বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব হাসিনার ক্ষমতায় ভারতের হাতকে শক্তিশালী করবে না : দ্য টেলিগ্রাফ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ তার পরবর্তী সরকার নির্ধারণে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তবুও ভোট দেয়ার আগেই, অনুশীলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নগুলি দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে অস্থিতিশীল করার আশংকা সৃষ্টি হয়। সতর্ক না হলে ভারতও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের নির্বাচনে আরামদায়ক জয়ের দিকে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। এই জয় হবে বিজয়ীর জন্য বেশ ক্ষতির কারণ। সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করছে। ফলে নির্বাচনকে ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য গণভোটের চেয়ে কিছুটা কম করে দেখা হবে। একই সঙ্গে এটা হবে দেশের গণতন্ত্রের জন্য পরীক্ষা।

মিসেস ওয়াজেদ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং সাম্প্রতিক মাসগুলিতে তার শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ক্রমবর্ধমান মাত্রা ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশে অনেকেই ২০২৩ সালে একটি অর্থবহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক এখন এই নির্বাচনকে ‘এক ঘোড়ার দৌড়’ বলে মনে করছেন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বিএনপির ভোট বয়কটের সিদ্ধান্তের পক্ষে তার যুক্তি যাই হোক না কেন- তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে সহায়ক হবে না।

ফলে বাংলাদেশের সরকারই জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি জবাবদিহির মুখে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমনপীড়ন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস হামলা এবং একাধিক গ্রেপ্তার উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উজ্বলতাকে ম্লান করেছে। যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেছে।

ভারত ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সাথে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বিএনপি ইসলামপন্থি দল এবং নয়া দিল্লির সমালোচক গ্রুপগুলির সাথে সংযুক্ত রয়েছে। অতীতের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত সতর্কতা অবলম্বন করেছে, যাতে আওয়ামী লীগের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন অনুধাবন না করা যায়।

তবুও নয়া দিল্লি বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে এমন ধারণা ব্যাপকভাবে রয়ে গেছে। ক্ষমতায় থাকা দলের বিরুদ্ধে যদি জনপ্রিয়তা আরও কমে যায় তাতে ভারতও সেই প্রভাব অনুভব করবে। যেমনটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যত্র সাম্প্রতিক নির্বাচনে ঘটেছে।

এদিকে বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেড়েছে। তাই হাসিনার ক্ষমতায় ফিরে আসা এই অঞ্চলে তার প্রধান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ভারতের হাতকে শক্তিশালী করবে না।

যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে তার আনুষ্ঠানিক বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুভূতিকে সমর্থন করা উচিত নয় ।

যাইহোক, বাংলাদেশে রাজনৈতিক যেকোনো সম্ভাব্য অস্থিরতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে ভারতকে। ভারত তার বাংলাদেশ নীতির জন্য রেড লাইন নির্ধারণের সময় এসে গেছে।

সুত্র: সম্পাদকীয়, দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ – ইংরেজি থেকে অনূদিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *