ন্যাটো কেন ইউক্রেইনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করল না?

আন্তর্জাতিক সময় সংবাদ
শেয়ার করুন

যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেইনকে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে ন্যাটোর কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছিল দেশটি, কিন্তু জোটটি তা না করায় ব্যাপক চটেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ইউক্রেইনকে বরাবরই সমর্থন দিয়ে আসলেও কেন এ প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করছে নেটো, তা বিশ্লেষণ করে সিএনএন বলেছে,রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানো এড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটটির এই সিদ্ধান্ত।

ন্যাটোতে যোগ দিতে ইউক্রেইনের উদগ্রিব হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সরাসরি সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।

আর এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বড় ধরনের যুদ্ধ ফেরালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রুশ আক্রমণের মুখে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নেটোকে তার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ন্যাটোকে বলেছিলেন ইউক্রেইনকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করতে।

‘নো ফ্লাই জোন’ কী?
‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় যে কোনো উড়োজাহাজ ওড়া বন্ধ করা যায়।

ইউক্রেইনে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার মানে দাঁড়াবে, সেখানে রাশিয়ার উড়োজাহাজ উড়তে পারবে না। অর্থাৎ রাশিয়া বিমান হামলা চালাতে গেলেও তাদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।
👉ডায়নামিক ওয়েবসাইট দিয়েই গড়ে তুলুন আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি। সেবা দেয়ার জন্য সবসময় আপনার পাশে আছে ‘ভার্সডসফট’।
ন্যাটোভুক্ত দেশ নয়, এমন এলাকায় আগেও ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বধীন জোট নেটো। যেমন লিবিয়া ও বসনিয়া।

তবে এই ধরনের পদক্ষেপ বরাবরই বিতর্কের মুখে পড়ে। কেননা, এই পদক্ষেপ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতোই।

ন্যাটো ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে কী হবে?
নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে তা কার্যকর করতে হয় সামরিক শক্তি দিয়ে, সমস্যাটা এখানেই।

এখন যদি রাশিয়া ‘নো ফ্লাই জোনে’ ঢুকে পড়ে, তাহলে ন্যাটোকেও তা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন ক্ষেত্রে বিমান ভূপাতিত করার দিকে যেতে হবে ন্যাটোকে।

আর সেটা যদি ঘটে, তাহলে রাশিয়ার দিক থেকে ন্যাটোর সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দাবি তোলা হবে, তাতে সংঘাত আরও বিস্তৃত হবে।

ন্যাটো কেন করছে না?
যুদ্ধরত রাশিয়া কিংবা ইউক্রেইন দুই দেশের একটিও ন্যাটোর সদস্য নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোকে তার জন্য হুমকি মনে করছেন। শুধু তাই নয়, ইউক্রেইনে আগ্রাসনের সমর্থনে তিনি ন্যাটোর সম্প্রসারণকে ঢাল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।

ফলে এই পরিস্থিতিতে ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার দায় নিতে একেবারেই চাইছে না। যেখানে যুদ্ধ করতে হবে পরমাণু বোমা আছে, এমন আরেকটি দেশের বিরুদ্ধে।
👉আপনার ব্যবসা বা কোম্পানি প্রোফাইল ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনার পাশে সবসময় আছে ‘ভার্সডসফট’।
তাই এখন বাইরে থেকে ইউক্রেইনের প্রতিরোধ যুদ্ধকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার অভিযানের নিন্দা জানাচ্ছে। দৃশ্যত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে ঝুঁকি তৈরি করবে, এমন যুদ্ধের পথ খুলতে চায় না নেটো।

ন্যাটোর অনীহা, ইউক্রেইনের ক্ষোভ
রুশ আগ্রাসনের মধ্যে আকাশপথের হামলা ঠেকাতেই ন্যাটোর শুক্রবারের বৈঠকের পানে চেয়ে ছিল ইউক্রেইন। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি।

ব্রাসেলসে বৈঠক শেষে ৩০ দেশের জোট ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ইউক্রেইনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ আরোপে একমত নয় জোটের সদস্যরা।

“ইউক্রেইনের আকাশে ন্যাটোর প্লেন পরিচালনা না করা এবং দেশটিতে ন্যাটোর সৈন্য না পাঠানোর বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জেলেনস্কি নেটোর শীর্ষ সম্মেলনকে ‘দুর্বল’, ‘বিভ্রান্ত’ সম্মেলন আখ্যায়িত করে বলেন, “ন্যাটো ভেবেচিন্তে ইউক্রেইনের আকাশ বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত দিল।

“আজ থেকে যেসব মানুষ মরবে, তারা আপনাদের (ন্যাটো) কারণে মরবে। মরবে আপনাদের দুর্বলতার কারণে, আপনাদের বিচ্ছিন্নতার কারণে।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সামরিক জোট ন্যাটো। শুরুতে এর সদস্য ছিল ১২টি।

তার প্রতিক্রিয়ায় তখনকার পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৫ সালে গড়ে তোলে ওয়ারশ জোট। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ছিল এর সদস্য।

১৯৯১ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওয়ারশ জোট বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে ন্যাটো টিকে থাকে এবং ধীরে ধীরে আরও বিস্তৃত হয়ে এখন ৩০ দেশের জোটে পরিণত।

এক সময় ওয়ারশতে ছিল, এমন দেশগুলোও এখন ন্যাটোভুক্ত। রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে তাদের এক সময়ের অংশ কিংবা মিত্র বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, আলবেনিয়া, চেক রিপাবলিক এখন ন্যাটো জোটের অংশ। ওই সীমান্তে এখন শুধু বেলারুশই রয়েছে রাশিয়ার পক্ষে।
👉আপনার ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের Dynamic Website নির্মাণের করার জন্য আপনার পাশে সবসময় আছে ‘ভার্সডসফট’।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরাও অবস্থান নিয়ে আছে, যাকে হুমকি হিসেবে দেখছে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে পরিবর্তিত রাশিয়াও।

এখন ইউক্রেইন ন্যাটো জোটে গেলে কৃষ্ণ সাগরে রুশ কর্তৃত্ব স্পষ্টতই হুমকির মুখে পড়বে, আর সেটা নিয়েই বারবার আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন পুতিন।

রাশিয়ায় কেন ন্যাটোকে বড় হুমকি মনে করে, তারও উত্তরে সিএনএন লিখেছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে পড়ার ঘটনাকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মনে করেন সোভিয়েত আমলের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির কর্মকর্তা পুতিন।

পুতিন বরাবরই পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং সামরিক তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি চাইছেন, ১৯৯৭ সালের আগে ন্যাটোর যে সীমানা ছিল সেখানে এ জোটকে ফিরতে হবে।

রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, আলবেনিয়া, চেক রিপাবলিকের মতো ১২টি দেশ ১৯৯৭ সালের পর নেটোতে যোগ দিয়েছে।

ওই সীমান্তে এখন শুধু বেলারুশই রয়েছে রাশিয়ার পক্ষে। এখন ইউক্রেইনেরও ন্যাটোর দিকে পা বাড়ানো পুতিনের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *