ফিংগার প্রিন্ট রহস্য : পবিত্র কোরআনের অলৌকিকত্ব

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

আনসারিং ক্রিশ্চিয়ানিটি ডটকম থেকে অনুবাদ ও বিশ্লেষণঃ নিজাম উদ্দীন সালেহ

ফিংগারপ্রিন্ট শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। ফিংগারপ্রিন্ট অর্থ অঙ্গুলীর ছাপ (টিপসহি)। দলিল দস্তাবেজ, পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে এই অঙ্গুলীর ছাপ ব্যবহার হয় একজন মানুষের স্বকীয় পরিচয় প্রদর্শন বা নির্ধারনের জন্য।

ফিংগারপ্রিন্ট প্রায়শঃ অঙ্গুলীর অগ্রভাগ শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ফিংগারটিপ শব্দের আরেকটি ব্যবহার রয়েছে- তা হচ্ছে আমরা কথায় কথায় বলি, এসব আমার নখাগ্রে বা অঙ্গুলীর অগ্রভাগে। অর্থাৎ এসব বিষয় আমি সম্যকরূপে অবগত। যেকোন মুহূর্তে এসব তথ্য বা জ্ঞান প্রকাশ করতে সক্ষম।

ইংরেজী অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে ফিংগারটিপ- এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘হ্যাভ সামথিং এট ইওর ফিংগারটিপস’- এর অর্থ হচ্ছে ‘টু হ্যাভ দ্য ইনফরমেশন, নলেজ’ ইত্যাদি। এখানে কোন কিছু ফিংগারটিপ বা অঙ্গুলীর অগ্রভাগে থাকার অর্থ হচ্ছে সহজেই জানা বা অবগত। তথ্য বা জ্ঞানের অবস্থান বা ভান্ডার হিসেবে ফিংগারটিপ বা অঙ্গুলীর অগ্রভাগকে বুঝানো হয়েছে। এভাবে ফিংগারপ্রিন্ট বা ফিঙ্গারটিপ মানুষের পরিচিতি ও জ্ঞানের একটি কেন্দ্রস্থল হিসেবে উল্লেখিত হয়ে আসছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করবো না? (সূরা আল কিয়ামাহ: আয়াত-৩) আমি তার অঙ্গুলীগুলোর অগ্রভাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম। (সূরা আল কিয়ামাহ: আয়াত-৪)

উপরের ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, বালা কাদিরিনা আ’লা আন নুসাউইয়া বানানাহু। এখানে ‘নুসাউইয়া বানানাহু’- এর অর্থ হচ্ছে ‘অঙ্গুলীর অগ্রভাগ যথাযথভাবে সন্নিবেশিতকরণ’। পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহ পাক ফিংগারপ্রিন্ট অর্থাৎ অঙ্গুলীর অগ্রভাগ তথা ছাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মহান আল্লাহ শরীরের অন্যান্য অংশের কথা না বলে অঙ্গুলীর অগ্রভাগ অর্থাৎ ফিংগারটিপের (ফিংগারপ্রিন্ট) কথা বলেছেন। এর পেছনেও রহস্য লুক্কায়িত আছে।

কী সেই রহস্য? রহস্য হচ্ছে, দুনিয়ার শত শত কোটি মানুষ রয়েছেন কিন্তু একজনের ফিংগারপ্রিন্ট অর্থাৎ অঙ্গুলীর ছাপের সাথে অপর জনের অঙ্গুলীর ছাপ মিলবে না। এমন কি যমজ সন্তানের অঙ্গুলীর ছাপও ভিন্ন। সর্বজ্ঞানী আল্লাহ পাক তার বিজ্ঞানময় পবিত্র গ্রন্থে এই বৈজ্ঞানিক দিকের প্রতি যে ইংগীত দিয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই।

মার্কিন অধ্যাপক ডঃ মাবেল রডরিগস বলেন, মূলত: ৩ টি মৌলিক ফিংগারপ্রিন্ট প্যাটার্ন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, লুপস্ (বক্ররেখা), আর্চেজ (তোরাণাকৃতি ও হোরলস্ (বৃত্তাকৃতি) । এগুলোকে মাইনুশিয়া পয়েন্টও বলা হয়। এধরনের ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন মাইনুশিয়া পয়েন্ট রয়েছে এবং দু’জন লোকের ফিংগারপ্রিন্টে কখনো একই সংখ্যক ও একই অবস্থানে একই ধরনের মাইনুশিয়া পয়েন্ট পাওয়া যাবে না। এগুলো জন্মের পূর্বে জেনেটিক্যালী অর্থাৎ জিনগতভাবে গঠিত হয়ে থাকে। ত্বকের নীচে ডার্মাল প্যাপিলি নামক একটি লেয়ার বা স্তরে এগুলো তৈরি হয় যা একজন মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত থাকে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক আরবী ‘বানানাহু’ শব্দের মাধ্যমে ফিংগারপ্রিন্ট ‘অঙ্গুলীর অগ্রভাগ’ কিংবা ফিংগারপ্রিন্ট (অঙ্গুলীর ছাপ) বুঝিয়েছেন। মানবদেহের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ন রহস্যময় অংশ হিসেবে ফিংগারপ্রিন্টকে নির্দেশ করেছেন এবং বলেছেন যে, তিনি এই জটিল, রহস্যময় এবং প্রতিটি মানুষকে হাশরের দিন আলাদাভাবে চিহ্নিত, শনাক্ত ও নির্ধারণকারী প্রতিটি বানানাহু বা ফিংগারপ্রিন্ট (ফিংগারটিপ) সহ প্রত্যেক মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি বা উপস্থাপন করতে সক্ষম।

তাই বলা যায়, ফিংগারটিপস্ তথা ফিংগারপ্রিন্ট অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি জটিল কম্বিনেশন অর্থাৎ সমন্বয় বা সংমিশ্রন, যেখানে এগুলোর আকৃতি, অবস্থান এবং সংখ্যা ও বিভিন্ন বা বৈচিত্র্যময়। তাই নিশ্চিতভাবে ‘লাইটপ্রিন্ট সেন্সরস’-এর মাধ্যমে ত্বকের নীচে ফিংগারপ্রিন্টের গোড়ার ছবি ধারন করা সম্ভব। এর ফলে একজন মানুষের অঙ্গুলীর ছাপ সম্পর্কে সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ ডাটা পাওয়া সম্ভব।

কিন্তু প্রচলিত ‘ট্রাডিশনাল অপটিক্যাল ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সরস’ শুধু অঙ্গুলীর উপরিভাগের ডাটা বা উপাত্ত সংগ্রহ করতে সক্ষম। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে অপরাধী শনাক্তকরন এবং দলিলপত্রে স্বীকৃতিমূলক ফিংগারপ্রিন্টের ক্ষেত্রে লাইটপ্রিন্ট সলিউশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ফিংগারপ্রিন্টের এই রহস্য উনবিংশ শতাব্দির শেষের দিকে অর্থাৎ মাত্র দেড়শ বছর আগে উদঘাটিত আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু পবিত্র কোরআনে সাড়ে ১৪০০ বছর আগে ফিংগারপ্রিন্টের এই অতুলনীয়তা বৈচিত্র্যময়তা ও রহস্যের ব্যাপারে ইংগিত করা হয়েছে।

ফিংগারপ্রিন্ট বিশ্বের বিভিন্ন অফিস আদালতে এখনো একটি নির্ভরযোগ্য সাক্ষী বা প্রমান হিসেবে পরিগনিত। আর এটা সম্ভব হচ্ছে ফিংগারপ্রিন্ট অর্থাৎ অঙ্গুলীর অগ্রভাগের ছাপের অতুলনীয় ও বৈচিত্র্যময়তা তথা ভিন্নতার কারনে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাই হাশরের দিন প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে সুনির্দিষ্ট অবয়বে পুনরায় উত্থিত করার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এই সুক্ষ্ম, জটিল ও রহস্যময় ফিংগারপ্রিন্টের প্রতি ইংগিত করেছেন।

* নিজাম উদ্দীন সালেহ
কবি ও সাংবাদিক, সহকারী সম্পাদক দৈনিক জালালাবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *