হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী সিলেট থেকে:
সিলেটের জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে শিক্ষার উন্নয়নে ‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী’ ট্রাস্ট স্কুল ও মাদ্রাসার পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর জকিগঞ্জের পরচকস্থ মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম দিনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৪৭ জন শিক্ষার্থী উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষে সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ব্যাগ, কলম, খাবার এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসাহের সঞ্চার করে।
চলতি মাসের ১৫ ও ১৭ তারিখে আয়োজিত পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার ১শত শিক্ষার্থী থেকে বাছাই করে তিনটি গ্রেডে ৫০০টি বৃত্তি প্রদান করা হবে। বৃত্তির অর্থ হিসেবে মেধা গ্রেডে আড়াই হাজার টাকা, প্রথম গ্রেডে দুই হাজার টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে দেঢ় হাজার টাকা এককালীন প্রদান করা হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থী সনদপত্রও পাবে। বৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠান আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে।
এই কার্যক্রমের তথ্য দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গতকাল সিলেটের জকিগঞ্জে মৌলভী ছাইর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে ট্রাস্টের সচিব মোঃ শাব্বির আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’ এবং বৃত্তি কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য, সামাজিক ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, “এই বৃত্তি কার্যক্রম মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে, তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করবে এবং তাদের উচ্চ শিক্ষার অভিযাত্রাকে আরও সুদৃঢ় করবে। পাশাপাশি, এটি এলাকার শিক্ষার প্রসারে ট্রাস্টকে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এ.টি.এম সেলিম চৌধুরী, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, এবং জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা বলেন, শিক্ষার প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানবিক সেবার মাধ্যমে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সর্বসাধারণের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই উদ্যোগ এলাকাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং একটি সমৃদ্ধ ও মানবিক সমাজ গঠনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা ট্রাস্টের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এবং অবদানের কথা ইতিবাচকভাবে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। এতে ট্রাস্টের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল ও কার্যকর হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’ গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সর্বসাধারণের কল্যাণ এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে মানবতার ফেরিওয়ালা, লন্ডন প্রবাসী শিক্ষানুরাগী ও মানবপ্রেমী ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’। এই ট্রাস্ট শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করছে। এর দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রম শুধু জকিগঞ্জ-কানাইঘাট নয়, পুরো দেশের জন্য এক অনন্য মডেল হয়ে উঠতে পারে। মানবিক উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণে এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থান করে নেবে। নিঃসন্দেহে এই ট্রাস্ট জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের জনগণের জন্য এক মহৎ আশীর্বাদ।
‘ফাহিম আল ইসহাক চৌধুরী ট্রাস্ট’ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারী শিক্ষার উন্নয়নে একটি আধুনিক ও মানসম্পন্ন কলেজ নির্মাণ, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে একটি উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন, দরিদ্র ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষাসামগ্রী প্রদান এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা, এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধি, ট্রাস্টের সুদৃঢ় টেকসইতা নিশ্চিত করতে প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি টাকা একটি স্থায়ী ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হবে। পর্যায়ক্রমে এই তহবিলকে ১০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে, যা ট্রাস্টের কার্যক্রমের অর্থায়ন এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
ট্রাস্টের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও তদারকির জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ১৫ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ড ট্রাস্টের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করছে।