‘মিডিয়া ল্যাংগুয়েজ অন ইসলাম এন্ড মুসলিম্স’ গ্রন্থ ব্রিটেনের মূলধারায় সাড়া জাগিয়েছে

প্রবন্ধ-কলাম যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

ব্রিটেনের লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষক, ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ব্রিটিশ-বাংলাদেশী লেখক ও গবেষক ডক্টর সালমান আল-আযামী সম্পাদিত Media Language on Islam and Muslims : Terminologies and Their Effects (ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কিত মিডিয়ার ভাষা : পরিভাষা এবং তার প্রভাব) শীর্ষক গ্রন্থটি মূলধারায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। ডক্টর সালমান-সহ ১০জন শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ শিক্ষাবিদদের প্রবন্ধ সম্বলিত এই মূল্যবান গ্রন্থটি ব্রিটেন-সহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জন্য ইসলাম সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা ব্যবহারে আরও সতর্ক হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ক্রিটিকাল ডিসকোর্স অ্যানালাইসিস, মিডিয়া ফ্রেমিং, কনটেন্ট অ্যানালাইসিস, প্র্যাগম্যাটিক্স ইত্যাদি রিসার্চ মেথড ব্যবহৃত এই গ্রন্থে নেতৃস্থানীয় ব্রিটিশ শিক্ষাবিদরা বিশেষ অবদান রেখেছেন। প্যালগ্রেভ ম্যাকমিলান প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এই গ্রন্থটি মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের ‘মিডিয়া স্টাইল গাইড’ এর সাথে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে এবং এই গ্রন্থে এই স্টাইল গাইডের সুপারিশগুলো সন্নিহিত করা হয়েছে।

যেসব পরিভাষা নিয়ে এই বইটি সংকলিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ‘ইসলামিজম’, ‘ইসলামিক এক্সট্রিমিজম’ ‘জিহাদ’, ‘শরীয়া’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘রেডিক্যাল বনাম মডারেট মুসলীম’ ইত্যাদি।

ব্রিটিশ মিডিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে প্রায়শই যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তাতে এসব পরিভাষা এমনভাবে ব্যবহার করা হয় যাতে, সাধারণ মানুষের কাছে মুসলমানরা সন্ত্রাসী, শত্রু বা ভয়ঙ্কর হিসেবে পরিগণিত হন। এই গ্রন্থের শিক্ষাবিদরা প্রমান করেছেন কিভাবে মিডিয়ার এমন আচরণ মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করছে এবং সাধারণ মুসলমানদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।

উল্লেখ্য যে, মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) মিডিয়া মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে মুসলিম বা ইসলাম বিষয়ে ১০ হাজারের বেশি নিবন্ধ এবং ভিডিও ক্লিপ পরীক্ষা করেছে। ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় কর্পাস ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক পল বেকার দ্বারা এই গবেষণার পদ্ধতি যাচাই করা হয়েছে।

গবেষণাটি প্রমান করে যে, মিডিয়াতে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর ৫৯% ভাগ মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব, ৩৭% “খুব পক্ষপাতদুষ্ট” ও এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মুসলমানদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সেটা সাধারণীকরণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে অতি-ডানপন্থীদের (far-right) প্ল্যাটফর্ম দেয়া হয়েছে ও ইসলাম এবং মুসলমানদের সম্পর্কে মিথ্যা স্টেরিওটাইপ (stereotypes) প্রচারের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিং (সিএফএমএম) এর পরিচালক রিজওয়ানা হামিদ বলেছেন, “ব্রিটিশ মিডিয়ায় ইসলামোফোবিয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। জনসাধারণের মধ্যে ৫৮% বিশ্বাস করে যে, ইসলামোফোবিয়ার জন্য মিডিয়া দায়ী। তাদের লক্ষ্য হল দায়িত্বশীল রিপোর্টিং করার জন্য মিডিয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাথে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। ইচ্ছাকৃত ভুল উপস্থাপনা এবং অসচেতন পক্ষপাতের বিষয়গুলিকে হাইলাইট করে একটি শক্তিশালী প্রমাণ ভিত্তিক পদ্ধতিই শুধুমাত্র স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে তিনি অভিহিত করেন।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক

ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=h9Ioe6SntRE

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *