নির্ভিক সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ খানের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকে আয়োজিত সিলেটের কৃতি সন্তান নির্ভিক সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ খানের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেছেন, এক সময়ের সাড়া জাগানো (অধুনালুপ্ত) সাপ্তাহিক সিলেট সমাচার ও দৈনিক জালালাবাদীর সাহসী সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ খান আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করেছেন। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সংগ্রামদীপ্ত জীবন থেকে তিনি প্রচন্ড দৃঢ়তা ও দায়িত্ববোধ লাভ করেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিলেট ব্যুরো প্রধান। তারপর নিজেই প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক সিলেট সমাচার ও দৈনিক জালালাবাদী। যে কাগজ সিলেটের সাংবাদিকতাকে একেবারে বদলে দিয়েছিল। তাই মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ খান তাঁর কর্মের মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ ।

গতকাল মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) ইস্ট লন্ডনের ভ্যালেন্স রোডের উডহাম কমিউনিটি হলে এই স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সাংবাদিক ও সমাজসেবী কেএম আবুতাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক খান জামাল নুরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে আব্দুল ওয়াহেদ খানের জীবন ও কর্ম নিয়ে মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সময় সম্পাদক কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী। মরহুমের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতি চারন করেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোস্তফা, অধ্যাপক আব্দুল হাই, হাজী ফারুক মিয়া, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন, এম এ মুকিত, সৈয়দ রফিকুল হক প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে কেএম আবুতাহের চৌধুরী বলেন- আব্দুল ওয়াহেদ খান সিলেটে সাংবাদিকতার জগতে বৈচিত্রময় ও সাহসিক ভাবধারার সৃষ্টি করেছিলেন। শিক্ষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে তিনি এক যূগান্তরারী ভূমিকা পালন করেছেন। মুসলিম সাহিত্য সংসদ ও সিলেট প্রেস ক্লাবের উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। কোন ভয়ভীতি ও রক্তচক্ষু তাকে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

মুলপ্রবন্ধে সাঈদ চৌধুরী উল্লেখ করেন, ওয়াহেদ খানের সম্পাদনায় ১৯৭৭ সাল থেকে সাপ্তাহিক সমাচার সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। মানুষের অধিকারের বিষয়ে আব্দুল ওয়াহেদ খানও ছিলেন আপসহীন। ১৯৮৪ সালে দৈনিক জালালাবাদী প্রকাশ করে ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেন তিনি। প্রখর বুদ্ধি ও শ্রমের মধ্য দিয়ে মিডিয়া জগতে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতার জন্য নানা মত ও পথের অনুসারী মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছে। তার খবরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

আব্দুল ওয়াহেদ খান বাংলাদেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনের আমন্ত্রণে দেশ-বিদেশের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে ওয়াহেদ খান ১৯৭৩ সালে ভারত সফর করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে তিনি বৃটেন ও জাপান সহ বিভিন্ন দেশে সফরসঙ্গী হয়েছেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন সহ আরো অনেক দেশে গিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সাথে মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও ভূটান সফর করেছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি মি. চৌধুরীর সফর সঙ্গী ছিলেন।

আব্দুল ওয়াহেদ খান ১৯৭৯ সালে এসোসিয়েট প্রেস অব আমেরিকা আয়োজিত কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় কমনওয়েল্থ জার্নালিষ্ট কনফারেন্সে বাংলাদেশ থেকে এককভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আন্তর্জাতিক সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত রিজিওনাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার জন্যে ১৯৮৬ সালে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুর সফর করেন এবং চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগ ও আন্তর্জার্তিক সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ১৯৯২-৯৩ সালে হংকং, মালয়েশিয়া, বৃটেন,কানাডা, আমেরিকা, ও থাইল্যান্ড সফর করেন।

আব্দুলওয়াহেদ খান স্থানীয় কিংবা জাতীয় পর্যায়ে যাদের সাথে কথা বলতেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইনপুট দিতে পারতেন। বন্ধু ও সহকর্মীদের ভালো পরামর্শ দিতেন। তাঁর এক ধরনের অভিভাবকত্ব সহযোদ্ধাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

সিলেটে ইংলিশ মিডিয়াম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠায় অগ্রগণ্য ছিলেন ওয়াহেদ খান। ১৯৮৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় তিনি সংসদের উন্নয়ন এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক গতি সঞ্চার করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন পরিচালনার সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সমাজ উন্নয়নমূলক অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি কারো অন্যায় আবদার বা অপকর্ম বরদাস্ত করতেন না। প্রশাসন বা রাজনৈতিক মহলের হুমকি ধমকি তোড়াই কেয়ার করতেন।

স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। তারপর আলোচনা এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *