শুরু কথা:
হিজরা সফর (Hijra Tour) আমার স্বপ্নের কর্মসূচী। রসুল (সঃ) এর হিজরতের স্মৃতিবিজড়িত এ কর্মসূচী আমার প্রধান নির্বাহী জীবনের সর্বশেষ কর্মসূচী। স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বুনলেও কোভিড এবং কোভিড পরবর্তী নানা জটিলতার কারনে আমি মুনতাদা এইডে থাকাকালে এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি। তবে বিদায়কালে বোর্ড অব ট্রাষ্টিজ এবং সহকর্মীদের অনুরোধ করে এসেছিলাম, আমার অনুপস্থিতি যেন এ কর্মসূচীর বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় না হয়। আল্হাদুলিল্লাহ, মুনতাডা এইডের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং কর্মকর্তাগণ আমার অনুরোধ রাখেন এবং H&K সাইক্লিং গ্রুপের সহায়তায় নানা প্রতিকুলতাকে জয় করে ২০২২ সাল থেকে হিজরা রাইড (Hijra Ride) শুরু করেন।
হিজরা রাইড হচ্ছে রাসুল (সঃ) যে পথ ধরে মক্কা থেকে মদীনা হিজরত করেছিলেন সে পথ ধরে সাইকেল চালিয়ে মক্কা থেকে মদীনা পৌঁছা। মূলতঃ এটি একটি চ্যারিটি ফান্ড রেইজিং মিশন। মুনতাদা এইডের অনন্য কর্মসূচী Little Heart কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য H&K-এর সেচ্ছাসেবী সুদক্ষ সাইক্নিষ্টগন এ মিশনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে থাকেন। তারা গত তিন বছরে এ মিশনের মাধ্যমে প্রায় এক মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন, যার মাধ্যমে মুনতাদা এইড প্রায় একহাজার শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়, আলহামদুলিল্লাহ।
মহান আল্লাহ H&K এর স্বেচ্ছাসেবকদের এ ত্যাগ ও কুরবানী কবুল করুন। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, যে একটি জীবন রক্ষা করে, সে যেন পুরো মানবতাকে রক্ষা করে” (আল্ কোরআন)। সেদিক থেকে আক্ষরিক অর্থে H&K এবং মুনতাদা এইড (এবং এ মিশনে যারা সম্পৃক্ত) তারা সম্মিলিতভাবে শুধু এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে হাজার বার সমগ্র মানবতার জীবন রক্ষার জল্য মহান আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার মর্যাদা অর্জন করল, আমীন।
প্রথম বছর থেকেই মুনতাদা এইড এ মিশন পর্যবেক্ষণ ও উদ্বোধন করার জন্য আমাকে সৌদি আরব তথা মক্কা ও মদীনা সফরের আমন্ত্রন জানিয়ে আসছিল। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারনে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও তাদের দাওয়াতে সাড়া দিতে পারিনি। এ বছর বেশ কয়েক মাস আগেই মুনতাদা এইডের প্রধান নির্বাহী ভাই নাইফ শেখ আমাকে দাওয়াত দেন এবং ডাইরি বুক করিয়ে নেন।
এ দাওয়াতের মাঝে ছিল এক গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতাবেধের ছাপ, যা সত্যিই আমার আবেগে নাড়া দেয় এবং মুনতাদা এইড ও তার কর্মকর্তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা ও সম্মানকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। সিইও থাকা কালে সর্বজন গ্রহনযোগ্য এ প্রকল্পের চিন্তা ও উদ্যোগটা আমার ছিল বলে বিদায় নেওয়ার ৪ বছর পরও তাঁরা আমাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করছে এটা আমার প্রতি যেমন এক অবিস্মরণীয় মহানুভবতা, তেমনি তাঁদের উদার মনের এক দীপ্যমান উদাহরন। কিছুদিন আগে দেখলাম মুনতাদা এইড আফ্রিকার একটি দেশে আমার নামে সাদাকা জারিয়া হিসেবে একটি টিউব ওয়েল স্থাপন করেছে, যা আমার প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও মহানুভবতার আরেকটি সুন্দর উদাহরণ।
সম্প্রতি মুসলিম এইডও (মুনতাদা এইডের আগে যেখানে আমি সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি) তাদের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে গেস্ট স্পিকার হিসেবে দাওয়াত দিয়ে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আরেকটি সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একজন প্রাক্তন কর্মকর্তার প্রতি কোন নিয়োগদানকারী সংস্থার এ মানের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বর্তমান সমাজে খুবই বিরল। আমি বিনয়াবনত চিত্তে আমার রবের শাহী দরবারে মুনতাদা এইড ও তার ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য দোয়া করি, তিনি যেন দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে মহিমান্বিত করেন, আমীন।
চাকুরী জীবন শেষ করেও নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানের এ মানের ভালোবাসা আমার মনোজগতে এক অনাবিল প্রশান্তির শিহরন সৃষ্টি করে। এ ধরনের ভালোবাসা ও উদারতা অর্থ, সম্পদ ও জয়-খ্যাতিতে ভরা আইন পেশা বাদ দিয়ে জীবনের দুদশকেরও বেশী সময় চ্যারিটি সেক্টরে নিবেদিত করাকে সার্থক বলে প্রমানিত করেছে। মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আল্লাহ যেন আখেরাতেও আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন পূর্বক মর্যাদা ও সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেন, আমীন।
এভাবে আমাদের পরিবার ও সমাজ জীবনের সর্বস্তরে যদি পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্বা ও অধিকারবোধ কাজ করে তাহলে এ সমাজে শান্তি ও কল্যাণের ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
“স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নি’য়ামাত) বৃদ্ধি করে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখ, অকৃতজ্ঞদের জন্য) আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন।” (আল কোরআন ১৪ঃ৭) (চলবে)
* ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ এমসিএ’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট, খ্যাতিমান আইনজীবী ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব