বেলকনির গোলাপ ফুল এবং মায়ের হাতের পিঠা ।। আকবর হোসেন

ভ্রমণ-স্মৃতিকথা লাইফ স্টাইল
শেয়ার করুন

শীত আসলে বিলেতে গাছের পাতা ঝরে। ফুল ফুটেনা, ভোমর আসেনা। সুভাষে সুশোভিত হয়না আশপাশ। সামারে আবার সব যেনো জীবন ফিরে পায়।

কিন্তু আমাদের বেলকনির গোলাপ ফুলটি এখনো বেঁচে আছে। ঠান্ডা গেলো, ঝড় তুফান গেলো, তাতে কী! ছোট্ট গোলাপটি এখনো সজীব আছে, সুভাষ ছড়াচ্ছে।

কী আশ্চর্য্য! আমি এই একটিমাত্র ফুলের সৌন্দর্যে ভীষণ মুগ্ধ। প্রায় প্রতিদিন দেখা হয়। উইকেন্ডেই বার কয়েক কাছে যাই। বার বার দেখি।

মনে পড়ে আমাদের বাড়িতে গোলাপ ফুলের কথা। আরো ছিলো হাসনা হেনা ও নয়টার ফুল। আম্মা আমাদের বাড়িতে বিচরায় কিংবা উঠোনের একপাশে ফুল লাগাতেন। শাক-শব্জি আলু ইত্যাদি লাগাতে উৎসাহ দিতেন।

আমি ফুল ভালোবাসি। নয়টার ফুল ঠিক নয়টাই যেনো ফুটতো। তখন আমরা স্কুলে যেতাম। রজনীগন্ধা, বকুল, জবা আর চম্পা ফুলের ঘ্রাণে চারদিক ছিল বিমোহিত।

নিকট প্রতিবেশী হিন্দু বাড়িগুলোতে নানা রকমের ফুলের বাহার ছিল। প্রতিবেশী কিশোরদের সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক সহানুভূতি এখনো মনে পড়ে। আমরা এক সাথে খেলা করতাম।

সন্তোষ, দিরু, মনাই, যুগল, প্রীতি, শুরু, করুণাময় এখন পরিনত বয়সী। এরাই এক সময় খেলার সাথী ছিলো। আমাদের বাড়িতে কিংবা তাদের বাড়িতে নিত্যদিন আসা-যাওয়া হতো।

আম্মার বইনারিকে (বান্ধবী) আমরা মই ডাকি। তিনি সব সময় আমার খোঁজ খবর নেন। দেশে গেলে আম্মা আমাকে বলেন- আমি যেন মইকে দেখে আসি।

আমার মা অসুস্থ, তাই প্রায় প্রতিবছরই দেশে যাওয়া হয়। এবার কবে যাবো জানিনা। ফোনে যখন কথা হয় প্রায়ই পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিই। কোন সমস্যা নিয়ে কথা বলিনা। নানা কথায় মাকে আনন্দ দেবার চেষ্টা করি। কাল কথা হলে এই ফুলের গল্প শেয়ার করবো। তখন বাড়িতে লাগানো ফুল নিয়ে অনেক কথা হবে।

আহারে মায়ের হাতের পিঠা! খেতে ভীষণ মজা। এখন পিঠা-চিড়া আর তেমন বানানো হয় না। মানুষের এখন আর সময় নেই। অথচ বিলেতে পিঠা উৎসব করে আমাদের ঐতিহ্যকে জিইয়ে রাখার প্রয়াস আছে।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী নিজহাতে পিঠা বানাবে? এখনতো বাঙালি দোকানগুলোতে রেডিমেইড ফ্রোজেন পিঠা পাওয়া যায়। আজ কিনে আনলাম বাখরখানি আর ভাপা পিঠা।

কভিডের সময় হান্দেশ, বড়া, তিরমিজু, বাকলাভা, জিলাপি, রসমালাই বানিয়েছি। এবার ভাপা পিঠা সহ আরও অন্য ধরনের পিঠা বানাবার ইচ্ছে আছে।

আম্মা আমাদের জন্য একেকদিন একেক ধরনের নাস্তা বানাতেন। সকালের সেই খাবার নিয়ে মায়ের সাথে প্রায়ই মজার গল্প হয়।
এখনও মনে আছে চুনের জাউয়ের কথা। ভাত বিরান, ডিম বিরান ইত্যাদি রান্না হতো মাঝে মাঝে।

স্কুলে যাবার সময় আম্মা জোর করে খাওয়াতেন। এখন আর কেউ আমাদের সেভাবে বলেনা। আমরা বাবা হয়েছি- আমাদের সন্তানদের খাবারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়।

মা নকুল বানাতেন, খিচুড়ি, পরোটা, সুজি, ভাজি আর রুটি। চৈপিঠা, কুদি বিরান এসবের স্বাদ যেনো আজো জিহ্বায় লেগে আছে। এখন সব মডার্ন। ব্রেড, নুডলস, বিরানি দিয়ে নাস্তা। কেনো জানি এখন আবার সে দিনগুলোতে ফিরে যেতে মন চায়!

“পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। / ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।”

আকবর হোসেন সাংবাদিক-গীতিকার, শহীদ সন্তান ও চেয়ারম্যান শহীদ-গাজী ফাউন্ডেশন ইউকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *