সাঈদ চৌধুরী
ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিবিসিসিআই) উদ্যোগে লন্ডন সফররত মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের ডিরেক্টর আব্দুর রহিম রিপনের সম্মানে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশে বিবিসিসিআই জন্মলগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট ও মৌলবী বাজার চেম্বার অব কমার্সের সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। বক্তারা উদীয়মান ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী আব্দুর রহিম রিপনের প্রশংসা করে বলেন, ঢাকায় কোন সিলেটি যে কোন অসুবিধায় পড়লে রিপনকে পাশে পাওয়া যায়। প্রবাসীদের সমস্যা মোকাবেলায়ও তিনি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে আব্দুর রহিম রিপন বিবিসিসিআই’র সাথে মৌলভীবাজার চেম্বার আরো গভীর ও নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান। দেশের সাথে প্রবাসিদের ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশে সর্বাত্বক ভূমিকা পালনেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ছড়িয়ে দিতে বিবিসিসিআই’র ব্যাপক ভিত্তিক উদ্যোগ ও প্রবাসীদের সহায়তা কামনা করেন। উপস্থিত বক্তারা বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে এক সাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট ২০২৪) বিকেলে বিবিসিসিআই ডিরেক্টর ও ঢাকা রিজেন্সি হোটেল এন্ড রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুসলেহ আহমদের প্রাণবন্ত পরিচালনায় ও বিবিসিসিআই লন্ডন রিজিওনের প্রেসিডেন্ট মনির আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন-
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিবিসিসিআই’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মহিব চৌধুরী, বিবিসিসিআই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান রেনু, সময় সম্পাদক ও বিবিসিসিআই’র সাবেক প্রেস এন্ড পাবলিসিটি ডিরেক্টর সাঈদ চৌধুরী, সাংবাদিক ও বিবিসিসিআই’র ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম, সানরাইজ-স্পেকট্রাম বাংলা রেডিও’র ফাউন্ডার মিছবাহ জামাল, জনমতের পরিচালক ও বার্তা সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ, দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, বিবিসিসিআই’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল হায়াত নুরুজ্জামান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল এমদাদ আহমদ, প্রেস ও পাবলিসিটি ডিরেক্টর মিসবাহ চৌধুরী, বিবিসিসি’র লাইফ মেম্বার আলী হোসেন, এক্সেলসিয়র সিলেটের সাবেক ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আহমদ আলী, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ আলী হোসাইন, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ নুরুল আরমান, আবুল হোসেন, শওকাত ইসলাম ফরাজী, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শাওন, আব্দুর রকিব, মোহাম্মদ আনিস, মোহাম্মদ আজাদুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। সিলেট বিভাগে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য বিবিসিসিআই বহু বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি উত্থাপন ও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। অবশেষে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সিলেট বিমানবন্দর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে শেরপুর নামক স্থানে জায়গা নির্বাচনের সময় বিবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে মুকিম আহমদ, মহিব চৌধুরী ও আমি (সাঈদ চৌধুরী) মৌলবী বাজার সফল করেছি। সেসময় মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের সাথে আমাদের মতবিনিময় হয়েছে। তখনো আব্দুর রহিম রিপনের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল।
অনুষ্ঠানে লন্ডনের বারবিকান সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘দ্য এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫’ এর সেমিনার এবং বাণিজ্য মেলার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়। তখন বিবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট ছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী মিলিয়নিয়ার মুকিম আহমদ। প্রথমবারের মতো সেটি বাংলাদেশ কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত দেশীয় বাণিজ্য মেলা ছিল। এটি আন্তর্জাতিক ফ্রন্টে বাংলাদেশীদের প্রোফাইল বাড়াতে সাহায্য করেছে। বিবিসিসিআই’র উদ্যোগে এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের সহায়তায় মেলার চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। মেলাকে সাফল্য মন্ডিত করার জন্য তখন বাংলাদেশ সফর এবং বিলেতে ও বাংলাদেশে ব্যাপক প্রচার তৎপরতা পরিচালনা করা হয়।
বিবিসিসিআই’র ডাইরেক্টর জেনারেল ও এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫ এর নির্বাহী প্রধান ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই জেপি’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সময় ও ইউকে বাংলা ডাইরেক্টরি সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী, মেলান নেটওয়ার্কের এলান টুইডি ও বিবিসিসি স্কটিশ রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট এম এ রউফ। ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব এবং সিলেট প্রেসক্লাবে বিবিসিসির পক্ষ থেকে এক্সপো সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করি আমি (সাঈদ চৌধুরী)। এছাড়া আমরা (প্রতিনিধি দল) এক্সপো বাংলাদেশ ২০০৫ কে সফল করতে এফবিসিসিআই-সহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ব্রিটিশ হাই কমিশন, বিনিয়োগ বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা)-সহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হই। বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে আমরা ব্রিটিশ ও ইউরোপিয়ান বায়ারদের সাথে যোগাযোগ শুরু করি। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের বাজার সৃষ্টিতেও প্রানান্ত প্রয়াস চালিয়েছি।
বিবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমদ ও ডিজি ওয়ালী তছর উদ্দিনের নেতৃত্বে সকলের সামগ্রীক প্রচেষ্টায় মেলায় বাংলাদেশের প্রথম সারির উল্লেখযোগ্য ৬০টি কোম্পানী এবং বিলেতের ১৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহন করে। এতে ক্রেতা ও দর্শনার্থিদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। তিন দিনে প্রায় দশ সহস্রাধিক মানুষ বানিজ্য মেলায় অংশ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা লাভ করে। সার্বিক বিচারে বলা চলে, উন্নত বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাপাসিটি ও পটেনশিয়াল তুলে ধরার ক্ষেত্রে এক্সপো ২০০৫ সফল হয়েছে। এক্সপোর কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক ছিল প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন। এগুলি গতানুগতিক সেমিনার ছিল না। বিষয়বস্তু ও অতিথি নির্বাচন এবং প্রেজেন্টারের উপস্থাপন সকল ক্ষেত্রেই সেমিনারের উপযোগিতা অর্জিত হয়েছে।
মেলায় সবচেয়ে বড় অংকের ব্যবসা করেছে পাটয়ারী পটেটো ফ্ল্যাক্স। এছাড়া রিচি গ্রুপ, শাইন পুকুর, সাতরং, এবিএস, বেক্সিমকো, হামদর্দ, মৌসুমী ফ্যাশন, অপরুপা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য অংকের ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে। মেলা চলাকালীন তিন দিন বার্বিকান সেন্টার হয়ে ওঠেছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনকেন্দ্র। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নার্ভসেন্টার লন্ডনে একখন্ড বাংলাদেশ। তখন লন্ডনে হাই কমিশনার ছিলেন মৌলবীবাজার নিবাসী সাবেক সচিব কবি এ এইচ মোফাজ্জল করিম। যার ভূমিকাও অবিস্মরণীয়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯৪ শতাংশই তৈরি পোশাকনির্ভর, এর পরিমাণ ৫.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্যস্থল হলো যুক্তরাজ্যের বাজার। আগামীতেও এ ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন অনেকেই প্রত্যাশা করেন।
* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথা সাহিত্যিক