ব্রিটেনের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে লেবার পার্টি

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরীঃ

স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে ১৪ বছর পর ব্রিটেনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরেছে লেবার পার্টি। হাউস অফ কমন্সে দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। ৬৫০টি আসনের মধ্যে লেবার ৪১২টি আসনে জিতেছে। আগের চেয়ে ২১৪টি বেশি আসন পেয়েছে।

সাধারণ নির্বাচনে ঐতিহাসিক এই বিজয়কে “আশার আলো” হিসেবে গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন লেবার নেতা। চার বছর আগে মানবতাবাদী রাজনীতিবিদ জেরেমি করবিনের জায়গায় নেতৃত্বে আসেন স্যার স্টারমার। লেবার দল সর্বশেষ ২০০৫ সালে টনি ব্লেয়ারের অধীনে একটি নির্বাচনে জিতেছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দলটি আবার ক্ষমতায় এসেছে।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক স্বীকার করেছেন যে, তার রক্ষণশীল দল নিতান্তই পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। কনজারভেটিভ পেয়েছে মাত্র ১২১ আসন। আগের চেয়ে ২৫১টি আসন তারা হারিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস-সহ ধরাশায়ী হয়েছেন ঋষি সুনাকের মন্ত্রিপরিষদের বাঘা বাঘা সদস্য। দলটির ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফলাফলে ডুবে গেছে।

১৯৬২ সালে লন্ডনে জন্ম নেয়া কিয়ার স্টারমার সারে-তে বেড়ে ওঠেছেন। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। লিডস ও অক্সফোর্ডে অধ্যয়ন করেছেন। ব্যারিস্টার হয়ে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে পাবলিক প্রসিকিউশনের ডিরেক্টর এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান ছিলেন। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের সবচেয়ে সিনিয়র সরকারি কৌঁসুলি বা প্রসিকিউটর ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।

এক সময়ের বামপন্থী এই নেতা আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবনে বেশ সফল ছিলেন। পঞ্চাশের কোঠায় এসে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তবে ছোট বেলায় রাজনীতির সাথে এক ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল। ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির স্থানীয় যুব শাখায় যুক্ত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে লন্ডনের হর্বণ অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাস আসন থেকে প্রথমবার এমপি হন। লেবার পার্টি তখন বিরোধী দলে ছিল। নেতৃত্বে ছিলেন জেরেমি করবিন। তিনি কিয়ারকে ‘শ্যাডো হোম সেক্রেটারি’ নিয়োগ করেন।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ছন্দ পতন ঘটেছে লেবারের তরঙ্গে

লেবার পার্টির উত্তাল তরঙ্গের মাঝেও ছন্দ পতন ঘটেছে ফিলিস্তিন ইস্যুতে। ২০১৯ সালে লেবার পার্টির নেতা হন স্যার কিয়ার স্টারমার। তখন ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে জেরেমি করবিনকে তিনি সংসদীয় লেবার পার্টি থেকে বরখাস্ত করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানকেও সমর্থন করেন। স্যার কিয়ার গাজায় পানি ও জ্বালানী বিচ্ছিন্ন করার ‘অধিকার’ ইসরায়েলের আছে বলে যে বক্তব্য দিয়ে ছিলেন, তাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এতে ফিলিস্তিনপন্থী ভোটারদের ক্ষুব্ধ করেছিল। তবে দলটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার অঙ্গীকার করেছে লেবার পার্টি তার নির্বাচনী ইশতেহারে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবানও জানিয়েছে। কিন্তু তাতেও অনেক মানুষের আস্তা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়েছে।

ইসলিংটন নর্থ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মানবতাবাদী জেরেমি করবিন লেবার প্রার্থীর চেয়ে সাত হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। দলটির শক্ত ঘাঁটিতে হেরে গেছেন শ্যাডো মিনিস্টার জনাথন অ্যাশওয়ার্থ। লেস্টারের সাউথ আসনে আগেরবার তিনি ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ছিলেন। এবার ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন। বার্মিংহামে স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়ুব খানের কাছে হেরে গেছেন লেবার নেতা খালিদ মাহমুদ।

ইস্ট লন্ডনের বেথানল গ্রিন অ্যান্ড স্টেফনি আসনে ছায়ামন্ত্রী রুশনারা আলী বেশ অসহায় বোধ করেছেন। গেলবার ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধান ছিল। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাম আজমল মাশরুর থেকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। লেস্টার সাউথ আসনে শোকাত অ্যাডাম খুবই অল্প ভোটে জয় পেয়েছেন। শ্যাডো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং ইলফোর্ড নর্থে কোন রকম রক্ষা পেয়েছেন। আগের বার নয় হাজার ভোটের ব্যবধান ছিল। এবার মাত্র ৫২৮ ভোট বেশি পেয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়ানে মোহামাদ ইলফোর্ড নর্থে অল্পের জন্য হেরেছেন। লেবারের মি. স্ট্রিটিংয়ে কোন রকম রক্ষা পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমেদ ইয়াকুব ঝড় তুলেছেন বার্মিংহাম লেডিউডে। ছায়া বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ রীতিমত ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। আরও অনেকে পড়েছেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ডিউজবুরি, ব্ল্যাকবার্ন ও বাটলেতে বিরোধীরা জয়ী হয়েছেন, যেখানে আগে লেবার পার্টির ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।

এদিকে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আফসানা বেগম লেবার পার্টির হয়ে আবারো জিতেছেন।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *