অর্থনৈতিক সঙ্কটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে। তবে তাতেও ক্ষোভ কমেনি। সান্ধ্য আইনের মধ্যেও রাজাপাকসের পৈত্রিক বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা, জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন এমপি এবং একজন বিচারপতির বাড়ি।
বিক্ষোভে সহিংসতায় প্রাণও হারিয়েছেন একজন এমপি। তবে বলা হচ্ছে, তিনি বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর নিজেই নিজের উপর গুলি চালান।
বিবিসি জানিয়েছে, কলম্বোয় সহিংসতায় ওই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় দুইশ জন।
স্বাধীনতার পর থেকে এখনই সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বিরোধী দলগুলো এই দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকেই দায়ী করছেন।
বিক্ষোভকারীরা রাজাপাকসের পৈত্রিক ভিটায় অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন এমপি ও একজন বিচারপতির বাড়িও। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ দেখছে ক্ষমতার চেয়ারে বসে থাকা রাজাপাকসের পরিবার।
শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে সোমবার জানানো হয়, শুক্রবার এক বিশেষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বড় ভাই ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পরে সেই আহ্বানে সাড়া দেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এর আগে গত শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে জানিয়েছিলেন যে, তার ভাই অর্থাৎ দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে সম্মতি জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর অন্য মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন বলে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। দুই মন্ত্রীও এরই মধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করার কারণে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য পার্লামেন্টে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন বলে খবর মিলছে। যদিও এর আগে বিরোধী এসজেবি পার্টি নিশ্চিত করে যে, তাদের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।
২৬ বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী ২০০৯ সালের তামিল টাইগারদের পরাজিত করার মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হয়। আর সেই গৃহযুদ্ধে বিজয় আসে প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের শাসনকালে। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচনে জয়ী হয় এই পরিবার। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শাসনভার পরিচালনার কারণে দুর্নীতিসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, ডেইলি মিরর
