বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং জন্মনিবন্ধন থাকলে ভোটার হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। যেসব বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকের বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং জন্মনিবন্ধন নাই, তাদেরকে নো ভিসা স্টিকারযুক্ত বিদেশী পাসপোর্ট এবং পিতা বা মাতার বাংলাদেশী পাসপোর্ট অথবা জন্মবিন্ধনের মাধ্যমে ভোটার হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। প্রবাসীদের সহজ শর্তে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিলে ইতিহাস সৃষ্টি হবে। ‘প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকে’র সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানানো হয়েছে।
ভিডিও সংযুক্ত : https://www.facebook.com/reel/1701638360510325
সোমবার (৯ অক্টোবর ২০২৫) সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ময়দাগ্রীলে প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় সকলকে স্বাগত জানান পরিষদের আহ্বায়ক জজ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন।
সদস্য সচিব ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদারের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিষদের অন্যতম সদস্য সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান। আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন যুগ্ন আহবায়ক ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, যুগ্ন আহবায়ক কেএম আবু তাহের চৌধুরী, যুগ্ন আহবায়ক ব্যারিস্টার আতাউর রহমান ও যুগ্ন আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম শাহীন।
অনুষ্ঠানে সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার খালেদ নুর, আব্দুল মুনিম ক্যারল, গোলাম মর্তুজা, তাওহীদুল করিম মুজাহিদ, বদরুজ্জামান বাবুল, ডা: মোজাম্মেল হুসাইন, শাহরিয়ার আলম শিপার, সেলিম এমদাদ প্রমুখ। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের স্বল্প সময়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপনারা এসেছেন, এজন্য প্রবসাী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক মোবরকবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের মাধ্যমে একটি খুশির সংবাদ প্রবাসী বাংলাদেশীদের জানানোর জন্য আজকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের উদ্বেগের কিছু জায়গাও রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের আনন্দের বার্তার পাশাপাশি আপনাদের মাধ্যমে আমরা সরকার ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নজরে উদ্বেগের বিষয়টি আনতে চাই। উদ্বেগের জায়গাগুলো উল্লেখ করার আগে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা ছাড়া এই উদ্যোগ সম্ভব ছিল না।
অনুষ্ঠানে আরো বলা হয়, সম্প্রতি লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাথে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের প্রসঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। হাইকমিশনে আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে পেশ করে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এরপরই হাইকমিশন থেকে নির্বাচন কমিশনের সাথে আমাদের একটি জুম মিটিংয়ের আয়োজন করা হয় ৯ সেপ্টেম্বর। বৈঠকেও প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকের বক্তব্য এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পোষ্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। আরো জানানো হয়, ১ নভেম্বরের থেকে প্রবাসীদের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য অ্যাপস চালু হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এটি হচ্ছে সকল প্রবাসীর জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। ভোটাধিকারের জন্য প্রবাসীরা দীর্ঘদিন থেকেই লড়াই ও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীরা অন্তত পোষ্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রবাসী ভাই-বোনদের আমরা আনন্দের সাথে আহবান জানাচ্ছি, সবাই যেন ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন এবং মূল্যবান ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনায় ভোটের মাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন। অ্যাপস চালু হলে স্ব-উদ্যোগে যেন সবাই তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন, সেই অনুরোধ জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির প্রাণ। প্রবাসী রেমিটেন্সকে বলা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অক্সিজেন। সুতরাং দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটও যেন সরকার গঠনে মূল্যবান মতামত দিতে পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সার্বিক সহায়তা কামনা করে বলা হয়, প্রবাসীদের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে আপনাদের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের প্রবাসী ভাই ও বোনেরা এ বিষয়ে এখনো যথেষ্ট সচেতন নন। আপনাদের প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করবেন, এটা আমরা বিনীতভাবে আপনাদের প্রতি অনুরোধ রাখছি।
প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকের পক্ষ থেকে কিছু উদ্বেগের কথা তুলে ধরে গণমাধ্যম কর্মিদের বলা হয়, আপনাদের মাধ্যমে আমরা নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দৃষ্টি আকষণ করতে চাই। পাশাপাশি প্রবাসী ভাই-বোনদেরও এই বিষয়ে সোচ্ছার হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। আমাদের উদ্বেগের জায়গাগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ভোটার তালিভুক্ত হতে জারি করা পরিপত্র এবং তাদের দেওয়া লিঙ্কে যেসব শর্তযুক্ত করা হয়েছে, সে গুলো পুরণ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। এই শর্ত গুলো বহাল থাকলে অধিকাংশ প্রবাসী ইচ্ছা থাকলেও ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। হাইকমিশনের সাথে বৈঠকের সময় এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠকেও বিষয় গুলো উত্থাপন করা হয়েছে। তারা রোহিঙ্গা ইস্যু টেনে বলছেন, শর্ত গুলো শিথিল করা হলে অন্য দেশের লোকেরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, অন্য দেশের দুইএকজনের অপচেষ্টা রোধ করার দায়িত্ব সরকারের। এ জন্য দেড় কোটি প্রবাসীর ভোগান্তি হবে কেন!
ভোটার তালিভুক্ত হতে যেসব জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে তা বিশ্লেষন করে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পরিপত্র ও লিঙ্কে যদি আপনারা চোখ রাখেন, তখন দেখতে পাবেন কতগুলো অযাচিত শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীরা ভোটার হতে চাইলে এনআইডি, পাসপোর্ট এবং জন্মনিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উল্লেখ করে বলা হয়েছে পিতা-মাতার এনআইডি, পাসপোর্ট, নিকাহনামা থাকা লাগবে। পিতা-মাতা বেঁচে না থাকলে বাংলাদেশী মৃত্যুসনদ লাগবে। এখানে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, এই শর্তগুলোর কারণে বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশ গুলোতে যেসব বাংলাদেশীরা বসবাস করছেন তারা সহজে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। কারণ, এনাআইডি এখনো সবাই পায়নি। এনআইডির জন্য আবেদন করলে বছর পার হয়ে যায়। এছাড়া যাদের সন্তান যুক্তরাজ্য, ইউরোপ বা আমেরিকার মত দেশে জন্ম নিয়েছে এবং বড় হয়েছে তাদের অনেকেরই দেশের জন্মসনদ নাই। অনেকের বাংলাদেশী পাসপোর্ট নাই। তবে পিতা-মাতার পাসপোর্টের মাধ্যমে নো-ভিসা যুক্ত করা হয়েছে। এই শর্ত গুলো অনেকের ক্ষেত্রেই ভোটার তালিকাভুক্তিতে জঠিলতা তৈরি হবে।
জটিলতা নিরসন কল্পে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকের পক্ষ থেকে মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা আবারো সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে জোর দাবী জানিয়ে বলা হয়, যাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং জন্মনিবন্ধন রয়েছে তাদেরকে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। আমরা জানি এনআইডি মানেই ভোটার তালিকায় নাম লেখানো। কিন্তু অনেক প্রবাসী রয়েছেন, যাদের এনআইডি নাই। অনেকে এনআইডি’র জন্য আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষ করছেন। এমনকি বছর পার হয়ে গেছে অনেকের। কিন্তু এনআইডি পাচ্ছেন না। এখন এই অল্প সময়ে এনআইডি পাওয়ার সুযোগও নাই। তাহলে এসব প্রবাসী ভাইরা কি ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন? অন্তত এই বছরের জন্য হলেও শুধুমাত্র পাসপোর্ট এবং জন্মনিবন্ধন দিয়ে ভোটার তালিকাভুক্ত করার সুযোগ আমরা চাই।
অনুষ্ঠানে আরো দাবী করা হয়, যেসব বাংলাদেশীদের সন্তান যুক্তরাজ্য, ইউরোপ বা আমেরিকায় জন্ম নিয়েছেন, তাদেরকে নো-ভিসার স্টিকার যুক্ত বিদেশী পাসপোর্ট এবং পিতা বা মাতার পাসপোর্টে বা জন্মবিন্ধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এনআইডি’র জটিল শর্তে যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়, তাহলে বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ, প্রবাসে জন্ম নেওয়া অনেক তরুণের এনআইডি নাই। এমন কি অনেকের বাংলাদেশী পাসপোর্টও নাই। বিদেশী পাসপোর্টে নো-ভিসা যুক্ত করা হয়েছে পিতা-মাতার পাসপোর্ট এবং জন্মসনদের সূত্রে। সুতরাং এই তরুণদের আমরা বাংলাদেশে নাগরিক হিসাবে ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে দিতে পারি না।