মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস গ্রেপ্তার

সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা পরিকল্পনা ও উসকানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ।
 
তিনি বলেন, ‌‘মির্জা ফখরুল এবং মির্জা আব্বাস আমাদের হেফাজতে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুইদিন আগে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে আমাদের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। একজন মারাও গেছে। সেখানে জানমালের ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়েই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের গ্রেপ্তার করেছি।’

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে তার উত্তরার বাসা থেকে এবং ৩টা ২০ মিনিটে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তার শাহজাহানপুরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।

আজকেই আদালতে পাঠানো হবে

ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গতকাল পল্টন থানায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজকেই তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে।

কর্নেল অলির নিন্দা ও প্রতিবাদ

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্নেল অলি বলেন, বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের বিষবাষ্প ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। নিশিরাতের সরকার দুঃশাসন জারি রেখে বিএনপি এবং বিরোধীদলগুলোর নেতাকর্মীদের নিধনে লিপ্ত রয়েছে। তারা রাতের অন্ধকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা দুইজনই বয়োজ্যেষ্ঠ। দেশের এই সম্মানীত দুইজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী লাগামহীন খুন জখমে মেতে উঠেছে। স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের জাঁতাকলে দেশের মানুষ পিষ্ট। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এ ধরনের স্বৈরাচারী আচরণ রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। অবিলম্বে আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাই।

জামায়াতের নিন্দা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারের নিন্দা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার বিরোধীদলকে দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তারই ধারাবাহিকতায় গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সরকার সংবিধান স্বীকৃত জনগণের অধিকার বাস্তবায়নের পরিবর্তে হুমকি-ধমকি ও উস্কানিমূলক যে সব ভাষায় বক্তব্য রাখছেন, তা নিন্দনীয়। এগুলো কোনো রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। হাত ভেঙে দেয়ার বক্তব্য দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জামায়াত নেতা বলেন, দেশের জনগণ আজ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের এই ঐক্যকে কিছুতেই রুখে দেয়া যাবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও হয়রানি করে জনগণকে নেতৃত্ব শূন্য করার কোনো পদক্ষেপই সফল হবে না।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাষায় জানাতে চাই, গ্রেফতার, জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে এবং হুমকি-ধামকি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করে গ্রেফতারকৃত সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। বিএনপি ঘোষিত ১০ তারিখের সমাবেশ সফল করতে দিন। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে’।

বিবৃতিতে তিনি দেশবাসীকে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

নয়া পল্টন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে

বিএনপি কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলছে। নয়া পল্টন সহ পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। রাজধানীর কাকরাইলের নাইটএঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। পুরো এলাকায় যান ও সাধারণ মানুষ চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না।

এর আগে গত বুধবার বিকেলে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রায়ট কার দিয়ে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। এঘটনার পর থেকেই সেখানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি পেল বিএনপি। শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।

ডা. জাহিদ বলেন, আমরা কমলাপুর স্টেডিয়াম চেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে খেলা চলায় সম্ভব না। পুলিশের কাছে তারপর আমরা গোলাপবাগ মাঠের কথা বলেছিলাম, পুলিশ লিখিতভাবে অনুমতির জন্য আবেদন করতে বলেছিল, আমরা লিখিত আবেদন করেছি। তারা অনুমতি দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। আগামীকাল গোলাপবাগে আমাদের সমাবেশ হবে। পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *