নেতানিয়াহুকে কেউ বিশ্বাস করে না : ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বিভক্ত

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধের পরবর্তী পর্ব ঘোষণা করার সাথে সাথে তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সপ্তাহান্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে করা এক পোস্টের পর বিতর্কের মুখে পড়েছেন নেতানিয়াহু।

রোববার মধ্যরাতের ঠিক পরে তার পোস্টে লিখেছিলেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার সতর্কতা সম্পর্কে তাকে কখনই অবহিত করা হয়নি। এমনকি এই হামলার দায় তিনি সরাসরি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা প্রধানের ওপর চাপিয়েছেন।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী যখন গাজার অভ্যন্তরে কঠিন সামরিক অভিযানের মধ্যে ব্যস্ত তখন এমন মন্তব্যের জন্য তোপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এজন্য জন্য নেতানিয়াহুর নিন্দা করেছেন দেশটির রাজনৈতিক নেতারা। ক্ষোভের মুখে পোস্ট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন এবং এমন ভুলের জন্য ক্ষমাও চান তিনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘটনা ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক সংস্থার মধ্যে বড় ধরণের ফাটল তৈরি করেছে। এর ফলে নিজের স্বার্থকে রেখে জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধের মধ্যে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব এবং দেশ পরিচালনার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের সহযোগী ফেলো ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, তিনি শৃঙ্খলার বাইরে ছিলেন তা বলাটা বছরের অবমূল্যায়ন হবে। এটি একটি অত্যন্ত কঠিন সামরিক অভিযান। তাই আপনি একজন দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী চাইবেন। তবে সরকারে এমন কেউ নেই, যিনি নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করেন। এটিই বর্তমান মন্ত্রিসভায় বড় একটি বিষয়।

৭ অক্টোবরের পরপরই নেতানিয়াহু ইসরায়েলি শাসক জোট এবং বিরোধী দল থেকে আসা কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি জরুরি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্তজ। তিনি ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা সেনাবাহিনী এবং শিন বেটকে পূর্ণ সমর্থন দেখানোর সময় নেতানিয়াহুকে তার বিতর্কিত পোস্ট প্রত্যাহার করার জন্য দ্রুত দাবি করেছিলেন।

অন্যান্য নেতাদের কাছ থেকেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। দেশটির বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য অ্যাবিগদর লিবারম্যান বলেন, নেতানিয়াহু জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় আগ্রহী নন। জিম্মিদের নিয়েও তার আগ্রহ নেই। তিনি শুধু রাজনীতি করছেন।

ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে দেশটির সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে নেতানিয়াহুর টুইট ও বিরোধীদের পাল্টা সমালোচনা এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাসহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দেশটির নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত অনেকেই নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন। তবে নিজের ওপর এর দায় নিতে নারাজ নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালক অ্যালন লিয়েন বলেছেন, ‘সংঘাত শেষ হয়ে গেলে ইসরায়েলি স্থাপনা কী হতে চলেছে তা হিমশৈলের একটি অগ্রভাগ মাত্র। তিনি তার যুক্তির জন্য স্থল প্রস্তুত করছেন।’

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ঐক্য অগত্যা নেতানিয়াহুর সরকারকে সমর্থন করার জন্য প্রসারিত নয়। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ইসরায়েলি ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের একটি জরিপ অনুসারে, সরকারের প্রতি আস্থা ২০ বছরের সর্বনিম্নে চলে গেছে। সূত্র : আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *