বিশ্বময় ভাইরাল ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

আন্তর্জাতিক আমেরিকা যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী :

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় বিশ্বময় আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়েছে। হোয়াইট হাউসে বসে কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে কড়া ভাষায় পাল্টা জবাব দেয়ার নজির স্থাপন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এসময় জেলেনস্কির বডি ল্যাংগুয়েজ (শারীরিক ভাষা) ছিল বলিষ্ঠ। ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র কথাকাটাকাটি করেছেন তিনি। উভয়পক্ষ একে-অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলেছেন।

সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কি যেভাবে তর্কে জড়িয়েছেন, সেটি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সাধারণ পোশাকে হোয়াইট হাউসের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন জেলেনস্কি। সে কারনে আমেরিকায় তাকে কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এই ঘটনায় ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। অপরদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের চোখের ওপর চোখ রেখে দৃঢ়তার সাথে জবাব দিয়ে সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

তর্কের এক পর্যায়ে ট্রাম্পের পক্ষ অবলম্বন করে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স জেলেনস্কিকে অকৃতজ্ঞ বলে অভিযোগ করেন। বলেন, পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন ট্রাম্প এবং দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। ভান্সের কথায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি উত্তেজিত হয়ে পুতিনের আগ্রাসী নীতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আপনারা এটা অনুধাবন করতে পারছেন না। ভবিষ্যতে তা টের পাবেন।

জেলেনস্কির মন্তব্যে ট্রাম্পের গাত্রদাহ শুরু হয়। উত্তপ্ত কথাকাটাকাটিতে লিপ্ত হন উভয়ে। তখন জেলেনস্কি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশনা দেয়ার মতো অবস্থানে নেই আপনি। ট্রাম্পের কণ্ঠ তখন ক্রমশ জোরালো হয়ে ওঠে। জেলেনস্কির উদ্দেশ্যে তিনি বলতে থাকেন, লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ে আপনি জুয়া খেলছেন।

সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় অনেকে বলছেন, তর্কে ট্রাম্প মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। এক পর্যায়ে তিনি ইউক্রেনে সহায়তার জন্য নিজ দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘স্টুপিড’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। জগৎবাসী ওই কথোপকথন অবলোকন করেছেন সরাসরি।

কঠোর ঝগড়ার কারণে মার্কিন পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যেতে বলা হয়েছিল। এর কড়া সমালোচনা করেছেন বহু মানুষ। এ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতেও সৃষ্টি হতে পারে নতুন মেরুকরণ।

আজ রবিবার ব্রিটেনের রাজা চার্লস স্যান্ড্রিংহামে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, যেখানে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জেডি ভ্যান্সের কাছে অপমানের পর যুক্তরাজ্য এবং ইইউ তাদের “অটল” সমর্থন প্রদর্শন করবে।

এছাড়া ইউক্রেন সংকটে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনের লক্ষ্যে একটি বিশেষ প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটিশি প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ইউরোপীয় সরকার প্রধান এবং কানাডা ও তুরস্কের নেতাদেরও আতিথ্য দেবেন।

ইউরোপের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় যুক্তরাজ্যের ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীয় ভূমিকা প্রদর্শন করে আজকের প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার স্পষ্ট করে বলবেন যে, ইউরোপকে রাষ্ট্রপতি পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ, ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্ব শান্তি বিনষ্টের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে ইউরোপীয় তথা পশ্চিমা জোটের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।

শনিবার রাতে স্টারমারের সাথে বৈঠকের জন্য ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছানোর পর জেলেনস্কি বলেন, তিনি ‘খুব খুশি’ যে রাজা এই বৈঠকে আগ্রহী হয়েছেন। ওয়েস্টমিনস্টারে রাজকীয় অনুষ্ঠানের প্রস্তাব ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পের সমান মর্যাদা দেওয়ার একটি ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাজ্য বিলিয়ন পাউন্ড জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদ ইউক্রেনের জন্য খুলে দিয়ে আরও সংহতি প্রদর্শন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *