ব্রেইল পদ্ধতির কুরআন মুখস্থ করে হাফেজ হলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ১৩ যুবক

ধর্ম ও দর্শন সময় সংবাদ
শেয়ার করুন

অন্ধত্বকে পরাজিত করে প্রচণ্ড ইচ্ছেশক্তির ডানায় ভর করে ব্রেইল পদ্ধতিতে কুরআনের হাফেজ হয়েছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ১৩ যুবক। কাগজের মধ্যে হাতের আঙুল নেড়েই হরফ চিনে রপ্ত করে হাফেজ হয়েছে তারা।

দৃষ্টি শক্তিহীন এসব হাফেজদের দুনিয়ার একটি রং কালো। কালোর সেই অন্ধকার পেছনে ফেলে পবিত্র কুরআনের আলোয় আলোকিত হয়েছে ১৩ জন হাফেজ। তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে কামরাঙ্গীরচরের তালিমুল কুরআন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা।

যেখানে চোখে দেখেও তেলাওয়াত করতে পারে না মানুষ, সেখানে একদল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করে আঙুলের সাহায্যে শিখেছেন কুরআন তেলাওয়াত।

চোখ নেই তবুও কুরআন শিখতে পারায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানা শিক্ষার্থীরা। একজন বলে, আমি জন্মসূত্রে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে আমি হাতের ইশারায় কুরআন ব্রেইল পড়ছি।

আরেকজন বলে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে কুরআন শরিফ পড়ার ও হিফজ করার তৌফিক দান করেছেন। সে জন্য অনেক আনন্দিত। আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক শুকরিয়া।

কামরাঙ্গীরচরের এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। তিনি নিজেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এমনকি মাদরাসার সভাপতিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

শিক্ষক বলেন, আমরা যে পড়তে পারি, এটা আল্লাহ তায়ালার বড় একটা নেয়ামত। আজকে যদি আল্লাহ জবান না দিত, পড়তে না পারতাম; তাহলে এই নেয়ামতটা আমরা পেতাম না। সে জন্য আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া।

তালিমুল কুরআন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নূরানি হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা সভাপতি মীর আশরাফ হোসেন বলেন, ব্রেইল হচ্ছে দৃষ্টিহীনদের একটি বিশেষ পদ্ধতি। ফ্রান্সের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী লুই ব্রেইল এটার আবিষ্কারক।

ছয়টি ফোটার মাধ্যমে সবগুলো অক্ষর সৃষ্টি হয়। একেকটি অক্ষরের জন্য সুনির্দিষ্ট নম্বর আছে, সেগুলো আমরা মুখস্ত করে নেই। এভাবেই আমরা পড়াশোনা করি।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে কুরআনের শিক্ষা সহজ না হলেও একাগ্রতার কারণে সম্ভব হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তাদের শিক্ষক।

শিক্ষক বলেন, প্রথমে তাদের নম্বর শেখানো হয়, ডট শেখানো হয়। এরপর সিরিয়াল শেখানো হয়। এরপর তাকে ডান-বাম চেনানো হয়। এরপর সে কুরআন শরিফ পড়তে পারে।

কুরআনের এ হাফেজদের সহযোগিতায় সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, পাশাপাশি ওস্তাদরা অনেক পরিশ্রম করেছে। এই প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করার জন্য এবং আরো অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার জন্য এখানে অনেক আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

মাদরাসাটাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা এবং তাদের এই কার্যক্রমকে সচল রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ২০১৬ সাল থেকে মাদরাসাটিতে এই পদ্ধতিতে কুরআন শিখে আসছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *