সাঈদ চেৌধুরী
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় হচ্ছে তাদের চূড়ান্ত সার্টিফিকেট বা প্রশংসাপত্র। কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের দায়ে বহু শিক্ষার্থীর ডিগ্রি আটকে রেখেছে হার্ভার্ড, শিকাগো-সহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক জায়গায় প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার, বহিষ্কার, স্থগিতাদেশ এবং অন্যান্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপের সম্মুখীন হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার স্বাধীনতা ও অধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্ক চলছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থীর ডিগ্রির ফলাফল আটকে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড করপোরেশন গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব শিক্ষার্থীর ডিগ্রি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে চার বছর স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করে কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রির ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন আসমির আশরার সাফি। ২৩ বছর বয়সী সাফি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করেছেন। তিনি চার বছর ধরে সামাজিক অধ্যয়ন, জাতিসত্তা, অভিবাসন ও অধিকার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। সাফি বলেছেন, ‘আমি অক্সফোর্ডের রোডস বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী। হার্ভার্ডে এক বছর ধরে ডিগ্রি স্থগিত থাকার কারণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমি আমার প্রোগ্রামের সব প্রাতিষ্ঠানিক শর্ত পূরণ করেছি। আমার ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছুই করেছি।’
সাফির মতো হার্ভার্ডের ডিগ্রি পাচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শ্রদ্ধা জোশি। হার্ভার্ডে সাফির মতো একই বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। আল–জাজিরাকে জোশি বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে আপিল আবেদন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করব কি না, তা নিয়ে দোলাচলে আছি। হার্ভার্ড-ইউকে ফেলোশিপের আওতায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিকল্পনা ছিল আমার। তবে ডিগ্রি না পাওয়াকে কেন্দ্র করে সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রের ডিগ্রী আটকে রাখা হয়েছে। একটি প্রতিবাদ ক্যাম্পেইন তদন্তের জন্য তা মুলতুবি রাখা হয়েছে৷ শিক্ষার্থিরা বলেছন, তারা আপিল প্রক্রিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আছেন। তারা ঋণে জর্জরিত হবেন এবং দেখানোর জন্য কোন ডিগ্রি সার্টিফিকেট থাকবে না।
একজন বলেছন, আমি বাক স্বাধীনতা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলে আমাকে চাপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে। এটি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার সাথে অতুলনীয়। বলেছেন ডেভরন বার্কস, ভ্যান্ডারবিল্টের একজন ছাত্র যিনি ক্যাম্পাস ভবন দখলের পরে গ্রেপ্তার এবং বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তার শেষ কথা “আমি এটির জন্য অনুশোচনা করি না এবং আমি মনে করি না যে আমি কখনই অনুশোচনাকরব।” – ইউএস টুডে নিউজ এ আল জাজিরা