বাংলাদেশের সমন্বিত অংশীদারত্বের প্রস্তাবে রাজি সৌদি আরব

অর্থনীতি বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

রাহীদ এজাজ : সৌদি আরবের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে সমন্বিত অংশীদারত্বে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। মূলত বিভিন্ন খাতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ধরে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে সৌদি আরব।

বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ প্রস্তাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান।

এর আগে সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে রাজনৈতিক সংলাপের পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান বলেছেন, ‘দুই দেশের অংশীদারত্ব কীভাবে বিস্তৃত করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা এই সম্পর্ককে আরও ব্যাপকতর অংশীদারত্বে নেওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দিষ্ট সময়সীমা ধরে সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। আমি তাঁর এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।’

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহানের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুল্ক খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেন। এ ছাড়া তাঁরা দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেন।

সমন্বিত অংশীদারত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে শামস এই প্রতিবেদককে বলেন, বিভিন্ন খাতকে পাঁচ থেকে দশ বছরে কোথায় নেওয়া যায়, সে বিষয়টি বাংলাদেশ সংলাপে বলেছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পর্ক নিবিড় করা, ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানো, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ও সফর বিনিময় নিয়মিত করার ওপর জোর দিয়েছে।

এদিকে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ছয়টি বিষয়ের কথা বলেছেন। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সৌদি যুবরাজের পরিবেশবান্ধব সৌদি এবং মধ্যপ্রাচ্যে অংশীদারত্ব, মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে সৌদি বিনিয়োগ, পর্যটন, হোটেল ও তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে শীর্ষস্থানীয় সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ, তৃতীয় দেশে চুক্তিতে চাষাবাদ এবং বাংলাদেশের কর্মীদের দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ।প্রসঙ্গ ৬৮ হাজার রোহিঙ্গা
রাজনৈতিক সংলাপে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি আরব গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার প্রসঙ্গটি তোলে সৌদি আরব। বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান আলোচনায় বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশের পদক্ষেপের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত। তবে ওই লোকজনকে পাসপোর্ট কিংবা কোন ধরনের পরিচয়পত্র দেওয়া হলে তাদের সৌদি আরবে থাকাটা বৈধ হয়। এতে এসব রোহিঙ্গা এবং তাদের সৌদি আরবে থাকাটা অনেক নির্বিঘ্ন হয়ে উঠবে।

সম্পর্ক সম্প্রসারণে ঐকমত্য
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান বলেছেন, তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিয়াদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন ফয়সল বিন ফারহান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের সরবরাহ প্রসঙ্গ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিক।

চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব গর্বিত। সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুই দেশের ভবিষ্যৎ রূপকল্প নিয়ে আমাদের মধ্যে সাযুজ্য রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের ২৫ লাখ কর্মী আমাদের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। সৌদি আরবের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমরা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর আরও ব্যাপকতর অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। বাংলাদেশে অবস্থিত সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও আমরা বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছি। আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।’

দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছি। এর মধ্যেই ২০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। শিগগিরই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’হজযাত্রীদের হয়রানি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে এবার যাঁরা হজে যাবেন, তাঁরা যেন এ দেশ থেকেই ভিসার অনুমোদন পান, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুখের বিষয় হচ্ছে, এবার যাঁরা হজে যাবেন, তাঁদের শতভাগেরই ভিসার অনুমোদন হবে এখানে, যাতে কোনো হয়রানি না হয়।

২৪ ঘণ্টার কম সময়ের এই সফর শেষে গতকাল দুপুরে ঢাকা ছেড়ে যান সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *