আলোচনার শীর্ষে জামায়াত, প্রত্যাহার হচ্ছে নিষিদ্ধের আদেশ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

‘জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে’ শিরোনামে রবিবার (২৫ আগস্ট ২০২৪) বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক মানবজমিন।  একই দিনে বিবিসি বাংলা লিখেছে – নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কী করছে জামায়াত?। এরপর দেশ-বিদেশের অনেকগুলো মিডিয়া এটি নিয়ে আলোকপাত করছে।

প্রতিবেদন সমূহে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জামায়াতের শক্তিশালী ভূমিকা এবং আন্দোলনে শহীদদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং আহতদের হাসপাতালে গিয়ে জামায়াতের সহায়তা প্রদানের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।

ভারত কর্তৃক ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী নদীর ওপর ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই খুলে দেওয়ার কারণে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে দূর্গত এলাকায় জামায়াতের ত্রাণ তৎপরতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপুলভাবে অভিনন্দিত হচ্ছে।

জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে

দেড় দশক পর প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে জামায়াত। দলটির কার্যালয় এরইমধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন না করে সামাজিক কার্যক্রমে মনোযোগ দিয়েছে তারা। ৫ই আগস্টের নাটকীয় পরিবর্তনের পর জামায়াত বৈঠক করেছে প্রেসিডেন্ট, প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে। যদিও কাগজে-কলমে দলটি এখনো নিষিদ্ধ। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে দুই-একদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। নিষিদ্ধের আদেশ এবং নিবন্ধনের বিষয়টি ফয়সালার জন্য জামায়াত এরইমধ্যে শিশির মনিরকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী মানবজমিনকে বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের নির্বাহী আদেশটি ন্যায্যতার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি। আমরা আশা করি খুব দ্রুতই ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানও আশা প্রকাশ করেন দ্রুত জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গত পহেলা আগস্ট জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে সময় জামায়াত তীব্র কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। পরে ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কী করছে জামায়াত?

বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় আছে। কিন্তু আরেকটি বড় দল জামায়াত পুরোপুরি নজর দিয়েছে তাদের ভাষায় জনসংযোগের উপর। রাজপথে বিক্ষোভ বা সমাবেশের মতো কোন কর্মসূচি আপাতত নেই জামায়াতের। দলটির কার্যক্রমে এখন তিন ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এক. ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতদের আর্থিক সহায়তা। প্রতিদিনই দলটির নেতারা কোন না কোন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ-খবর এবং আর্থিক সহায়তা করছেন। এছাড়া নিহতদের পরিবারের কাছে গিয়ে সমবেদনা জানাচ্ছেন। দুই. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির পরিদর্শন এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। তিন. এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়।

দলটির জন্য অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বৈঠক থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে এ ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম গত ১৬ বছরের প্রেক্ষাপটে নতুন অভিজ্ঞতা। যদিও কাগজে-কলমে দলটি এখনও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ। জামায়াত এখন চেষ্টা করছে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে? জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তারা বিচলিত নন। বরং নির্বাহী আদেশেই নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চান তারা। এর জন্য তারা আদালতে যাবেন না।

শফিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ছিলো অবৈধ সরকার। সুতরাং অবৈধ সরকারের কোন ডিক্লারেশন আমরা মানি না। তারপরও তারা তো নিষিদ্ধ করে গেছে। এখন সেই অবৈধ সরকার যেটা করে গেছে সেটা নির্বাহী আদেশের ব্যাপার। তাদের সকল ‘অবৈধ নির্বাহী আদেশ’ বাতিল করে দেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। আমাদেরকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং এটার প্রত্যাহারও নির্বাহী আদেশেই হতে হবে। আমরা এর জন্য আদালতে যাবো কেন? আদালতের মাধ্যমে তো আমাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।”

কিন্তু জামায়াত যে নির্বাহী আদেশ বাতিল চায় সেটা কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানানো হয়েছে? এমন প্রশ্নে জামায়াত আমীর জানান, সেটা সরকারকে বলা হয়েছে। কিন্তু জবাবে সরকারের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে এমন প্রশ্নে মি. রহমান বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। “আমরা এখন তাদের অ্যাকশন দেখতে চাচ্ছি। তারা যেটাই বলুন, আমরা অ্যাকশন (কাজ) দেখতে চাচ্ছি।”

জামায়াতের এই র্শীষ নেতা বলেন, সরকার পতন আন্দোলনে জামায়াত ‘পূর্ণশক্তি’ নিয়েই অংশ নিয়েছিলো। সুতরাং ‘ন্যায্যতার ভিত্তিতে’ জামায়াতের ‘পাওনা’ সরকার খুব তাড়াতাড়ি মিটিয়ে দেবে বলে আশা তার।

মামলার বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে যা বলছে জামায়াত

বিএনপির মতো জামায়াতও চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন প্রশাসন, বিচারবিভাগ এবং অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত এগিয়ে নেয়। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উপরও জোর দিচ্ছে জামায়াত। বলছে, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে পুনর্গঠনের কথা। এছাড়া আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় আইনি বিচারের উপরও গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।

“যারা ব্যক্তগিতভাবে অপরাধ করেছে তাদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তারা অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। এটা হচ্ছে ব্যক্তির বিচারের ক্ষেত্রে। আর দল হিসেবে পুরো দলটাই হত্যায় শরীক হয়ে গিয়েছিলো। তাদের মন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ালো? একটা দল পুরো দায়িত্ব নিয়ে নিলো সন্ত্রাস করার এবং সেটিই হলো। অনেক প্রাণ ঝরে গেলো। সন্ত্রাসীদেরকে যখন বাহিনী হিসেবে দলীয় ব্যানারে নামিয়ে দেয়া হল তখন বিশ্বের বহু দেশে এমন নজীর আছে যে, এমন গণহত্যা যারা করে… তাদের আর সেদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকে না।”

নাগরিক সমাজের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জামায়াতের আমীর

২৪ আগস্ট নাগরিক সমাজের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু ইস্যু হচ্ছে সমাজকে শোষণ করার অন্যতম হাতিয়ার। আমরা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলেই বাংলাদেশী। আমরা একই মায়ের সন্তান। তাই কোন ভাবেই সম্পৃতি নষ্ট করা চলবে না। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। কারো ওপর প্রতিশোধ নয়। জামায়াত প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তবে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর কোন ষড়যন্ত্রই সফল হতে দেওয়া যাবে না। মূলত ছাত্ররাই আগামীর বাংলাদেশ; তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই শিক্ষার্থীদের কোন ভাবেই বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

জ্ঞানচর্চায় জামায়াতের কর্মপদ্ধতির প্রশংসা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

২ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানে জামায়াতের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করলে হবে না, জেনে শুনে রাজনীতি করতে হবে। আমি রেফারেন্সলি বলতে চাই- জামায়াতে ইসলামীর কৌশল, তাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত বিজ্ঞান সম্মত। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের স্টাডি সেল আছে, তাদের যে ছাত্রশিবির আছে- তাদের প্রত্যেকটার সেল আছে। তাদের লেখা পড়া করতে হয়, বই পড়তে হয়, সেই বই পড়ে তাদের উত্তর দিতে হয়। সেটার জন্য তারা নিজেরা পড়ে, তারা পত্রিকা প্রকাশ করে। এগুলোর চর্চা যদি না থাকে- জ্ঞানের চর্চা ছাড়া জ্ঞান ছাড়া আপনি কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল

* জামায়তের সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী সম্পর্কে টিভি টকশো আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে দূর্নীতির কোন অভিযোগ নেই, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত। মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে কত বড় বড় ডেইলি পত্রিকা রয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কি বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্য দিতে পেরেছে, যে মতিউর রহমান নিজামী দূর্নীতি করেছেন?

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ

* টিভি টকশো আলোচনায়  সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ এক দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, জামায়াত একটা আদর্শিক দল, এটাকে নিষিদ্ধ করলেই নিষিদ্ধ হয়ে যাবে না! বাংলাদেশের একমাত্র দল জামায়াত, যারা নিজেরা স্বয়ংবর। একটা আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে হলে, তাঁর চেয়ে আরো উন্নত ধরনের আদর্শ সাবমিট করতে হয়। শুধু মুখে বুলি আউড়িয়ে, গলাবাজী করে কোন আদর্শকে মৃত্যু ঘটানো যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক

* জনপ্রিয় সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দীনের উপস্থাপনায় বেসরকারী টেলিভিশন ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির ‘আজকের বাংলাদেশ’ টকশোতে অংশগ্রহণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক জামায়াতের সততার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, জামায়াত-শিবির পরিচালিত দোকান বা প্রতিষ্ঠানে বেচা বিক্রি বেশী হয়, কারণ তারা কারো সাথে প্রতারণা করে না বা কারো সাথে মিথ্যা কথা বলে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.শাহীদুজ্জামান

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষক ও বিশিষ্ট টিভি টকশো আলোচক অধ্যাপক ড.শাহীদুজ্জামান বলেছেন, ‘এখনকার প্রজন্মে যারা জামায়াত করে, এরা মৌলিক জাতিসত্ত্বাকেই ধরে রেখেছে’।

জামায়াতকে নিয়ে রাষ্ট্রচিন্তক ড. হাসান মোহাম্মদের পিএইচডি

প্রখ্যাত রাজনীতি-বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক ড. হাসান মোহাম্মদ জামায়াতকে নিয়ে যে পিএইচডি করেছেন, তা নেটিজনদের মনে নাড়া দিয়েছে। পিএইচডি থিসিসের ওপর ভিত্তি করে ইতোমধ্যে  ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ : নেতৃত্ব, সংগঠন ও আদর্শ’ নামে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

এই গ্রন্থ প্রসঙ্গে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা কারণে ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ একটি বহুল আলোচিত সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জামায়াতকে নিয়ে লেখাজোখার পরিমাণও নেহাত কম নয়। তবে অনেক রচনা জামায়াতের প্রতি বিদ্বেষ অথবা ভক্তির প্রান্তিকতায় গড়িয়েছে। ড. হাসান মোহাম্মদ জামায়াত সম্পর্কে অ্যাকাডেমিক মূল্যায়নের চেষ্টা করেছেন। তাঁর থিসিসই ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নিয়ে প্রথম পিএইচডি গবেষণা।

এই গ্রন্থ আলোচনায় বিশিষ্ট গবেষক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন লিখেছেন,  জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আদর্শ, নেতৃত্ব ও সহযোগী সংগঠন নিয়ে অনুপুঙ্খ গবেষণা পরিচালনা করেন প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ দীর্ঘদিন। জামায়াতের প্রকাশিত এবং দলের বাইরে অন্যদের লিখিত এতদসংশ্লিষ্ট গ্রন্থগুলো তিনি নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করেন। নেতাদের সাথে কথা বলেছেন। জামায়াতের কার্যক্রম কাছে থেকে অবলোকন করেছেন। তথ্যসূত্র ও নির্ঘণ্ট দেখলে তা সহজে বোঝা যায়। বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটছে এবং সাধারণ জনগণের মাঝে এর বিস্তৃতি ঘটছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্ম ইসলাম জাতীয় রাজনীতিতে অপরিহার্য ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। কারণ হিসেবে প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ মনে করেন, ‘সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের মতাদর্শিক বিতর্ক, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের অধিকাংশ দেশ কর্তৃক সমাজতন্ত্র ত্যাগ, বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে বিভাজন ও শক্তিহীনতা প্রভৃতি এদেশের যুবসমাজের ওপর থেকে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রভাব কমে যেতে সহায়ক হয়েছে। আদর্শপ্রবণ যুবসমাজের এক উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমানে ইসলামী রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছে।  বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের এ ক্রমবর্ধিষ্ণু প্রাধান্য ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকামী সংগঠনসমূহকে আশাবাদী করে তুলতে সহায়ক হয়েছে।’ (জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ : নেতৃত্ব, সংগঠন ও আদর্শ, পৃষ্ঠা-১০)।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হাসান মোহাম্মদ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত বর্তমানে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দলের একটি হিসেবে জামায়াত বিবেচিত হয়। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থাকামী সংগঠনসমূহের মধ্যে জামায়াতের স্থান সর্বোচ্চে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে জামায়াতের সাফল্য বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সংগঠনের তুলনায় অনেক বেশি, বলা যায়। সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যে কার্যরত জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া দ্বারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এক উল্লেখযোগ্য অংশকে জামায়াত তার আন্দোলনের সমর্থক সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। জামায়াত তার আন্দোলনে বিভিন্ন পেশার মানুষকে আকৃষ্ট ও সংযুক্ত করার অনেকগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গড়ে তুলেছে।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *