নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে দুর্ভোগ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

প্রকৌশলী মোঃ মনির হোসেন

নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই চাহিদা খুবই সীমিত| তারা চায় তিন বেলা পেট ভরে খাবার। কিন্তু বর্তমানে মানুষের নূন্যতম চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় ক্রয় ক্ষমতা নেই বললেই চলে, তার অন্যতম প্রধান কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি। দ্রব্যমূল্যের এই অসহনীয় বৃদ্ধি সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করলেও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছে সীমিত আয়ের মানুষ।

কয়েক বছর ধরেই জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে হিমশিম খাওয়া মানুষ এখন দিশেহারা। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে চরম হতাশ এবং জনমনে চাপা ক্ষোভ বিরাজমান। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দাবী হলো, তারা চায় সরকার কঠোর অবস্থান থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

গত পাঁচ আগস্ট দানব আওয়ামী সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু তাতে ফলাফল অনেক কম। বাজারে স্বস্তি ফেরেনি; বরং বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়েছে।

বাস্তবে আওয়ামীপন্থী ও সুবিধাভোগী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তেল, ডিম, পেঁয়াজের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটা কোম্পানি এগুলো নিয়ন্ত্রণ ও অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে৷ এই জায়গাটায় সরকার কঠোর ভূমিকা নেয়নি।

অক্টোবরে গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ সময় দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশ হয়েছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশে, যা জুলাইয়ে ছিল ১০.৪০ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছর অক্টোবরে যে খাদ্যপণ্যের মূল্য ছিল ১০০ টাকা, এবার অক্টোবরে তা ভোক্তাদের ক্রয় করতে হয়েছে ১১২ টাকা ৬৬ পয়সায়। এই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব রেখেছে চাল, সবজি, ডিম,আলু, মুরগি ও পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এসব হিসাব-নিকাশ বলছে, নতুন সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অপারগ।

বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির ক্ষেত্রে সরকারের অমনোযোগিতা ও ব্যর্থতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটি বিরাট কারণ। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তৎপরতার ফলে বাজারে সাময়িকভাবে দ্রব্যমূল্য হয়তো কিছুটা কমে। কিন্তু অসাধু চক্র আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। হয়তো কিছু পরিমাণ টাকা জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। যে পরিমাণ জরিমানা করা হয়, সেটা দেখা যায় তাদের এক দিনের মুনাফার টাকা। ফলে ওই জরিমানা অসাধু ব্যবসায়ীদের গায়ে লাগে না।

এক্ষেত্রে সরকার নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, আমদানী-রপ্তানি সহজীকরণ, বেজাল বিরোধী অভিযান নিয়মিতকরণ, ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারকে জোর দিতে হবে। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সরকারের কঠোর পদক্ষেপ।দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে আমদানি নির্ভর দ্রব্যের উপর শুল্ক প্রত্যাহার ও রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত দ্রব্যের জন্য বিকল্প আমদানি উৎস নিশ্চিত করতে। যেসব ব্যবসায়ী অসৎ ও অনৈতিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার মাধ্যমে শুধু তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় নয়, অনিয়ম পেলে প্রয়োজনে জেল দেওয়া এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও লাইসেন্স বাতিল করা প্রয়োজন । এ কাজগুলো করা গেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগামহীন ঘোড়া দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *