নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদে লড়ছেন শাহ নাওয়াজ

আমেরিকা সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্টের মূলধারার রাজনীতিতে ক্রমশই সম্পৃক্ততা বাড়ছে বাংলাদেশী আমেরিকানদের। বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় সরকার ও দলীয় রাজনীতির অভ্যন্তরে নেতৃত্বের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন অনেকে। এতে সফলকামও হয়েছেন কেউ কেউ। এরই ধারাবাহিকতায় নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলী ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার, স্টেট কমিটি মেম্বার ও জুডিশিয়াল ডেলিগেট পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আমেরিকান। এদের মধ্যে অন্যতম ডিস্ট্রিক্ট লিডার প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, নিবেদিত প্রাণ ডেমোক্র্যাট শাহ নাওয়াজ। ১৮ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত অনু্ষ্ঠিতব্য (অগ্রিম ভোট) ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারীতে তিনি নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-২৪ পার্ট-এ থেকে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে শাহ নাওয়াজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিরামহীন প্রচারণা। তার পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এবং ডিজিটাল প্রচারণা নজর কেড়েছে নিউইয়র্ক সিটিবাসীর। বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা এই পদে এমন প্রচারণা আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেননি। সেদিক থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেন শাহ নাওয়াজ। বাংলাদেশী কমিউনিটির বাইরের ভোটাররাও ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন শাহ নাওয়াজের প্রতি। লিডার হিসেবে নিজ কমিউনিটির বাইরেও নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় সাউথ এশিয়ানদের মধ্যে তার একটা পরিচিতি গড়ে উঠেছে কর্ম দক্ষতার কারণে।

ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি শাহ নাওয়াজ কমিউনিটির নানাবিধ সেচ্ছাসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ কাউন্টি কুইন্সে বহুজাতিক মানুষের সমাজ-সংস্কৃতির সাথে ব্যাপক পরিচিতির কারণে ডেমোক্র্যাট দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

বিশেষ করে স্থানীয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে ইতোমধ্যেই অবস্থান করে নিয়েছেন শাহ নাওয়াজ। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথেও গড়ে উঠেছে সখ্যতা। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে কখনোই কার্পণ্য করেন না তিনি। ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তারই সাহসী বর্হিপ্রকাশ।

২৮ জুনের এ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরলসভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহ নাওয়াজ। প্রতিটি ভোটারের দুয়ারে কড়া নাড়ছেন তার নির্বাচনী প্রচারণা টিমের সদস্যরা। অনুরোধ জানাচ্ছেন ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার। অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট ২৪ পার্ট এ জ্যামাইকার ১৩৮ স্ট্রিট থেকে কুইন্স ভিলেজের ২৩৪ স্ট্রিট পর্যন্ত হিলসাইড এভিনিউর উত্তর পার্শ্বের বিশেষ করে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল ও ইউনিয়ন ট্রানপাইক পর্যন্ত বিস্তৃত।

ডিস্টিক্ট-২৪ পার্ট-এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বি ডেভিড ওয়েপ্রিণ। যিনি একাধারে বর্তমান অ্যাসেম্বলিম্যান ও ডিস্ট্রিক্ট লিডার। উভয় পদেই তিনি পুনরায় লড়ছেন ২৮ জুন। বংশানুক্রমে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রার্থী ডেভিড ওয়েপ্রিন। তবে এই আসন যে এলাকা জুড়ে সেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ভোটারের বসবাস। আর এসব ভোটাররাই সাহসী করে তুলেছেন শাহ নাওয়াজকে। তবে সাধারণ ভোটারদের অনেকেই জানেন না ডেমোক্রেটি ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদটি কি এবং এর কাজই বা কি?

ডিস্ট্রিক্ট লিডার ডেমোক্রেটিক পার্টির একান্তই রাজনৈতিক একটি পদ। এ পদে পৃথক কোন অফিস নেই। নেই বেতন ভাতাও। যার কর্মকান্ড স্বেচ্ছাসেবা মুলক। ডিস্ট্রিক্ট লিডারগণ দলের অভ্যন্তরীন নীতি নির্ধারণের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিচারক ও ভোট কেন্দ্রে কর্মকর্তা নিয়োগ এবং প্রতিটি বরোতে দলীয় কাউন্টি কমিটির সদস্য কারা হবেন সাধারণত তা নির্ধারণ করে থাকেন। প্রতিটি অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্টে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা ডিষ্ট্রিক্ট লিডার নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে। তবে কোন কোন বড় ডিস্ট্রিক্টে পৃথক দু’টো অংশে মোট ৪জন নির্বাচিত হন।ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এমন একটি আসন। নিউইয়র্কে অতিরিক্ত স্তরে নির্বাচিত এসব জন প্রতিনিধিগণ কাউন্টি ভিত্তিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। এসব কারণেই শাহ নাওয়াজের প্রার্থীতা বিশেষ সাড়া জাগিয়েছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। দীর্ঘদিনের লব্ধ সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা এবং ভোটারদের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী করে তুলেছে তাকে। ডিস্ট্রিক্ট-২৪ পার্ট-এ বহুজাতিক কমিউনিটিতে জন প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। পরিবর্তন আনতে চান সময়ের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী অধ্যুষিত এই আসনে রাজনৈতিকভাবে সকলের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা তার নির্বাচনী এজেন্ডার অন্যতম ইস্যু। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ সর্বশ্রেনী পেশার মানুষের জন্য তিনি দলের আভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণে কাজ করে যাবেন বলে উল্লেখ করছেন প্রচারণায়। কমিউনিটির বয়ষ্ক ও তরুণদের জন্য রয়েছে তার বিশেষ পরিকল্পনা। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে সমর্থন জানিয়েছে তাকে। ডিস্ট্রিক্ট লিডার পদের মেয়াদকাল দুই বছর। এক্ষেত্রে যে কেউ বার বার নির্বাচিত হতে পারেন। এদের জন্য কোন বেতন ভাতা নেই।

শাহ নাওয়াজ জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের সাবেক প্রসিডেন্ট। আমেরিকা বাংলাদেশ বিজনেস এ্যালায়েন্সের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস’র চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। লায়ন্স ক্লাব-‘২০ আর ২’ এর দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। কুইন্স বরো কমিউনিটি বোর্ড-১২ এর সাবেক সদস্য ও সাউথ এশিয়ান ভোটারস এসোসিয়েশনেরও অন্যতম কর্মকর্তা। ফোবানার-২০১৯ এর সাবেক চেয়ারম্যান শাহ নাওয়াজ জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির অন্যতম উপদেষ্টা। শাহ নাওয়াজ’র এন ওয়াই ইন্সুরেন্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এন ওয়াই লিমু কার সার্ভিসের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। উবারের মতোই এর কার্যক্রম। এনওয়াই লিমুজিন বেইজ’র প্রায় ৯ হাজার ট্যাক্সি সার্বক্ষণিক গ্রাহক সেবায় নিয়োজিত।

তার প্রতিষ্ঠিত এস এস আর রিয়েল এস্টেট কোম্পানীও অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসায় করে যাচ্ছে। তার পরিচালিত গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার কমিউনিটির বয়ষ্কদেও স্বাস্থ্যসেবায় নিবেদিত। উল্লেখিত সবগুলো প্রতিষ্ঠানই দেখাশুনা ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছেন শাহ নাওয়াজ। বিভিন্ন সংস্থা থেকে এজন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কারও লাভ করেছেন তিনি। ট্যাক্সি-লিমুজিন কোম্পানী, টিলসি তাকে ‘রাইটিং এওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। “বেস্ট ব্রুকার’ এওয়ার্ড পেয়েছেন হার্ডফোড ইন্সুরেন্স কোম্পানী থেকে। ব্যবসায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্তি রয়েছে শাহ নাওয়াজের।

নিউইয়র্কের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক শাহ নাওয়াজের বাড়ী বাংলাদেশের খুলনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি শাস্ত্রে মাস্টার্স এবং আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন শাহনাওয়াজ। বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমাও করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী রানু নাওয়াজ নিউইয়র্কের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী। প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। ছোটবেলা থেকেই সমাজসেবার প্রতি তার অন্য রকম ঝোক ছিলো। সময়-সুযোগ পেলেই স্কুল জীবন থেকে মানুষের সেবার নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করেছেন।

আগামী ২৮ জুনই এই পদে চূড়ান্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অগ্রিম ভোট গ্রহণ চলবে ১৮ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত। শাহ নাওয়াজ মনে করেন শক্তিশালী কমিউনিটি এবং নিজেদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য স্থানীয় সরকার এবং রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে নিজস্ব জন প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। তিনি ভোট ও দোয়া প্রর্থনা করেন।

আরও পড়ুন
কোথাও আগুন লাগলে সতর্কতার জন্য যা করবেন, যা করবেন না
আগুনে পুড়লে মৃত ব্যক্তির মর্যাদা ও আগুন লাগলে যে দোয়া পড়বেন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *