পজিটিভ সমাজ গঠনে আমাদের করণীয় ।। আবু সালেহ ইয়াহইয়া

ধর্ম ও দর্শন প্রবন্ধ-কলাম
শেয়ার করুন

কাজ, কথা কিংবা আচরণ দ্বারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মানুষকে আঘাত দেওয়া হয়ে থাকে। কারো জীবনকে কষ্টকর করে তুলা হয়। কিন্তু একজন মুমিনের জন্য এ ধরনের কাজ কখনো শোভনীয় নয়। একজন মুমিন হিসেবে আমাদের অন্যতম একটি দায়িত্ব হলো অন্য মুমিন ভাইয়ের জীবনকে কোনভাবে কঠিন করা নয়, বরং সাধ্যমতো সহজ করার চেষ্টা করা। এটি একটি সুন্দর ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত।

এ ধরনের আচরণ (রোগ) তিন শ্রেণীর মানুষের মাঝে দেখা যায়:

এক. যার নিজের কোন ব্যক্তিত্ব নেই, তাই অন্যের ব্যক্তিসত্তায় আঘাত করতে সে কোন দ্বিধা করে না। বরং হয়ত সাময়িক কম্ফোর্ট অনুভব করে।

দুই. যার অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতায় ভরপুর। ফলে অন্যের ভাল কিছু সে পছন্দ করে না। এরা নিজের দুর্বলতা ঢাকতে অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো ও তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করে।

তিন. পরকালীন জীবন সম্পর্কে উদাসীনতা। পরকালে হয়থ বিশ্বাস আছে, কিন্তু জীবন পরকালমুখী নয়।

সামাজিক এসব রোগ থেকে উত্তরণের উপায়:

প্রথমত: একজন মুমিন হিসেবে সমাজে এবং পৃথিবীতে নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। দায়িত্ববান ব্যক্তি সব সময় নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়েই ব্যস্ত ও সচেতন থাকেন। অন্যের দুর্বলতা খোঁজে বেড়ানোতে সময় ব্যয় না করে নিজের দুর্বলতা দুর করার চেষ্টা করেন প্রতিনিয়ত।

দ্বিতীয়ত: অর্থ ও তাফসীরসহ নিয়মিত কোরআন-হাদিস-সিরাতে রাসূল (স) অধ্যয়ন করা। মুমিনের আত্মার খোরাক হচ্ছে কোরআন এবং হাদিস। বিশেষ করে সুরা আল-হুজরাত এবং সুরা আন-নূর খুব ভাল করে অধ্যয়ন করা। যারাই সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির সাথে জড়িত থাকে, খেয়াল করলে দেখবেন এদের বেশিরভাগেরই কোরআন-হাদিসের সাথে সম্পর্ক নিয়মিত নয়। মাঝে মাঝে হয়ত পড়ে, তবে আমল করার উদ্দেশ্য নিয়ে অধ্যয়ন করে না।

তৃতীয়ত: সত্যবাদী ও পজিটিভ চিন্তা সম্পন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন (Good Companion) সঙ্গী হওয়া। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ অর্থাৎ তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গী হও ( সুরা তাওবা: ১১৯)।

বুখারি শরিফের ২১০ নাম্বার হাদিসে বর্ণিত: “মানুষ তার বন্ধুর দ্বারাই প্রভাবিত হয়, তাই সৎ ও ধার্মিক বন্ধুর সঙ্গ গ্রহণ করা উচিত, কারণ পৃথিবীতে খারাপ চরিত্রের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে পরকালে লজ্জা ও অনুশোচনার শেষ থাকবে না।”

আবূ মূসা আল আশ’আরী (রা.) ও আবূ জার আল গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন-‘একাকী থাকার চেয়ে সৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকা উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদিসে রাসূল (স) বলেন: الرجل على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل[1]، رواه أبو داود والترمذي بإسناد صحيح অর্থাৎ ব্যক্তি তার বন্ধুর আদর্শ বা দ্বীনের উপরেই থাকে। অতএব, তোমাদের ভাবা উচিত কাকে বন্ধু বানাবে? এ হাদিসটি আবু দাউদ ও তিরমিজি শরীফে বর্ণিত হয়েছে সহীহ সনদে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের অন্য একটি হাদিসে এসেছে, المرء مع من أحب অর্থাৎ ব্যক্তির হিসাব নিকাশ তার সাথেই বা তার মতই হবে যাকে সে ভালবাসে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের আরেকটি হাদিসে এসেছে, أنت مع من أحببت অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তোমার অবস্থা তার মত যাকে তুমি ভালবাস।

কাজেই আমরা যেখানেই থাকি সৎ, সত্যবাদী, আমলদার এবং অবশ্যই পজিটিভ চিন্তা সম্পন্ন মানুষদের সাহচর্যে বেশি থাকা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী।

চতুর্থত: অন্তরে পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় জাগ্রত রাখা। এটা মনে রাখা যে আমি যাকে কোন কারণে কষ্ট দিচ্ছি, এ জীবনে হয়ত আমি আমার ইগোর কারণে তার কাছে ক্ষমা চাইবনা অথবা ক্ষমা চাইতে দেরী করছি। কিন্তু আমি জানিনা, আমি শেষ পর্যন্ত তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারব কিনা। যদি ক্ষমা নে চেয়েই মারা যাই কিংবা সে মারা যায়, তাহলে পরকালে নিশ্চিত আমাকে জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। কি জবাব হবে তখন? কারণ, এতে বান্দাহর হক নষ্ট হয়। আর বান্দাহ বা ব্যক্তি ক্ষমা না করলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। ফলে শাস্তি থেকে রেহাই পাবার সুযোগ কি আছে?

আসুন, ব্যক্তি ও সমাজ থেকে ভালোটা গ্রহণ করি এবং মন্দটা বর্জন করি। একটি সুন্দর সমাজ গঠন, ‘ইন্নামাল মু’মিনুনা ইখওয়া’ এর ভিত্তিতে সুন্দর কমিউনিটি সৃষ্টি, পরস্পর পরস্পরকে পরামর্শ ও সংশোধনীর নীতি অবলম্বন করে সহায়তার মাধ্যমে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলি।

আমাদের অন্তর হলো একটি বাগানের মত আর আমাদের চিন্তা হলো বীজের মত। পজিটিভ চিন্তার মাধ্যমে অন্তর নামক সে বাগানকে চাইলেই ফুলে ফুলে সুশোভিত করে তুলা যায়। আর না হয় সে বাগান ভরে যায় নানা রকম আগাছায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *