মাদ্রাসা থেকে অধ্যক্ষকে জোর করে তুলে নিল এমপির লোকজন

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

রাজশাহীর পুঠিয়ার বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী (রহ:) ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে তুলে নেওয়ার হুমকির একদিন পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের বাড়িতে তিন ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল সোমবার দুপুরে মাদ্রাসা চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকর্মী ঐ অধ্যক্ষকে অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে কিলঘুসি মেরে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের শহরের বাড়িতে নিয়ে যান। এই ঘটনার প্রতিবাদ এবং অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে বিড়ালদহে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ২০ মিনিট অবরোধ চলার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অধ্যক্ষকে ফেরত দেওয়ার শর্তে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে তিন ঘণ্টা পর পুলিশ দিয়ে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে মাদ্রাসায় পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান জানান, ‘মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ নিয়ে এমপি ডা. মনসুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার রাত ৯টায় ফোন করে বলেন, ‘এখনই আমার বাসায় আসেন। আমি জানাই, আমি তো পাবনায় গ্রামের বাড়িতে। ফিরব রবিবার ভোরে। তখন এমপি বলেন, তাহলে কাল রাতে আসেন। আসতে পারবেন তো? না আসতে পারলে তুলে আনব।’ ডা. মনসুর রহমানের এই বক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আরও জানান, ‘এর একদিন পর সোমবার সকাল ৯টায় শফিকুল ইসলাম ডাবলু, মুহিন, তুষারসহ পাঁচ জন আমাকে মাদ্রাসা থেকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তোলে। এ সময় তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুসি দিতে থাকে। তারা জোর করে আমাকে এমপির শহরের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর কমিটি নিয়ে আমাকে এমপি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পরে অবশ্য তিনি তুলে আনার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন। এছাড়া তুলে আনার সঙ্গে জড়িত মুহিনকে দিয়ে ক্ষমাও চাইয়েছেন।’

তিনি বলেন, এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন, অভিভাবক ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর থানায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার বিকালে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অধ্যক্ষ থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদের বাড়ি বিড়ালদহে। আমি ডা. নওশাদকে মাদ্রাসার সভাপতি করেছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আমাকে না জানিয়ে গোপনে ডা. নওশাদকে বাদ দিয়ে দারার (সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমানে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা) লোককে সভাপতি করেছে। এজন্য তাকে ফোন করেছিলাম। পরে কিছু লোক তাকে তুলে এনেছিল। আমি অধ্যক্ষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশ ডেকে তাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’

অধ্যক্ষকে তুলে আনার হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের হুমকি আমি দিইনি। এসব দারার কারসাজি।’ বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী (রহ:) ফাজিল মাদ্রাসার নতুন সভাপতি আব্দুস সালেক জানান, ‘আমি আমার যোগ্যতায় সভাপতি হয়েছি। আমাকে আব্দুল ওয়াদুদ দারা সভাপতি করেননি। কিন্তু মাদ্রাসা চালু অবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করে তুলে নিয়ে যাওয়া খুবই ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা। আমি এই ঘটনার জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আমরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছি। এরপর অধ্যক্ষকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে রাজশাহীর পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, ‘সংসদ সদস্য অধ্যক্ষকে ডেকেছিলেন। পরে তিনি গিয়েছিলেন। তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সুত্র : ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *