মানবাধিকার বার্ষিকীতে কয়েক ডজন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা 

আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং কানাডার সমন্বিত পদক্ষেপের অধীনে শুক্রবার বিশ্বজুড়ে কয়েক ডজন মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের তালিকার মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জোরপূর্বক শ্রম আদায়  এবং বেলারুশ, হাইতি, ইরান ও সিরিয়ার ব্যক্তি স্বাধীনতা দমনে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অংশের জন্য ১৩টি দেশে ৩৭ জন ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে কানাডা যৌথ পদক্ষেপের অংশ হিসাবে ৭ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

টার্গেটের দীর্ঘ তালিকার অন্যতম হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানব পাচারকারীর ‘স্ক্যাম ফার্ম’ অপারেশনের সাথে জড়িত, আফগানিস্তানে নারি অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কর্মকর্তা এবং হাইতির জনসংখ্যা ধ্বংসকারী গ্যাংয়ের নেতারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসাবে স্বীকৃত ১০ ডিসেম্বরের ল্যান্ডমার্কের আগে এ পর্যন্ত ৪৬ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার জারি হয়েছে ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র দফতর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লাইবেরিয়া, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া ও উগান্ডার ৩৭ নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য মতে, ইরানের কুদস ফোর্স কমান্ডার কাসেম সোলেইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে এজেন্ট নিয়োগ দানের অভিযোগে দু’জন ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওপর শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় সোলেইমানি নিহত হলে তার হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল ইরান। কাসেম সোলেইমানি তেহরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের কারিগর ছিলেন।

আফগানিস্তানে যারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন তাদের মধ্যে সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রয়েছেন, তিনি ২০২১ সালে  স্কুল থেকে নারী ও মেয়েদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিয়েছিলেন।

জিনজিয়াংয়ে উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা পরিচালনায় জড়িত থাকার দায়ে  চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল জিনজিয়াংয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দু’জন চীনা কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাংকে থাকা অর্থ তুলতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ ভোগদখল করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সাথে কোনো ব্যবসা ও লেনদেন করতে পারবে না।

এ বিষয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং মার্কিন অর্থব্যবস্থাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের থেকে নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, যুক্তরাজ্য ও কানাডাকে সাথে নিয়ে সমন্বিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।

অটোয়া এবং লন্ডনের সাথে সমন্বিত পদক্ষেপের বিষয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক আদেশের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মিত্রদের সাথে সমন্বিতভাবে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বৃদ্ধির জন্য আমাদের পদক্ষেপগুলি শক্তিশালী এবং আরও টেকসই হয়।

যুক্তরাজ্য সরকার এবং মিত্ররা বিশ্বজুড়ে মানব পাচার এবং দমনমূলক শাসনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছে।

যুক্তরাজ্যে প্রথম দফায় রয়েছে কম্বোডিয়া, লাওস এবং মায়ানমারে লোক পাচারে জড়িত থাকার জন্য ৯ ব্যক্তি এবং ৫টি প্রতিষ্ঠান, যারা অনলাইন ‘স্ক্যাম ফার্ম’-এর জন্য কাজ করতে বাধ্য করে এবং বড় আকারের জালিয়াতি করতে সক্ষম হয়। ভুক্তভোগীদের ভাল বেতনে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কিন্তু নির্যাতন বা অন্যান্য নিষ্ঠুর এবং অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা হয়। জাতিসংঘ অনুমান করে যে শুধুমাত্র মিয়ানমারেই অন্তত ১২০,০০০ মানুষকে এই ধরনের পরিকল্পনার জন্য কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় লক্ষ্য হল বেলারুশ, হাইতি, ইরান এবং সিরিয়ার সরকার, বিচার বিভাগ এবং বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যুক্ত ব্যক্তি, যারা শুধুমাত্র সেইসব দেশে নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা দমনে জড়িত।

যুক্তরাজ্যের টার্গেটের তালিকায় রয়েছে বেলারুশিয়ান বিচার বিভাগের ১৭ বিচারক, প্রসিকিউটর এবং রাজনৈতিক কর্মী, স্বাধীন সাংবাদিক এবং মানবাধিকার রক্ষকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত মামলায় জড়িত একজন তদন্তকারী, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন আরোপ এবং প্রয়োগে জড়িত থাকার জন্য ইরানের বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং তেহরানের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে ৫ ব্যক্তি, আসাদ সরকার কর্তৃক সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতার সাথে জড়িত থাকার জন্য ৪ ব্যক্তি এবং ২০১৮ সালে লা স্যালাইন হামলায় জড়িত থাকার জন্য হাইতিতে ২ ব্যক্তি।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, আমরা বিশ্বের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে পদদলিত করে এমন অপরাধী ও দমনমূলক শাসনকে বরদাস্ত করব না।

তিনি আরো বলেন, আমি স্পষ্ট করতে চাই, মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭৫ বছর পরে যুক্তরাজ্য এবং আমাদের মিত্ররা নিরলসভাবে তাদের চিহ্নিত করবো. যারা মানুষকে তাদের স্বাধীনতা প্রদানে অস্বীকার করবে।  সূত্র : যুক্তরাজ্যের সরকারি বিবৃতি এবং এএফপি ও রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *