বিভিন্ন মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং একক প্রার্থী থাকলে ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাবসহ গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধনী ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, নির্বাচনে অনিয়ম ধরা পড়লে, অর্থাৎ কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়ম শনাক্ত হলেও পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে তারা পুলিশের মতোই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসম্পর্কিত যেসব বিধান ছিল, সেগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সংজ্ঞা, সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারবেন না, এটিও যুক্ত করা হয়েছে।
পলাতক আসামি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘পলাতক হচ্ছে, আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করে। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না। আদালত পলাতক ঘোষণা করে। বিচার চলাকালীন সময়ে পলাতক হয়।’
প্রার্থীদের হলফনামায় এফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎসের বিবরণ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি, বিবরণ নির্বাচন কমিশনে দিতে হবে। এটা আমরা ওয়েবসাইটে পাবলিক করে দেব, এতে সবাই জানবে কার কী সম্পত্তি।
জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আরপিওতে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের প্রতীকে ভোট করা যেত। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনী জোট হলে, জোটের অংশ হলেও দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া (পরিষ্কার ধারণা) পায়— উনি কোন দলের।’
এবার ভোটে প্রার্থীদের জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। ২০১৪ সালের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, “‘না ভোট’-এর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে ‘না ভোট’ হবে। ২০১৪ সালের ভুয়া সাজানো নির্বাচন যেন না হয়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্তদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর আগে, আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরপিও সংশোধনীর খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সরকার খসড়ায় অনুমোদন দেওয়ার ফলে এখন অধ্যাদেশ আকারে আইনটি জারি করবেন রাষ্ট্রপতি। প্রস্তাবিত আরপিওর ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কোনো আসনে যদি একক প্রার্থী থাকেন, তাহলে সেই প্রার্থী ও ‘না ভোট’-এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
যদি ‘না ভোট’-এর সংখ্যা প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ওই আসনে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরবর্তী নির্বাচনে আর ‘না ভোট’ থাকবে না। কিন্তু, আবারও একক প্রার্থী থাকলে, তখন তাকেই নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। প্রস্তাবিত আইনের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, বা ব্যালট বাক্স অবৈধভাবে সরিয়ে নেওয়া, ধ্বংস, হারানো বা এমনভাবে বিকৃত করা হয় যে ফলাফল নির্ধারণ সম্ভব নয়— সে সব ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবেন।
বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা না নিয়ে ভোট বন্ধ করতে পারতেন না। ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ওই ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছিল। ইউএনবি

