ভারতের কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলনের নেত্রী কানিজ ফাতিমার জয়

এশিয়া সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ভারতের কর্নাটক রাজ্যের যে প্রার্থীদের দিকে অনেকের নজর ছিল তাদের মধ্যে কানিজ ফাতিমা অন্যতম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম মেয়েদের হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ফাতিমা। গুলবার্গ উত্তর নির্বাচনী কেন্দ্রে তাকেই প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের একমাত্র মুসলিম মহিলা প্রার্থী। জয়ী হয়ে ফের একবার আলোচনায় এলেন ফাতিমা।

গত বছর বাসবরাজ বোম্মাইয়ের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে গুলবার্গায় বিশাল বিক্ষোভ হয়, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কানিজ ফাতিমা। ২০২০-এ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে নারীদের বিক্ষোভেরও অগ্রভাগে ছিলেন তিনি।

কর্নাটকে সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্র পরিচালিত কলেজগুলোতে মুসলিম মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তখন ব্যাপক লড়াই করেছিলেন কংগ্রেসের এই নেত্রী। বিজেপির প্রার্থী চন্দ্রকান্ত বি পাতিলকে পরাজিত করেছেন ফাতিমা। তবে এবার প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৮-এ এই লিঙ্গায়েত নেতাকে ৬০০০ ভোটে পরাজিত করেছিলেন তিনি।

কানিজ ফাতিমা একজন সমাজ কর্মী। নারী অধিকার, বিশেষ করে মুসলিম মেয়েদের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি লড়াই করছেন। ২০১৮-এর কিছু দিন আগে ফাতিমা ভোট ময়দানে নামেন। তার স্বামী কামারুল ইসলাম ছিলেন মন্ত্রী এবং ছয়বারের বিধায়ক। তার মৃত্যুর পর ফাতিমা নির্বাচনী ময়দানে নামেন।

ফাতিমা মনে করেন, হিজাব মেয়েদের অধিকার। তিনি বলেন, স্বাধীন ভারতে কাউকে পোশাক দেখে বিচার করা যায় না। হিজাবের জন্য মেয়েদের কলেজে আসা বন্ধে করে দেয়া যায় না। ফাতিমা স্পষ্ট বলেছিলেন, ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানি দিয়েছিল বিজেপি।

কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। সারা রাজ্য থেকে এবার ৯ জন মুসলিম প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গুলবর্গা উত্তরের প্রার্থী কানিজ ফাতিমা।

পুবের কলম প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। সারা রাজ্য থেকে এবার ৯ জন মুসলিম প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গুলবর্গা উত্তরের প্রার্থী কানিজ ফাতিমা।

এছাড়াও জয়ী হয়েছেন রামানাগার থেকে ইকবাল হুসেন, বিদার থেকে রাহিম খান, শিবাজি নগর থেকে রিজওয়ান আরশাদ, নরসিমরাজা থেকে তানভির সাইত, বেলগাঁও উত্তর থেকে আসিফ সাইত। ইউটি খাদির জয়ী হয়েছেন ম্যাঙ্গালুরু থেকে। শান্তিনগর থেকে এন এ হারিস। কামরাজ পেট থেকে জামির আহমদ খান।

জামির আহমেদ তিন বারের এমএলএ। এবার বিজেপি তাঁকে হারাবার জন্য জবরদস্ত প্রার্থী ভাস্কর রাওকে নামিয়েছিলেন। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়ী হলেন বি জেড জামির আহমেদ।

ব্যাঙ্গালুরুর কামরাজপেট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জামির আহমেদ হারিয়ে দিলেন বিজেপি ও জেডিএস উভয় হেভিওয়েট প্রার্থীকে। জেডিএস প্রার্থী সি গোবি¨রাজের থেকে ৫৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন জামির আহমেদ।

শুধু কামরাজপেট নয়, অধিকাংশ আসনে কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলে কিছুই দেখা গেল না কর্নাটকে। ক্ষুব্ধ মানুষ বয়কট করেছে শাসকদলকে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরেই।

উল্লেখ্য, জামির আহমেদের এক মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ভোটের আগেই। তিনি বলেছিলেন, কর্নাটকে মুসলিমরাও অন্যান্য গোষ্ঠীর থেকে সংখ্যায় কম নয়। এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে গেরুয়া শিবির।

২০১৮ বিধানসভায় ছিলেন ৭ জন মুসলিম বিধায়ক। সকলেই কংগ্রেস থেকে। তাদের মধ্যে থেকে পুনর্বার জয়ী হলেন কানিজ ফাতিমা, তানভির সাইত, আবদুল খাদির, রাহিম খান ও এন এ হারিস। উল্লেখ্য, কর্নাটক বিধানসভায় ১৯৭৮ সালে ছিলেন ১৬ জন মুসলিম বিধায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *