বরখাস্ত হয়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভেরম্যান

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

অবশেষে বরখাস্ত হয়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভেরম্যান। বহু বিতর্কের জন্ম দিয়ে বিদায় নিলেন তিনি। তবে এটি তার প্রথম নয়, আগেও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে লিজ ট্রাসের সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।

নিজ দেশের পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ফিলিস্তিনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শনের জন্য দোষারোপ করার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আজ সোমবার তাকে বরখাস্ত করেছেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বড়ধরনের বিক্ষোভ হয় ১১ নভেম্বর শনিবার। এতে ৮ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন। অংশ গ্রহনকারী অনেকে বলেছেন প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে এই শনিবার ছিল আর্মিস্টিক ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মরণ দিবস। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রধানকে বিক্ষোভ বাতিল করতে বলা হয়েছিল। শনিবার এই বিক্ষোভ যাতে না হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মার্ক রাওলি সেই অনুরোধ নাকচ করে দেন। তিনি বলেছেন, বিক্ষোভে বড় ধরনের সহিংসতা হওয়ার কোনো ইঙ্গিত বা আশঙ্কা নেই। তাই সরকারি অনুরোধে এ বিক্ষোভ বন্ধ করার সুযোগ নেই।

একই দিনে বিক্ষোভ ও স্মরণ অনুষ্ঠানের শৃংখলা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। সেনোটাফ স্মৃতিসৌধে আয়োজিত সৈনিকদের স্মরণ দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। সপ্তাহান্তে কয়েক হাজারেরও বেশি অফিসার রাজধানীর রাস্তায় দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বিক্ষোভকে ‘বিদ্বেষমূলক মিছিল’ বলার পর জনমনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

অনেকে বলছেন, ব্র্যাভারম্যানের মন্তব্য কট্টর ডানপন্থিদের আকৃষ্ট করেছে এবং ফিলিস্তিনি সমর্থকদের মোকাবেলা করার জন্য একটি অজুহাত খুঁজে পেয়েছে। সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে বরখাস্তের দাবি তুলেন মানবতাবাদী জনতা।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফ বলেছেন, ব্রিটেনে আইন প্রয়োগের তদারকি করা ব্র্যাভারম্যানকে এখন পদত্যাগ করতে হবে। ইউসুফ এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক ফার-রাইট গ্রুপকে উসকে দেওয়া হয়েছে।

সেদিন লন্ডন সময় দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে থেকেই হাইড পার্কে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী লোকজন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী সহ সর্বস্তরের মানুষ। তবে নতুন প্রজন্মের মানুষের সংখ্যা ছিল বিপুল ও ব্যাপক।

বিক্ষোভ মিছিলটি ছিল দীর্ঘ প্রায় ৩ মাইল (৫ কিলোমিটার) লম্বা। হাইড পার্ক থেকে সেনোটাফ মেমোরিয়াল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাউনিং স্ট্রিট অফিস হয়ে মার্কিন দূতাবাসের সামন পর্যন্ত। লন্ডনের অক্সফোর্ড সার্কাস ও পিকাডিলি সার্কাসেও তখন জনতার ঢল। সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। পার্ক লেন থেকে পার্লামেন্ট স্কয়ার পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য।

ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ফ্রি প্যালেস্টাইন সহ বিভিন্ন মন্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদী জনতা বিক্ষোভে অংশ গ্রহন করেন। ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো, গণহত্যা বন্ধ করো, বোমাবর্ষণ বন্ধ করো’ লেখা ব্যনার ছিল সর্বত্র। বাস-ট্রেন সহ রাজধানী লন্ডনের সকল যানবাহনে যাত্রীদের হাতে হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার।

‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই- স্বাধীনতা আনবো’, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো- করতে হবে’। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে লন্ডনের রাজপথ জনপদ। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবাদের নতুন ইতিহাস।

বিশাল এই আয়োজনকে চমৎকারভাবে শান্তিপূর্ণ ও শৃংখলাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) ও ন্যাশনাল মার্চ ফর প্যালেস্টাইন সহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ভলেন্টিয়ার ও বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীগণ।

ফিলিস্তিনের গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে বর্বর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজার সাধারণ মানুষের উপর ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলার বিরুদ্ধে প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভ করছেন যুক্তরাজ্যের মানুষ। গোটা দেশজুড়ে শহরে শহরে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন। তবে ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে এই শনিবারের বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড়।

গ্রেট বৃটেনের প্রায় সকল প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন মানবতাবাদী মানুষেরা। তারা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলকে মার্কিন সহায়তা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে নির্মম অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অনেকে।

একজন ব্রিটিশ বিক্ষোভকারী বলেন, আমরা এখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি৷ ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার, অস্তিত্বের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আরেকজন বললেন, বিশ্বের দরবারে ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ঘোষণা করার দাবি জানাতে এখানে এসেছি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ হিসেবে সকল শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য, ৪৩ বছর বয়স্কা সুয়েলা ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তার মা-বাবা যথাক্রমে কেনিয়া ও মরিশাস থেকেে এদেশে অভিবাসন করেছিলেন। সমালোচকরা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন প্রয়োগকারী, অভিবাসন এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য দায়ী। গত সপ্তাহে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে মিসেস ব্র্যাভারম্যানকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *