। আর তৃতীয় প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের জন্য এ দেশটিই তাদের জন্মভূমি এবং মাতৃভূমি। এদেশের সমস্যা এবং চ্যালেন্জই তাদের চ্যালেন্জ এবং এদেশের সম্ভাবনাগুলোই তাদের জীবনের সম্ভাবনা।
আমরা যদি আমাদের সন্তানদের কল্যাণ চাই, বিদ্যমান সমস্যা ও চ্যালেন্জের মোকাবেলা করে তাদের সামনে বিদ্যমান সম্ভাবনাগুলোকে তাদের জীবনে বিকশিত করতে চাই তাহলে তাদেরকে দ্বীন ও ঈমানের ভিত্তিতে মর্যাদার সহিত আত্নপরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করার সাহসে বলীয়ান করতে হবে। এ লক্ষ্যে জীবনের সূচনা থেকেই তাদেরকে দ্বীনি জ্ঞানে সজ্জিত করতে হবে এবং স্বচ্ছ ঈমানের অধিকারী করতে হবে। তাদের প্রতিটি ভোরকে ঈমানের আলোতে ভরিয়ে দিতে হবে। বেলা শেষে আগত প্রতিটি সন্ধ্যাকে মুগ্ধ অভিজ্ঞতায় সুবাসিত করতে হবে।
স্রষ্টার প্রতি এতটুকু মজবুত ও ভালবাসায় পূর্ণ ঈমান তাদের মধ্যে সৃস্টি করতে হবে যেন যে কোন চ্যালেন্জের সম্মুখীন হওয়ার সাথে সাথে তারা আত্মবিশ্বাসের (confidence) সাথে তাদের প্রভুর দিকে রুজু হয় এবং মহান আল্লাহ যেন গভীর ভালবাসা দিয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসাকে অনিবার্য করে নেন।
এ প্রসংগে মহান আল্লাহর সুসংবাদটি আমাদের সদা খেয়াল রাখা দরকার। “যারা বলে- আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর (সে কথার উপর) সুদৃঢ় থাকে, ফেরেশতারা তাদের নিকট অবতীর্ণ হন আর বলেন, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না, আর জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার ওয়া‘দা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে।” (আল-কোরআন ৪১ঃ৩০).
গ. এ লক্ষ্য হাসিল করতে হলে, প্রতিটি বাবা মাকে তাদের ছেলে মেয়েদের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলোকে তাদের (অর্থাৎ ছেলে মেয়েদের) আয়নায় দেখতে হবে, তাদের ভাষায় বুঝতে হবে। তাদের প্রেক্ষাপটে সমস্যা ও চ্যালেন্জগুলোকে মোকাবেলায় কার্যকর সহযোগীতা করতে জানতে হবে। আমাদের নিজেদের পুরনো আয়নায় যদি আমরা তাদের চ্যালেন্জগুলোকে দেখার চেষ্টা করি আর আমাদের সনাতনী পদ্বতিতে তাদের চ্যালেন্জ মেকাবেলার চেষ্টা করি তাহলে নিজ হাতে তাদের ভবিষ্যৎ বিনাশ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবনা। এজন্য আমাদের সবাইকে পাশ্চাত্যে সন্তান লালন পালনের আর্টগুলো রপ্ত করতে হবে। প্রয়োজনে প্যারেন্টিং কোর্স করে এ ক্ষেত্রে নিজেদেরকে তৈরী করতে হবে।
ঘ. আমি কিছু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পডুয়া ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞ্যেস করলাম তাদের বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে কেউ দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে চলে গেছে কিনা। উত্তরে তারা বললো হ্যাঁ, বেশ কয়েকজন। কারন জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, বেশীর ভাগই যখন ক্লাসের বন্ধু বান্ধব অথবা শিক্ষকদের কাছ থেকে সমকালীন বিভন্ন বিষয়ে (LGBT, Trans-Gender, আল্লাহর অস্থিত্ব ইত্যাদি) যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তখন তারা তাদের বাবা মার কাছে যায় প্রশ্নের উত্তরের জন্য। অধিকাংশ বাবা মা তাদেরকে পাঠায় স্থানীয় মসজিদের ঈমামের কাছে সেসব জটিল প্রশ্নের উত্তরের জন্য। বেশীর ভাগ ঈমাম প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে অথবা উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে বকাবকি করেন “কেন তোমরা এসব বাজে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সম্পর্ক রাখ” ইত্যাদি। ফলে তারা মনে করে ইসলাম আধুনিক চ্যালেন্জের মোকাবেলায় অকার্যকর, তাই তারা হতাশ হয়ে দ্বীন বিসর্জন দেয়।
প্রসংগত উল্লেখ্য যে, এ সমস্যা আজ শুধু ইউরোপে নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশ এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাই আমাদের মসজিদগুলোর দিকে নজর দেওয়া একান্ত আবশ্যক। আমাদের মসজিদগুলোকে রাসুলুল্লাহর (সঃ) সময়ের মসজিদে নববীর আদলে সাজিয়ে প্রত্যেকটা মহল্লার মসজিদকে আমাদের পরিবারগুলোর জন্য শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সন্তানদের প্রেরণার উৎসস্থল হিসাবে সাজাতে হবে। প্রত্যেকটা মসজিদে এমন ঈমাম নিয়োগ দিতে হবে যিনি শুধু কোরআন, সুন্নাহ ও ফিকহের জ্ঞানেই পারদর্শী হবেননা, সাথে সাথে সমসাময়িক চ্যালেন্জ এবং তা মোকাবেলার পদ্ধতি সম্পর্কেও সাম্যক জ্ঞান ও দক্ষতা রাখবেন। শিশু-তরুণ ও যুবকদের ভাষা বুঝবেন এবং তাদের ভাষায় তাদের সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবেন।
উপসংহারে বিনীত আবেদনঃ আমাদের নিঃসংশয়ে মনে রাখা দরকার যে, ইউরোপের প্রত্যেকটা দেশ দার-আদ্দাওয়াহ। এসব দেশের প্রত্যেকটা বনি আদমের মহান আল্লাহর মনোনীত দ্বীন আল ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার অধিকার আছে। আর তাদের কাছে এ শ্বাশ্বত দাওয়াত পৌঁছানোর দায়িত্ব ইউরোপে বসবাসরত প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের। এজন্য প্রতিটি মুসলমানেরই ইসলামী চরিত্রে সজ্জিত হয়ে দায়ীর আমলী ভূমিকায় অবতীর্ন হওয়া দরকার।
এজন্য ইউরোপের প্রতিটি মসজিদ এবং ইসলামী সংগঠনকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ করছি। আমাদের প্প্রত্যেকটি মসজিদকে একদিকে দাওয়াহ সেন্টার হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। অপরদিকে মুসলমানদেরকে দায়ী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে হবে।
ইসলামী সংগঠনগুলো এ ক্ষেত্রে মসজিদ সমূহের সাথে বলিষ্ট পার্টনার হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে ইসলামী সংগঠন ও মসজিদ সমূহের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে একদিকে আমরা আমাদের সন্তানদের দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্যের পথ নিশ্চিত করতে পারি। অপরদিকে ইসলামের আলোতে দীপ্যমান একটি সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
“নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে”. (সুরা রা’দ ১১)
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন, আমীন।