নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে : জাতিসংঘ মহাসচিব

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন নিরাপত্তা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সদস্যদের বিভক্তির কারণে এই পরিষদ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন তিনি।

কাতারে দোহা ফোরামে অংশ নিয়ে রোববার এ মন্তব্য করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ সদস্যই সমর্থন জানায়। তবে স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

দোহায় দেওয়া ভাষণে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ‘ভূকৌশলগত বিভক্তির কারণে পরিষদ পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ হয়ে পড়েছে। এ কারণে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাত নিয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে জাতিসংঘের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করে গুতেরেস বলেন, গাজা পরিস্থিতির এত দ্রুত অবনতি হচ্ছে যে তা ‘বিপর্যয়ের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গাজা সংঘাত এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলবে।

গাজায় ভয়াবহ অবস্থা চলছে। বাতাসে বারুদের গন্ধ। সাধারণ মানুষের পেটে খাবার নেই। জনসংখ্যার অর্ধেকই অনাহারে আছেন। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭ হাজার ৭০০ মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে সাত হাজার শিশু রয়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপ-পরিচালক কার্ল স্কাউ সতর্কতা জানিয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় যে পরিমাণ সরবরাহ প্রয়োজন তার সামান্য ভগ্নাংশ প্রবেশ করতে পারছে। সেখানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই প্রতিদিন খাবার পান না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে সরবরাহ পাঠানো অসম্ভব।

গাজা ফিলিস্তিনের অংশ হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল। তারা গাজার পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার ওপর ভয়াবহ বোমা হামলায় গাজার বহুতল ভবনগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এমন সময় গাজা পরিদর্শন করেন কার্ল স্কাউ ও তার দল।  গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, নৈরাজ্য এবং মানুষের হাহাকার প্রত্যক্ষ করেছেন তারা।

কার্ল স্কাউ বলেছেন,  খাদ্য বিতরণের পয়েন্টগুলোতে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ।  আশ্রয়শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে অবস্থান করছে মানুষ। বাথরুমগুলো উপচে পড়ছে। আন্তর্জাতিক চাপে এবং সাত দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে গত মাসে এসব অসহায় মানুষের জন্য কিছু ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। কিন্তু বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, এসব মানুষের চাহিদা কিছুটা মেটাতে হলে দ্বিতীয় একটি ক্রসিং পয়েন্ট খুলে দেয়া উচিত।

বর্তমানে দু’দিক থেকে গাজার দক্ষিণে অবস্থিত খান ইউনুস শহরের মানুষকে ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। সেখানকার মানুষের অবস্থা একেবারে করুণ বলছেন কার্ল স্কাউ। শহরটিতে একমাত্র সচল নাসের হাসপাতাল। সেখানকার প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটের প্রধান ড. আহমেদ মোগরাবি বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নাসের হাসপাতালের প্রধান বলেছেন, হাসপাতালটিতে যে পরিমাণ মৃত ও আহতদের নেয়া হচ্ছে তার ব্যবস্থাপনা করতে তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *