বিএনপি-জামায়াতের ডাকে ২য় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ চলছে

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন আজ। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধ কর্মসূচি চলছে। সমমনা অন্য দলগুলোও কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। অবরোধ ঘিরে রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অবরোধের আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি বাসে আগুনের খবর জানা গেছে।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনও তালাবদ্ধ। সেখানে দলবেঁধে পুলিশ অবস্থান করছে। এছাড়া ঢাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও বিজিবি। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে আরও ১০ প্লাটুন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমগ্র দেশটাকে এখন বৃহৎ কারাগার বানিয়ে ফেলেছেন। একদিকে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, অপরদিকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ক্র্যাকডাউন শুরু হয়েছে। এটি যেন এক মহা তামাশা।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে রিজভী আরো বলেন, বিএনপির বন্ধ কার্যালয়ে ইসির চিঠি প্রেরণও ছিল আরেকটি তামাশা। আসলে সরকার নিজেদেরকে অতি চালাক ভাবছে এবং সবকিছুতেই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিরসহ বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের যেভাবে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাতে এটি সুস্পষ্ট, আগামী নির্বাচন যেনতেন প্রকারে অনুষ্ঠিত করে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিতে বদ্ধপরিকর শাসকগোষ্ঠী।

এবার সরকারের এই স্বপ্ন জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তারে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনগণ আরও বলিয়ান হচ্ছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা বাস্তবায়ন ছাড়া জনগণ রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরে যাবে না।

বিবৃতিতে গতকাল গভীর রাতে ঢাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম), আজ ভোরে উত্তরা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং গতকাল ঢাকা থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্সকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় দফার অবরোধে বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, পিকেটিং করেছে।

জনগণের ভোট-ভাত এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক অবরোধ চলছে। তাই পুলিশ দিয়ে, গ্রেফতার করে জনতার এই উত্তাল তরঙ্গ থামানো যাবে না বরং আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েই জনতা ঘরে ফিরবে বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

তিনি আজ রাজধানীর উত্তরার কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে এবং বিগত তিন দিনের অবরোধ চলাকালে সরকারের হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধের সমর্থনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরে উত্তরা থানা আয়োজিত এক বিক্ষোভ-পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি গাউসুল আজম থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আজমপুরে এসে পথ সভার মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য আবু হাসনাইন, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের, মাহবুবুল আলম ও আব্দুল্লাহ রেজা এবং ছাত্রনেতা সালাহ উদ্দীন প্রমুখ।

ড. রেজাউল করিম বলেন, গণবিরোধী সরকার বশংবদ নির্বাচন কমিশন দিয়ে একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সে ষড়যন্ত্রকে বাস্তবরূপ দেওয়ার জন্যই সারাদেশে গায়েবী মামলা ও গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। কিন্তু জনগণ সরকারের এই চক্রান্ত মেনে নেবে না বরং একতরফা তফসিল ঘোষণা করা হলে জনগণ রাজপথে দুর্বার ও অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলবে। তিনি সরকারকে জনমতের প্রতি প্রদ্ধা প্রদর্শন করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান। অন্যথায় সরকারকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার আগামী নির্বাচনে ভোটচুরি নির্বিঘ্ন ও প্রতিপক্ষমুক্ত করতেই আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ জাতীয় নেতাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে করারুদ্ধ করে রেখে গোটা দেশকেই অঘোষিত কারাগারে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগের অবৈধ ক্ষমতালিপ্সা ও লাগামহীন লুটপাটের কারণেই জাতীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমদানী ব্যয় আর রপ্তানী আয়ে কোন ভারসাম্য নেই। উপর্যুপরি দেশে তীব্র ডলার সঙ্কট চলছে। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতিকে এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে হলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় সকলে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান এবং অবিলম্বে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াতসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত ৫ ও ৬ নভেম্বর সারাদেশে সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথে অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে ঢাকা মহানগরী উত্তর মিরপুর জামায়াত।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে এতে নেতৃত্ব দেন মহানগরী মজলিশে শূরার সদস্যদের মধ্যে মোহাম্মদ আবু নকিব অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, আব্দুর রাকিব, রিমন তমাল ও ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান, তানভীর প্রমুখ। মিছিলটি মিরপুর স্টেডিয়ামের ২ নম্বর গেট থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সডক প্রদক্ষিণ করে প্রশিকা মোড়ে এসে অবরোধ করে।

জামায়াতে ইসলামী রামপুরা-বসুন্ধরা-বাড্ডা জোনের উদ্যোগে ভাটারায় এক বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি পালন করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও রামপুরা-বসুন্ধরা জোনের পরিচালক নাজিম উদ্দিন মোল্লা। অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বসুন্ধরা থানা আমীর মোঃ আবুল বাশার, ভাটারা থানা আমীর এডভোকেট আবু রোহান, সেক্রেটারি মোঃ আব্দুল্লাহ, ভাটারা থানা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এম এম রহমান প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. মো: ফখরুদ্দিন মানিকের নেতৃত্বে রাজধানীর মিরপুর-কাফরুল অঞ্চলে সড়ক অবরোধ কর্মসুচি পালন করা হয়। এসময় আরও ছিলেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সেক্রেটারি সালাউদ্দিন আহাম্মেদ, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও মিরপুর পূর্ব থানার আমীর; টুটুল, কাফরুল উত্তরের থানা আমীর রেজাউল করিম,কাফরুল থানার আমীর আনোয়ারুল করিম, ভাষানটেক থানা আমীর ডা. হাবিব, কাফরুল পশ্চিম থানা সেক্রেটারি আতিক হাসান, আশিক, আলী হাসান,মেহেদি, রেজাউল, নুরুল আমীন, আনিস,জাকির, পরশসহ অন্যান্য নেতা।

সকালে মগবাজার রেলগেট অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জামায়াতের কর্মীরা। জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকারের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিসে শূরা সদস্য আমিনুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান, এম আব্দুল্লাহ, আলাউদ্দিন,সাবেক ছাত্রনেতা কলিম উল্লাহ, শ্রমিক নেতা সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।

সকালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা মিরপুর পূরবী বাসস্টপে অবরোধ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির ঢাকা মহানগর উত্তর কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন। আরো উপস্থিত ছিলেন পল্লবী দক্ষিণ থানা আমীর পল্লবী উত্তর থানা আমীর সাইফুল কাদের, রূপনগর থানা আমীর আবু হানিফ, পল্লবী মধ্য থানা সেক্রেটারি জনাব যোবায়ের হোসাইন রাজন, রুপনগর থানা সেক্রেটারি মোশারর হোসেন ভূইয়া,যুবনেতা মো: হাসানুল বান্না চপল, ছাত্রনেতা সভাপতি মো: তাইয়ান, পল্লবী সভাপতি আঃ কাদেরসহ অন্য নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *