ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যেতে চাপ দেয়া যাবে না : ব্লিঙ্কেন

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসনের বিষয়ে ইসরায়েলি মন্ত্রীদের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে যেতে চাপ দেয়া যাবে না এবং শর্তসাপেক্ষে তাদের বাড়ি ফিরতে দিতে হবে। এছাড়া দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরা ব্যুরো চিফের বড় ছেলে সাংবাদিক হামজা আল দাউদের মৃত্যুকে “ অকল্পনীয় পরিণতি” বলে উল্লেখ করেছেন মি. ব্লিঙ্কন।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে রবিবার কাতারে গিয়ে একথা বলেছেন। সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করার প্রয়োজনীয়তা, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, গাজা উপত্যকার সমস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত এবং টেকসই মানবিক সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার দক্ষিণ বৈরুতে সন্দেহভাজন ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সালেহ আল আরোরীসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন হামাসের সেনা কমান্ডার ও চারজন অন্যান্য সদস্য। কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরোরীর হত্যাকাণ্ড “এই জটিল প্রক্রিয়াতে” প্রভাবিত করেছে।

লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ আরোরীর হত্যাকাণ্ডকে “ইসরায়েলি আগ্রাসন” অভিহিত করে বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ড শাস্তির বাইরে যাবে না। এরপর শনিবার আরোরী হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোঁড়ে। এছাড়া ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগর ও ইসরাইলে ১০০-রও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে রোববার দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানিকে সাথে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপক অংশজুড়ে নিরাপত্তা হুমকিও তৈরি হতে পারে।

যুদ্ধ শুরুর পর চতুর্থ দফায় মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন ব্লিঙ্কেন। তিনি কাতার যাওয়ার আগে জর্ডান, তুরস্ক ও গ্রিস সফর করেন। এরপর সৌদি আরব, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন।

এদিকে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যখন কাতারে ছিলেন, তখন উত্তর গাজায় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাবালিয়া এলাকায় একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতর অনেক নারী ও শিশুদের মরদেহ পড়ে রয়েছে।

এরই মধ্যে গাজার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসা সুবিধাসহ এমনকি হাসপাতালেও এখন আর নিরাপদ নয়। গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২২ হাজার ৮৩৫ বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। এদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।

ইসরায়েলের ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী ব্যাজেলেল স্মটরিচ ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগ করার আহবান জানিয়েছে। যাতে ইসরায়েলিরা “মরুভূমিকে সাজিয়ে তুলতে পারে।”

জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন ভীর সমস্যার ‘সমাধান’ হিসেবে এ সপ্তাহে ‘গাজার অধিবাসীদের অভিবাসনে উৎসাহিত’ করতে একটি আহবান জানিয়েছে।

ইসরায়েলিরা গাজায় উচ্ছেদের আদেশ দেয়ার পর তিনটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা গ্রুপ মধ্য গাজার আল আকসা হাসপাতাল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক (ও সি এইচ এ) র সমন্বয়ক কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, “শরণার্থী প্রত্যাবাসনের এই ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”

জেম্মা কোনেল বলেছেন, হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত পরিপূর্ণ, হাসপাতালগুলো সক্ষমতার বাইরে গিয়ে তারা কিভাবে ক্রমবর্ধমান হতাহতের চিকিৎসা দিবে এটা এখন বোঝার বিষয়”।

সুত্র: কাতার নিউজ ও বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *