অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. কাউকে ছোট করে দেখবেন না। মনে রাখবেন, আমরা সবাই পাপ করি। হ্যাঁ, আমরা সবাই করি, ব্যতিক্রম ছাড়া। আর আমাদের সকলেরই একই সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে একই ক্ষমার প্রয়োজন, যিনি পরম করুণাময়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। আমীন।
দুই. আমরা ব্যাপক গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার সাক্ষী হচ্ছি। এ ধরনের জঘন্য অপরাধকে কোনো কিছুই সমর্থন করতে পারে না। আমরা কি গণহত্যা, বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি থেকে কোন শিক্ষা নিইনি? মৌলিক মানবতা আজ কোথায়?
তিন. আপনি যদি অন্যের সমালোচনা করার দিকে মনোনিবেশ করেন তবে সম্ভবত আপনি নিজের ত্রুটিগুলি দেখতে এবং সংশোধন করতে পারবেন না। মনে রাখবেন, আপনি নিজেই নিজের সমস্ত কাজের জন্য দায়বদ্ধ। সর্বশক্তিমান আপনাকেই জিজ্ঞাসা করবেন আপনি কী করেছেন, অন্যরা কী করেছে সে সম্পর্কে কখনোই নয়। নিজের প্রতি মনোযোগ দিন, নিজেকে বাঁচান।
পূনশ্চ:
এক. মনে রাখবেন, ভুল থেকে সঠিক বলা বা করার কার্যক্ষমতা আপনাকে দেওয়া হয়েছে। তাই আপনার নিজের ভালোর জন্য এই পছন্দটি ব্যবহার করুন। প্রতিবার যখন আপনি ভুল করতে প্রলুব্ধ হন কিন্তু সঠিক কাজটি করার জন্য বেছে নিন তখন আপনি বিকশিত হন। এভাবেই আপনি সর্বশক্তিমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
দুই. আপনি যে কথা বলছেন সে সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। আপনার জিহ্বা একবার পিছলে গেলে, আপনি কখনই আপনার কথা ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। সেজন্য কখনই গসিপে অংশ নেবেন না। পরচর্চাকারীরা অন্য ব্যক্তির মর্যাদা, সম্মান, খ্যাতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা চুরি করে, যা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব! এ ধরনের বাজে কাজ থেকে দূরে থাকুন।
তিন. বাঁকতে পারেন কিন্তু ভাঙবেন না। আপনি মনে করতে পারেন এটি বলা সহজ তবে এটি করা খুব কঠিন। জীবনের বাঁকানো অংশ হ’ল যা মানব সক্ষমতার নতুন সংজ্ঞা দেয়। আপনি যতটা ভাবেন আপনি তার চেয়ে বেশি স্থিতিস্থাপক। মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান এমন বোঝা আমাদের দেন না যা সহ্য করার ক্ষমতা নেই!
চার. অন্য মানুষের নাটক ও কর্মহীনতায় জড়িয়ে পড়বেন না। আজকাল এসব প্রচুর চলছে। তারা যতই আপনাকে জড়িত করার চেষ্টা করুক না কেন, আপনি এক পদক্ষেপ পিছিয়ে আসুন। যদি তারা যুক্তিসঙ্গত হয় এবং আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকে, আপনি তাদের পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। অন্যথায়, এসব থেকে পরিষ্কার থাকুন নতুবা আপনি আপনার প্রশান্তি পুরোপুরি হারাতে পারেন!
পাঁচ. বাস্তবতা হল আমরা সকলেই সময়ে সময়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হই। এটি ঠিক যে, আমরা মানুষ। তবে এমন কিছুতে নিজেকে ক্লান্ত না করার চেষ্টা করুন যা এখনো ঘটেনি। এই ধরনের চিন্তা ও উদ্বেগে আপনার মনকে বিশৃঙ্খল করবেন না। ফোকাস করুন বর্তমান মুহুর্তে। ইতিবাচকভাবে বাঁচুন। সর্বশক্তিমানের প্রতি সর্বাত্মক আস্থা বজায় রাখুন।
ছয়. সর্বশক্তিমান। আমাদের সামনে যে অনিশ্চয়তা ও সংকট রয়েছে তার মধ্যে আমরা বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকেরই সান্ত্বনা ও নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের আপনার গাইডেন্স ও দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমরা আপনার উপর আরও বেশি নির্ভরশীল। আপনি আমাদের যা দিয়েছেন তার জন্য যেন আমরা সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকি!
দ্রষ্টব্যঃ
বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ; কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে, তা উত্তম ও চিরস্থায়ী তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। আর যারা মহাপাপ ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়। আর যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয়, নামায প্রতিষ্ঠা করে, আপোসে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে এবং তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। আর যারা অত্যাচারিত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। আর মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় ও আপস-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে। নিশ্চয় তিনি যালিমদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আশ-শুরা: ৩৬-৪০);
মানুষ হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়াই যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সব মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সুরা মায়িদা: ৩২)
ফিরআউন আপন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে ওদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; সে ওদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিঃসন্দেহে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা ও দেশের উত্তরাধিকারী করতে ইচ্ছা করলাম। ইচ্ছা করলাম দেশে তাদেরকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফিরআউন হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তাদের নিকট হতে ওরা আশঙ্কা করত। (সুরা কাসাস :৪-৬)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট