অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. যখন আপনার হৃদয়ে কষ্ট হয়, মনে করেন আপনি রাস্তার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন এবং আপনি অন্তরে শূন্যতা অনুভব করছেন; ভাবছেন আপনি কি দিয়ে এটি পূরণ করবেন। সাবধান! শয়তান দুর্বলতা থেকে সুবিধা নিতে চায়। সে আপনার মধ্যে অনেক মন্দ চিন্তার উন্মোচন করবে; তাকে ব্লক করার চেষ্টা করুন। সর্বশক্তিমানের দিকে ফিরে যান। তাঁর সাহায্য চান। শুধুমাত্র তিনিই আপনাকে সুস্থ করতে পারেন।
দুই. অন্যের বিচার করা এবং নিজেদেরকে সঠিক প্রমাণ করা মানুষের স্বভাব। নিজের দিক বাদ দিয়ে অন্যের দিকে আঙুল তোলা পাপ। আমরা কখনই মানুষের চারপাশের আসল পরিস্থিতি জানি না। আমরা কখনো তাদের জুতা পরে হাঁটিনি। এই ধরনের অন্যায় থেকে নিজেদের রক্ষা করুন! নিজেদের ভুল-ত্রুটিতে মনোযোগ দিন।
তিন. সামনের রাস্তা যতই কঠিন হোক না কেন, হাল ছাড়বেন না। আপনি যে মিনিটটি ছাড়তে প্রস্তুত তা অলৌকিক ঘটনা প্রকাশের ঠিক এক মিনিট আগের সময়ও হতে পারে। আমরা দেখেছি এটি অনেক বার ঘটেছে। সুতরাং দৃঢ থাকুন, প্রক্রিয়াটিতে বিশ্বাস করুন এবং হাল ছাড়বেন না।
পূনশ্চঃ
এক. প্রতিটি দিন পালতোলা মসৃণ হবে না। সেখানে রাইড হতে পারে অস্বস্তিকর এবং জীবনও হতে পারে অস্বস্তিকর। আপনার সামনে কী আছে তা আপনি দেখতে না পেলেও জেনে রাখুন যে সর্বশক্তিমান সর্বদা কী হতে চলেছে তার জন্য আপনাকে প্রস্তুত করছেন। প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করুন।
দুই. খুশি হতে শিখুন এবং অন্যের জন্য সুখ কামনা করুন। অন্যেরা যখন আপনার চেয়ে বেশি এগিয়ে যায় তখন হিংসা করবেন না। কৃতজ্ঞ থাকুন এবং তিনি আপনাকে আরও দান করবেন।
তিন. সর্বশক্তিমান। মানুষের আঘাতে আমাদের ভাঙা হৃদয়কে নিরাময় করুন। যে আমাদের ওপর গভীরভাবে আঘাত করেছে তার বিরুদ্ধে আমাদের হৃদয়ে যে রাগ ও তিক্ততা তৈরি করেছি তা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সাহায্য করুন। আমাদেরকে তাদের ক্ষমা করার ক্ষমতা দিন যেমন আপনি আমাদের সর্বদা করুণা দেখিয়ে চলেছেন।
চার. সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখছেন তা বিশ্বাস করবেন না। আপনি কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। আপনি ঠিক সেখানেই আছেন যেখানে আপনি থাকার কথা। আপনি ঠিক সেই জায়গায় আছেন যেখানে সর্বশক্তিমান আপনাকে রাখতে চান। নিজেকে ধাক্কা দেওয়া বন্ধ করুন কারণ আপনি অন্যদের প্রতিবিম্বে যা দেখছেন তা আপনি নন। আপনার নিজস্ব যাত্রায় মনোযোগ দিন। সর্বশক্তিমান আপনার সাথে আছেন।
পাঁচ. আমরা মানুষ এবং আমাদের মধ্যে ভুল ও পাপ করার প্রবণতা রয়েছে। আপনি কতবার পাপ করেছেন তা মনে করবেন না, তবে সর্বকালের সবচেয়ে বড় ভুল হল সর্বশক্তিমানের করুণার ব্যাপারে আশা হারানো। অনুতপ্ত থাকুন। তাঁর দিকে ফিরতে থাকুন। সর্বদা বিশ্বাস করুন যে তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন। এটাই আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখে!
ছয়. লোকেরা প্রতিদিন তাৎক্ষণিক অলৌকিক ঘটনা প্রত্যাশা করে। জীবনের প্রতিটি জিনিস সেভাবে হয় না। আপনাকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাৎক্ষণিক সাড়া আশা করে আমরা প্রার্থনা করার সময় অধৈর্য হয়ে পড়ি। সর্বশক্তিমান এভাবে কাজ করেন না। আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে শিখতে হবে, কৃতজ্ঞতার সাথে জীবনযাপন করতে হবে।
সাত. সন্দেহকে এড়িয়ে চলুন। এটি শয়তানের একটি বৈশিষ্ট্য এবং সর্বশক্তিমান এটাকে অপছন্দ করেন। এটি এমন হৃদয় থেকে উদ্ভূত যা অনিরাপদ ও সর্বদা সংশয়ে ভরা। সবচেয়ে খারাপ সময়ে, এটি ঘৃণায় পরিণত হতে পারে; মানুষের ক্ষতি করে এবং সম্পর্ক নষ্ট করে। আশাবাদ, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ও দৃঢ় বিশ্বাস দিয়ে এর মোকাবেলা করুন!
আট. পরীক্ষাগুলোকে আপনার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে দেবেন না। আপনি যার মুখোমুখি হচ্ছেন তা মোকাবেলা করে অনেকেই সামনে এগিয়ে গেছেন এবং বেঁচে আছেন। যদি আপনি মনে করেন যে জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে আপনি নতুন দিনের মুখোমুখি হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না, তবে সর্বশক্তিমানের কাছে সাহায্য চান এবং তাঁর কাছে শক্তি প্রার্থনা করুন।
নয়. জরুরি বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত করবেন না। সময় নষ্ট করবেন না। কারণ আপনাকে দীর্ঘ ক্লান্তি কর পথ পাড়ি দিতে হবে গন্তব্যে পৌঁছতে। পাহাড় যতই খাড়া হোক না কেন, আরোহণে আপনি মনভাঙ্গা হবেন না। আপনি কখনোই একা নন। প্রতিটি পদক্ষেপে সর্বশক্তিমান আপনার সাথে আছেন।
দশ. সর্বশক্তিমান। আমাদের নতুন শক্তি দিন কারণ আমরা একা চলতে পারি না। আমাদের আত্মা ক্লান্ত, জাগতিক বিষয়ের দ্বারা রসহীন সুষ্ক হওয়া। যা পরিবর্তন করা যায় না তা গ্রহণ করার জন্য আমাদের সাহস, প্রজ্ঞা ও মানসিক শান্তি দিন। আমরা জানি আমাদের জন্য আপনার একটি পরিকল্পনা আছে এবং এটি একটি সুন্দর পরিকল্পনা। আমীন।
দ্রষ্টব্যঃ
এরাই তারা, যাদের (জালেমেদের) প্রতিদান হলো- নিশ্চয়ই তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লানত। তারা তাতে (আল্লাহর অভিশাপে) স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আজাব শিথিল করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না। কিন্তু তারা ছাড়া যারা এরপর (জুলুমের বিষয়টি বুঝার পর) তাওবা করেছে এবং (নিজেদের ভুল) শুধরে নিয়েছে। তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : ৮৭-৮৯)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
