সাঈদ চৌধুরী
মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশনের (এমসিএ) দাওয়াহ কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ। সোমবার বিকেলে এমসিএ লন্ডন সাউথ ইস্ট রিজিওনের ব্যবস্থাপনায় পপলার মস্ক এন্ড কমিউনিটি সেন্টারে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় দেড় শতাধিক বিশিষ্টজনের অংশ গ্রহনে মুখরিত অনুষ্ঠানে ‘দাওয়াহ: একজন মুসলিমের মিশন’ শীর্ষক আলোচনা ছিল খুবই প্রাণবন্ত এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন এমসিএ’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট খ্যাতিমান আইনজীবী ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমসিএ’র কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সেক্রেটারি নেসার আহমদ ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সেক্রেটারি ডা. এএসএম আশরাফ মাহমুদ উজ্জল।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাখা সভাপতি আজাদ মিয়া। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাজী ফয়জুল ইসলাম পারভেজ।
কনফারেন্সের প্রধান অতিথি ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন- আরবীতে দাওয়াহ শব্দের অর্থ হল ‘আহবান করা’। ইসলামী প্রেক্ষাপটে সমস্ত মানবজাতির জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রদত্ব সঠিক পথের দিকে অর্থাৎ সত্য ও সুন্দরের দিকে মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো। এই দাওয়াহ হল মুসলিম উম্মাহর প্রধান মিশন। এটা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও মহিলার জন্য ফরজ। আর এর শিক্ষা হল- স্বেচ্ছায় আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ। তাই একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁরই আদেশ অনুসরণ করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, ইমানের সাথে অ্যাকশন, ভালো যোগাযোগ দক্ষতা, ধৈর্য ও অবিচলতা, সঠিক নৈতিকতা ও দয়াবান ব্যক্তিত্ব, নিয়তের বিশুদ্ধতা, দুআ বা আল্লাহর কাছে পার্থনা- এই ৭টি বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে ব্যারিষ্টার হামিদ আজাদ দাওয়াহ বিষয়ক এই দৃঢ় স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার আহবান জানান। প্রচেষ্টা যতই নিবেদিতপ্রাণ হোক না কেন, যদি এর কোনো স্তম্ভ অনুপস্থিত থাকে তবে দাওয়াহ যথার্থ হবে না এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসবেনা বলে তিনি সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
দাওয়াহ বিষয়ের মর্মার্থ ও আমাদের কর্তব্য বিশ্লেষণ করে ব্যারিষ্টার হামিদ আজাদ বলেন, কোরান ও হাদিস অনুসারে দাওয়াহ হচ্ছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ। সূরা ফুসসিলাতের ৩৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন- তার চেয়ে ভাল কথা কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকাজ করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি মুসলিম।
দাওয়াহকে নবীদের মিশন হিসেবে বর্ণনা করে এমসিএ’র প্রেসিডেন্ট বলেন- মূসা, ঈসা, দাউদ, ইব্রাহিম ও ইউসুফ আলাইহিস-সালাম এবং তাদের অনুসারীদের মতো সমস্ত রাসুলদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর দিকে ডাকা (দাওয়া-ইলা-আল্লাহ)। মানুষকে সত্যিকারের ঈমানের (বিশ্বাস) দিকে, শিরক থেকে তাওহীদে (একেশ্বরবাদ) এবং আগুন থেকে জান্নাতে, অন্ধকার কুফর (অবিশ্বাস) থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা। নবীগণ দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সংগ্রাম করেছেন। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের দাওয়াত দিতে গিয়ে তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। সেখানে তারা ধৈর্য ও অবিচলতার পরিচয় দিয়েছে। যখনই জনগণের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন তখন সর্বোত্তম পদ্ধতিতে মন্দের জবাব দেওয়ার ঐশ্বরিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন এবং সর্বোচ্চ নৈতিক চরিত্রের পরিচয় দিয়েছেন। তাই দাওয়াহ অবশ্যই আমাদের প্রিয় নবীর অনুসারীদের মিশন হতে হবে।
এক্ষেত্রে তিনি সূরা ইউসুফের ১০৮ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন। যেখানে আল্লাহপাক মহানবীকে বলেছেন- বল, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি ডাকি জেনে-বুঝে, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ কতই না পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। সূরা আলে ইমরান ১০৪ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন- তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।